উদ্ধার হওয়া শিশু। কানকি পুলিশ ফাঁড়িতে সোমবার রাতে। নিজস্ব চিত্র
ভোটের প্রচার সেরে সদলবল বাড়ি ফিরছিলেন চাকুলিয়া তৃণমূল ব্লক যুব সভাপতি ফারুক জাম্মান নুরি। অত লোক দেখে উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়া থানার পুলিশ সোমবার রাত ৯টা নাগাদ জাতীয় সড়কের দু’দিকে গাড়িও দাঁড় করিয়ে দেয়। তখনই রাস্তা পার হওয়ার সময় কান্নার শব্দ পান ফারুক। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখেন, রাস্তার ধারেই দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছে স্কুলের পোশাক পরা এক বালিকা।
তখনও ফারুকরা জানতেন না, ওই দিন বিকেলেই বিহারের পূর্ণিয়ার প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ীর কন্যা নভ্যাকে গুলাববাগ থেকে অপহরণ করা হয়েছে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সে খবর ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছিল। পুলিশের কাছেও খবর চলে এসেছিল। অপহরণকারীরা এই রাজ্যে চলে আসতে পারে, এমন আশঙ্কা বিহার পুলিশের ছিল। তাই ফারুকরা যখন রাস্তা থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বোঝা যায়, এই সেই নভ্যা। দ্রুত পূর্ণিয়ায় নিয়ে গিয়ে রাতের মধ্যেই তাকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
তার কয়েক ঘণ্টা পরে কিসনগঞ্জ থেকে চার অপহরণকারীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তাদের গাড়িটিও পুলিশের কবলে।
পুলিশ জানাচ্ছে, তৃণমূল কর্মীদের জন্য জাতীয় সড়কে কিছু ক্ষণের জন্য যান চলাচল বন্ধ করাতেই অপহরণকারীরা ভয় পেয়ে যায়। তারা ভেবেছিল, তাদের ধরতেই পুলিশ রাস্তা আটকেছে। তাই নভ্যাকে তারা গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিল। নভ্যাকে উদ্ধারের কিছু ক্ষণের মধ্যেই রাস্তা আবার খুলে দেওয়া হয়। তখনই তারা গাড়ি ঘুরিয়ে আবার বিহারের দিকে পালায়। কিন্তু এ বার ধরা পড়ে যায়। একটি ছোট গাড়ি, দু’টি পিস্তল, ৪টি গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধৃতদের বাড়ি পূর্ণিয়া জেলাতেই। বিহার পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে অনেকটা সাহায্য মিলেছে।
নভ্যার বয়স আট। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা নামি ব্যবসায়ী। সে বাড়ি পৌঁছনো পর্যন্ত সারা ক্ষণ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে ছিলেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ফারুক। তাঁর তিন ভাইও তাই। তাঁদের বাবাও প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন।
ফারুকের কথায়, ‘‘মেয়েটিকে ওই রাতে অসহায় অবস্থায় কাঁদতে দেখে নিজের পরিবারের মেয়েদের কথাই মনে পড়ে গিয়েছিল। ও যে বাড়িতে ফিরেছে, এটা খুব বড় স্বস্তি।’’ পুলিশের কিছু কর্তাও মানছেন, ফারুকদের নজরে না পড়লে, রাস্তা খুলে দেওয়ার পরে দুষ্কৃতীরা আবার নভ্যাকেগাড়িতে তুলে নিয়ে পালাতে পারত। ফারুকের কথায়, ‘‘আমরা সবাই যে এককাট্টা হয়ে একটা বাচ্চা মেয়ের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি, এটা খুব বড় পাওনা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy