নিজস্ব চিত্র
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের দলের নীতি ‘ভুল’ ছিল। ‘সন্ত্রাসের বাতাবরণে’ পঞ্চায়েত ভোটের ‘খেসারত’ দিতে হয়েছে গত লোকসভা নির্বাচনে। ‘অশান্তির আবহে’ পঞ্চায়েত নির্বাচন দলের বহু কর্মীও মেনে নিতে পারেননি। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ‘গণতান্ত্রিক’ পদ্ধতিতে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ। দলীয় মঞ্চে মন্ত্রী ‘ভুল স্বীকার’ করার পরেই ঠিক উল্টো সুর শোনা গেল রাজ্যের প্রাক্তন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা কোচবিহারের অধুনা প্রাক্তন জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের গলায়। তাঁর বক্তব্য, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই হয়েছিল। লোকসভা ভোটে তৃণমূলের খারাপ ফলের জন্য দায়ী দলের নেতাদের অন্তর্ঘাত। জেলায় যাঁরা দলের পিছনে ছুরি মেরেছিলেন, তাঁরা বৃহস্পতিবারের ওই বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চেই উপস্থিত রয়েছেন বলে দাবি করেন রবীন্দ্রনাথ। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে কোচবিহারে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব বার বার প্রকাশ্যে আসছিল। সম্প্রতি ওই জেলায় জেলা সভাপতি পদেও রদবদল করেছেন দলীয় নেতৃত্ব। তার পরেও রাশ টানা যায়নি দলীয় কোন্দলে। এ নিয়ে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে বিরোধী শিবির।
সাধারণ মানুষকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে রাজ্য জুড়ে পাঁচশোরও বেশি জনসভা করার পরিকল্পনা নিয়েছে তৃণমূল। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে বিজয়া সম্মিলনী। বৃহস্পতিবার কোচবিহারেও ওই জনসভার আয়োজন করা হয়। সেই সভামঞ্চ থেকেই উদয়ন বলেন, ‘‘২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন যে ভাবে হয়েছে, সেই পদ্ধতি ভুল ছিল। যার জন্য ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার জেলায় তৃণমূলের পরাজয় ঘটেছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আমাদের পদক্ষেপে কিছুটা ভুল হয়েছিল। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন আমরা যে ভাবে জিতেছিলাম, তা আমাদের কর্মীরাও মেনে নিতে পারেনি। সেই কারণে লোকসভা নির্বাচনে আমাদের পরাজয় হয়েছে।’’
গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় তৃণমূলের খারাপ ফলের জন্য দলের সাধারণ কর্মীদের নয়, দলের নেতাদের কাঠগড়ায় তোলেন উদয়ন। তিনি বলেন, ‘‘পরাজয়ের জন্য দলের সাধারণ কর্মীরা দায়ী নন। দায়ী তৃণমূল নেতারা। যে শিক্ষা পাওনা ছিল, সেই শিক্ষা আমরা পেয়েছি। সেই শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে সঠিক পথে যাওয়ার চেষ্টা করব। অতীতের মতো করে জেতা নয়। নতুন করে জিততে হবে আমাদের।’’
রাজ্যের মন্ত্রী সুষ্ঠু ভাবে পঞ্চায়েত ভোটের পক্ষে সওয়াল করার পরেই রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘‘২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই হয়েছিল। ১২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১২৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছিল তৃণমূল। লোকসভা নির্বাচনে পরাজয় দলের কিছু নেতা অন্তর্ঘাতের কারণে হয়েছিল। কয়েক জন পিছন থেকে তৃণমূলকে ছুরি মেরেছিলেন। তাই কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে দলকে হারতে হয়েছিল। যাঁরা পিছন থেকে ছুরি মেরেছিলেন, তারা এই মঞ্চেই উপস্থিত রয়েছেন।’’ ভাষণ দিতে গিয়ে কারও নাম অবশ্য করেননি রবীন্দ্রনাথ। তবে তাঁর মন্তব্যে দলীয় কর্মীরা যে অস্বস্তিতে পড়েছেন, তা বলাইবাহুল্য।
ঘটনাচক্রে, ওই সময় মঞ্চে হাজির ছিলেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকও। প্রাক্তন মন্ত্রীর ওই মন্তব্যে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাঁকেও। তা কার্যত স্বীকার করেই মলয় বলেন, ‘‘বিগত দিনের পরাজয়ের জন্য একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। আগামী দিনে সকলকে একসঙ্গে চলতে হবে। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে সব নেতাকে সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছতে হবে।
জেলায় রাজ্যের দুই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে আবার দলীয় বিভাজন প্রকাশ্যে আসায় তা নিয়ে কটাক্ষ করেন বিজেপির জেলা সভাপতি সুকুমার রায়। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে কোনও দিন মিল ছিল না। কোনও দিন মিল হবেও না। তাঁরা কে কী বক্তব্য রাখছেন, তাঁরা নিজেরাও জানেন না। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভুলত্রুটির কথা স্বীকার করে তাঁরা যদি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই নির্বাচন চায়, তা হলে বলতে হয়, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর কোচবিহার জেলায় আরও বেশ কয়েকটি নির্বাচন হয়েছে। ওই নির্বাচনে কেন শুধরে নিলেন না তাঁরা? ওঁদের কথার সঙ্গে কাজের মিল নেই। যে করে হোক পঞ্চায়েত তাঁদের দখলে রাখতে হবে। আর তার জন্য তৃণমূল সন্ত্রাস চালাবেই। তবে মানুষ তাঁদের থেকে সরে গিয়েছে। তাই এ সব কথার কোনও মানে নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy