জ্যোতি বসুকে নিশানা উদয়ন গুহের। — ফাইল চিত্র।
বাম আমলে নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে কিছু দিন আগে তৎকালীন মন্ত্রী কমল গুহের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরই পুত্র উদয়ন গুহ। রাজ্যের মন্ত্রী সেই উদয়ন এ বার বিঁধলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুকে। উদয়নের অভিযোগ, বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মেধাবী পড়ুয়াদের বঞ্চিত করে বহু সাধারণ মানের ছাত্রছাত্রীকে ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। উদয়নের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে সিপিএম। দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলকে পাল্টা বিঁধেছে সিপিএম।
প্রসঙ্গত বামফ্রন্ট জমানাকে কাঠগড়ায় তুলে রবিবার সকালে এই মর্মে একটি টুইট করেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাতে কুণাল লেখেন, ‘‘বামফ্রন্ট জমানায় ডাক্তারি পড়তে মুখ্যমন্ত্রীর কোটা ছিল। এই কোটা ২০১১-র পর তুলে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম জমানায় মুখ্যমন্ত্রীর কোটায় ক’জন এবং কারা ডাক্তারি পড়েছিলেন, অধিকাংশই জয়েন্টে না পেয়েও কোটায় ঢোকার অভিযোগ উঠত কেন, সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করুক সিপিএম।’’
কুণালের টুইটের আগে শনিবার কোচবিহারের দিনহাটায় একটি সভায় উদয়ন দাবি করেন, ‘‘জ্যোতি বসু দুর্নীতি করেননি? জ্যোতি বসু বড় দুর্নীতি করেছেন। এক সময় যখন বাংলায় মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ার জন্য ছাত্র ভর্তি হত। তখন আসন কম ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে যখন আসন কম ছিল। এ জন্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হত। মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের অনেকে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বিভাগে পাশ করেও জয়েন্ট পাশ করতে না পারার জন্য ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারতেন না। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর কোটা ছিল। ১০টি ডাক্তারিতে এবং ১০টি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। প্রথম বিভাগে পাশ করেও যারা ডাক্তারিতে সুযোগ পায়নি তাদের বঞ্চিত করে সিপিএম নেতা মানিক দত্তের ছেলে সেকেন্ড ডিভিশনে পাশ করে আজ ডাক্তার হয়েছে জ্যোতি বাবুর কোটায়। জ্যোতিবাবু দুর্নীতি করেননি?’’
উদয়নের পিতা কমল ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের চেয়ারম্যান। শরিক দল হিসাবে বামফ্রন্ট সরকারে ১৯৭৭ সাল থেকে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী ছিলেন কমল। টানা ১৪ বছর ওই দফতরের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। বাম আমলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পিতা কমলকে নিয়ে সম্প্রতি এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উদয়ন মন্তব্য করেন, ‘‘বাবার সামনে বসে তালিকা তৈরি হয়েছিল। বাবা সেই তালিকাকে এনডোর্স করে দিয়েছিলেন। সেখানে তো যোগ্য ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সেটা দুর্নীতির একটা অঙ্গ। এটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। যারা আজকে রাস্তায় বসে যোগ্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলছে তাদের পূর্বসূরিরা যোগ্যদের বঞ্চিত করেই চাকরি দিয়েছে।’’
এই মন্তব্যের ব্যাখ্যাও শনিবার দিয়েছেন উদয়ন। তাঁর মতে, ‘‘তৃতীয় বিভাগে পাশ করে মাস্টারি করছে। তা তখন যোগ্য ব্যক্তিদের বঞ্চিত করা হয়নি? এই কথাটাই আমি বলেছিলাম। কমল গুহ করেছিলেন, টাকা নিয়ে নয়। কিন্তু যদি যোগ্য ব্যক্তিকে বঞ্চিত করে যদি অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া দুর্নীতি হয়। তা হলে কমল গুহও দুর্নীতি করেছেন। এটা বলতে আমার কোনও লজ্জা নেই। বাবা চাকরি দেননি? এমন অনেক আছে যারা তৃতীয় বিভাগে পাশ করেছে। দ্বিতীয় বিভাগ, প্রথম বিভাগে চাকরি পায়নি তা হলে তৃতীয় বিভাগে কেন চাকরি পেল? সেটা তো এক রকম দুর্নীতি।’’
বসুকে জড়িয়ে উদয়নের মন্তব্যে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষিপ্ত সিপিএম। সিপিএমের কোচবিহার জেলার সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন, ‘‘এই সব লোকের কথার কোন যৌক্তিকতা নেই। মানুষ এই সব গ্রহণ করেন না। জ্যোতিবাবু আমাদের জননেতা। আর উদয়ন তো নিজের বাবাকেই ছাড়ছে না। তাঁকেই নিচুতে নামিয়ে নিয়ে এসেছে। তৃণমূল দলটা রাজ্যের মানুষের কাছে ঘৃণিত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।’’ এর পর নিজের বক্তব্যে বসুর মন্তব্য মিশিয়ে অনন্তের উত্তর, ‘‘জ্যোতিবাবু বারবার বলতেন, ‘‘মানুষ ইতিহাস তৈরি করে।’’ সেই মানুষই এদের যোগ্য জবাব দেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy