বন দফতরের কর্মীরা ছাড়া সেখানে কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয় না। —প্রতীকী চিত্র।
বক্সার জঙ্গলের বুক চিরে পাখিদের কিচিরমিচির শুনতে-শুনতে তিরঙ্গা পাহাড় দেখতে যাওয়া এক সময়ে ডুয়ার্সের পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ ছিল। সে প্রায় ১৭ বছর আগের কথা। এখন বক্সার জঙ্গলের ভিতরে কুমারগ্রাম লাগোয়া ভুটানঘাটের সেই তিন রঙের পাহাড় দেখতে যাওয়া তো দূরের কথা, জঙ্গলে প্রবেশেই রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। বন দফতরের তরফে বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ১৭ বছর আগে ওই এলাকাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়। ফলে আলিপুরদুয়ার জেলার পাশাপাশি ডুয়ার্সের পর্যটন মার খাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের (পূর্ব) উপক্ষেত্র অধিকর্তা দেবাশিস শর্মা বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ওই এলাকাকে সংরক্ষিত হিসেবে রাখা হয়েছে। বন দফতরের কর্মীরা ছাড়া সেখানে কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয় না। আমরা সরকারি নির্দেশ মেনে কাজ করি।’’ যদিও স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের একাংশ তা বলছেন না। তাঁদের অভিযোগ, প্রভাবশালীরা বিনা বাধায় ঘুরে আসতে পারেন ভুটানঘাট।
সূত্রের খবর, ২০০৭ সাল নাগাদ কেএলও জঙ্গিদের ঘাঁটি হয়ে উঠেছিল ভারত-ভুটান সীমান্তের ভুটানঘাটের কালাপাহাড় এবং সংলগ্ন এলাকা। তৎকালীন বাম সরকারের সময়ে সেখানে বসে এসএসবি ক্যাম্প এবং ওই এলাকার প্রায় ৫০০ হেক্টর বনাঞ্চলকে ঘোষণা করা হয় সংরক্ষিত এলাকা বলে। ভুটানঘাটের প্রায় ১৬ হেক্টর এলাকাও সংরক্ষণের আওতায় চলে আসে। যদিও বাম সরকারের পতনের পর, কেএলও আন্দোলন বন্ধ হওয়ার পরেও ওই এলাকাকে সংরক্ষণের আওতা থেকে সরাতে পারেনি বন দফতর।
ওই এলাকায় একাধিক বন্য প্রাণীর পায়ের ছাপ দেখে সেখানে ঢোকার মুখে বসানো হয় গেট। মূলত ‘কোর এরিয়া’ এবং ‘বাফার জ়োন’-এর আওতাভুক্ত হয়ে পড়ায় ওই এলাকায় নজরদারি শুরু করে বন দফতর। পর্যটন ব্যবসায়ীদের দাবি, বন মন্ত্রী-সহ শীর্ষ বন কর্তারা এ কয়েক বছরে একাধিক বার ভুটানঘাট খুলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। সেখানে রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের দিয়ে তৈরি করা হয় ৮টি হোমস্টে। নিজস্ব মালিকানায় একটি বেসরকারি রিসর্ট। কিন্তু দীর্ঘ ১৭ বছর ‘প্রবেশ নিষেধ’ রয়েছে ভুটানঘাটে।
ভুটানঘাট যেতে হলে তুরতুরিখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশের রাস্তা দিয়ে কিছুটা এগিয়ে যুব আবাস পাওয়ার পরেই মেলে জঙ্গল। ওই জঙ্গল দিয়ে গাড়িতে ১৫ মিনিট যাওয়ার পরেই দেখা মেলে ভুটানঘাটে থাকা তিরঙ্গা পাহাড়ের। ওই পথে দফায়-দফায় রয়েছে পাহারা। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, ভুটানঘাটে পর্যটকেরা প্রবেশ করতে পারলে জেলার পর্যটন ব্যবসার প্রসার ঘটবে। এলাকার কর্মসংস্থানও হবে। এ নিয়ে একাধিক বার তারা আবেদনও জানায়। এ প্রসঙ্গে কুমারগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জুলি লামা বলেন, ‘‘২০২২ সালে ভুটানঘাটে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় কোনও বন্যপ্রাণীর আক্রমণ বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমরা চাই পর্যটনের বিকাশের লক্ষ্যে এবং এলাকার বাসিন্দাদের সুবিধার্থে ভুটানঘাট খুলে দেওয়া হোক।’’
ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি পার্থসারথি রায় বলেন, ‘‘আমরা পর্যটনের বিকাশের লক্ষ্যে ভুটানঘাট খুলে দেওয়ার আবেদন করেছি। কিন্তু তাতে লাভ কিছুই হয়নি। আমরা চাই দ্রুত ভুটানঘাট খুলে দেওয়া হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy