গণনাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে মোহন বসু।—নিজস্ব চিত্র।
প্রার্থী বাছাইয়ের গোড়ায় দলের অন্দরে প্রবল আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল। বিক্ষুব্ধ সমর্থকদের হামলার মুখেও পড়তে হয়েছিল তাঁদের। যদিও, সেই ‘সৌরভ-মোহন’ জুটিতেই জলপাইগুড়ি পুরসভার ‘দখল’ নিল তৃণমূল।
২০১০ সালে রাজ্য জুড়ে শুরু হওয়া পরিবর্তনের হাওয়ায়, একলা লড়ে পুরবোর্ড দখল করেছিল কংগ্রেস। তৃণমূল পেয়েছিল একটি মাত্র আসন। লোকসভা ভোটের পরে তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় সৌরভ চক্রবর্তীকে। লোকসভা ভোটের পরেই পুরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান মোহন বসু নিজের ‘টিম’ নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন। পুরবোর্ড যায় তৃণমূলের দখলে। এ বারের পুরভোট পরিচালনার ভার সৌরভবাবু ও মোহনবাবুর উপরেই ছেড়ে দেয় দলের রাজ্য নেতৃত্ব।
তৃণমূলের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ প্রকাশ্যে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন। সৌরভবাবু থেকে শুরু করে জলপাইগুড়ির দলীয় সাংসদ বিজয় চন্দ্র বর্মনকে ‘হেনস্থা’র অভিযোগ উঠেছিল কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। যদিও, জলপাইগুড়ি পুরসভা দখল করে শেষ হাসি হাসলেন ‘সৌরভ-মোহন’ জুটিই।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌরভবাবু বলেন, ‘‘পুরভোটে সংগঠনের ভূমিকা অনেক। না হলে ভাল ফল হয় না। শুধু হাওয়ায় ভোট হলে ২০১০ সালে জলপাইগুড়ি পুরসভায় ভাল ফল হতো তৃণমূলের। এবার অনেক ভাল হলো। কারণ, বারবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জলপাইগুড়িতে এসেছেন। সংগঠন জোরদার হয়েছে। সে জন্য আমরা বোর্ড দখল করতে পেরেছি।’’
বিদায়ী চেয়ারম্যান মোহনবাবুদের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র অভিযোগ তুলে পুরভোটের প্রচার চালিয়েছে কংগ্রেস। শুধু কংগ্রেস নয় বামেরাও একই অভিযোগ তুলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার চালায়। সে কারণেই এবারের পুরনির্বাচন মোহনবাবুদের সাংগঠনিক শক্তির প্রমাণ দেওয়ার পরীক্ষায় পরিণত হয়। ফল প্রকাশের পরে মোহনবাবু বলেন, ‘‘শহরবাসী বুঝেছেন যে উন্নয়নের স্বার্থেই আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী জলপাইগুড়িবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন শহরের উন্নয়নে পুরসভাকে যাবতীয় সাহায্য করবে রাজ্য সরকার ।’’
শহরের ২৫ টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে গেছে ১৫টি আসন। কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট পেয়েছে পাঁচটি করে আসন। গত পুরভোটের তুলনায় এবার তৃণমূল ১৩ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছে। ঘাসফুল শিবিরের বাড়তি ভোট যে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট শিবির থেকে ভাঙিয়ে নেওয়া সেই বিষয়ে রাজনৈতিক মহল একমত। গত পুরভোটে কংগ্রেস পেয়েছিল ২৪ হাজার ৩২৩ ভোট। এবার সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৫ ভোটে। একই ভাবে বামফ্রন্টের ভোটও কমেছে। গত পুরভোটে বামফ্রন্টের প্রাপ্ত ভোট ছিল ২১ হাজার ২৭৩। এবার সেটা কমে হয়েছে ১৮ হাজার ৭৮১।
পুরভোটে জয়ের পরে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের উল্লাস জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল।
বামফ্রন্ট অবশ্য তৃণমূলের প্রতি ‘মোহ’ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছে। জেলা বামফ্রন্ট আহ্বায়ক সলিল আচার্য বলেন, “শাসক দলের প্রতিশ্রুতি এবং আশ্বাসের মোহ এখনও কাটেনি। ওঁদের প্রচারে প্রভাবিত হয়ে ভোটদাতাদের একটি অংশ আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়েছে।” যদিও জেলা কংগ্রেস সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদার দাবি করেন, গত লোকসভায় প্রাপ্ত ভোটের তুলনায় এবার পুরভোটে তাঁদের ভোট বেড়েছে। নির্মলবাবু বলেন, ‘‘ফলাফল বিশ্লেষণ করব। তবে তৃণমূল ভোটে প্রচুর টাকা উড়িয়েছে।’’
বিরোধীদের দাবি, শাসক দলের গোঁজ হিসেবে পরিচিত হলেও নির্দল প্রার্থীরা ১, ১৬, ১৯ এবং ২০ নম্বর আসনে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের ভোট কেটে তৃণমূল প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করেছে। ১ নম্বর আসনে নির্দল প্রার্থী পেয়েছেন ৮৬৩ ভোট। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী ১ হাজার ১০৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। বামফ্রন্ট পেয়েছে ৬৮২ ভোট এবং কংগ্রেস ৩৫৮ ভোট। গত পুরভোটে ওই আসনে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ হাজার ২৬৬, বামফ্রন্টের ৮৭২ এবং তৃণমূলের ৮০৬ ভোট। এবার তৃণমূল এবং গোঁজ প্রার্থী কংগ্রেস ও বাম শিবিরে ধস নামিয়ে নিজের ঘরে ভোট তুলে নেয়। বিরোধীদের দাবি, এই ভোট কাটাকাটির অঙ্কেই উতরে গিয়েছে তৃণমূল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy