Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
পানিট্যাঙ্কি সীমান্তে পরিদর্শন

পাচার ঠেকাতে ধরতে হবে চক্রের চাঁইদের, বার্তা ডিজির

পাচারকারীদের শুধু আটক করে পুলিশের হাতে তুলেই হবে না। তার পিছনের ষড়যন্ত্রীদের ধরতে এ বার থেকে প্রতিটি অভিযোগের বিশদে তদন্ত করতে হবে। অফিসারদের এমনই নির্দেশ দিলেন এসএসবির ডিজি অর্চনা রামসুন্দরম। বৃহস্পতিবার তিনি নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কি চেকপোস্ট পরিদর্শন করেছেন।

পানিট্যাঙ্কি সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে এসএসবির ডিজি অর্চনা রামসুন্দরম। —নিজস্ব চিত্র।

পানিট্যাঙ্কি সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে এসএসবির ডিজি অর্চনা রামসুন্দরম। —নিজস্ব চিত্র।

অনির্বাণ রায়
পানিট্যাঙ্কি (খড়িবাড়ি) শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬ ০২:৪১
Share: Save:

পাচারকারীদের শুধু আটক করে পুলিশের হাতে তুলেই হবে না। তার পিছনের ষড়যন্ত্রীদের ধরতে এ বার থেকে প্রতিটি অভিযোগের বিশদে তদন্ত করতে হবে। অফিসারদের এমনই নির্দেশ দিলেন এসএসবির ডিজি অর্চনা রামসুন্দরম। বৃহস্পতিবার তিনি নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কি চেকপোস্ট পরিদর্শন করেছেন।

এ দিন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, নেপালের সমাজকর্মী, বণিকসভার প্রতিনিধিদের থেকে নানা সমস্যার কথাও শুনেছেন ডিজি। সকলের মুখেই ঘুরে ফিরে এসেছে তরুণী এবং যুবতীদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে নেপাল থেকে সীমান্ত পার করিয়ে পাচার করার অভিযোগ। এই সমস্যা নিয়ে ডিজি আলোচনা করেন উত্তরবঙ্গের এসএসবির অফিসারদের সঙ্গেও। এর পরেই বাহিনীর অফিসার ও জওয়ানদের ডিজি নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘‘সীমান্তে পাচারকারী হিসেবে যারা ধরা পড়ছে, তারা শুধুই এজেন্ট। ওদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিলেই হবে না। প্রতিটি অভিযোগের তদন্ত করতে হবে। তাহলেই আসল পাচারকারীদের সম্পর্কে তথ্য হাতে আসবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা যাবে।’’

দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাচারের অভিযোগের তদন্তের এক্তিয়ার পুলিশেরই। সেক্ষেত্রে এসএসবিও পৃথক তদন্ত করবে কী ভাবে? একই অভিযোগের দু’রকম তদন্ত হলে বিচারপ্রক্রিয়াও দেরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও, এসএসবি সূত্রে জানানো হয়েছে, ডিজি যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তা বিভাগীয় পর্যায়ে। পুলিশই মূল তদন্ত করবে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় পাচারকারী চক্রের একাধিক পান্ডা রয়েছে তারা নেপাল এবং উত্তর ভারতের কিছু রাজ্যে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে। এখানেই এসএসবি সক্রিয় হবে। কোনও রাজ্যের পুলিশের ক্ষেত্রে ভিন্ রাজ্যে অথবা সীমান্ত পেরিয়ে পদক্ষেপ করার প্রক্রিয়াগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু এসএসবি-র বিস্তৃতি পুরো নেপাল সীমান্ত জুড়ে, সারা দেশেই এসএসবির ব্যাটেলিয়ান রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এসএসবি-র বিভাগীয় পর্যায়ে তথ্য চালাচালি করে সহজেই মূল পাচারকারীদের পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারবে। বৈঠকের পরে অর্চনা বলেন, ‘‘আজকের আধুনিক প্রযুক্তির যুগে যে কোনও তথ্য সহজেই দেশ, এমনকী বিদেশের নানা প্রান্তে চালাচালি সম্ভব। সেই সুবিধেই আমরা নিতে চাইছি। তার জন্য পাচারকারীদের সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য চাই। সে কারণেই এই তদন্তের নির্দেশ।’’

পানিট্যাঙ্কি সীমান্ত বিভিন্ন পণ্য, মাদক পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে গত কয়েকবছর ধরে নেপাল সীমান্ত দিয়ে নারী পাচারের অভিযোগ বেড়েই চলেছে বলে বারবারই উদ্বেগ জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নেপাল-ভারত দু’দেশেরই পাচার রুখতে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি সীমান্ত লাগোয়া নেপালের কাঁকরভিটা এবং এ পারের পানিট্যাঙ্কিতে শাখা অফিস খুলে নজরদারি করছে। এসএসবির তরফেও পাচারের অভিযুক্তদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। যদিও এ দিন ডিজি জানিয়েছেন, যারাই সীমান্ত এলাকায় ধরা পড়েছে তারা সকলেই এজেন্টদের আড়কাঠি। তাদের গ্রেফতার করলে সাময়িক পাচার আটকানো যাবে কিন্ত চক্রের হদিশ পাওয়া যাবে না। পাচার রুখতে মূল চক্র নির্মূল করা ছাড়া কোনও উপায় নেই বলে মত ডিজি-র।

ডিজি-র নির্দেশে আশার আলো দেখছেন নেপালের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি। একটি সংগঠনের কাঁকরভিটার দায়িত্বপ্রাপ্ত গোবিন্দ ঘিমিরে বলেন, ‘‘পাচারের মূল চক্রী যারা, তাদের হাজতে পুরতে না পারলে এই প্রবণতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। এসএসবি-র মতো বাহিনী যদি সক্রিয় হয় তা হলে খুবই আশার কথা।’’ আরেকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সর্বভারতীয় কো অর্ডিনেটর রবিকান্ত বলেন, ‘‘চোরাচালান-সহ অন্য অপরাধের থেকেও নেপাল সীমান্তে এসে এসএসবি-র সর্বোচ্চ কর্তা নারী পাচার রুখতে গুরুত্ব দিলেন এটা খুবই আশার কথা।’’

পানিট্যাঙ্কিতে এ দিন উপস্থিত ছিলেন এসএসবির উত্তরবঙ্গের আইজি কুলদীপ সিংহও। নারী পাচার রুখতে পানিট্যাঙ্কি সীমান্তে আরও বেশি মহিলা অফিসার মোতায়েন, এসএসবির অফিসার জওয়ানদের ১২ দিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও ডিজি জানিয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

DG Smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE