জলপাইগুড়িতে তৃণমূলের প্রচারে সৌরভ চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।
দলের নেতা-কর্মীদের বহিষ্কার-শো-কজ করেও পুরভোটের আগে জলপাইগুড়িতে দলের ক্ষোভ-বিক্ষোভ রুখতে পারছে না তৃণমূল। মঙ্গলবার সাত জন বিক্ষুব্ধকে ছ’বছরের জন্য বহিষ্কার এবং একজনকে শোকজ করার ঘোষণা করে তৃণমূল নেতৃত্ব। শাস্তির কথা ঘোষণার তিন ঘণ্টার মাথায় দলের জেলা সভাপতির বন্ধ দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষুব্ধরা ফের জেলা নেতৃত্বকে আক্রমণ করেছেন। দলের পুরোনো নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ অব্যাহত থাকায় পুরভোটের ফলে প্রভাব পড়তে পারে বলেও দলের অন্দরেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দলের সাত পুরনো কর্মীকে শোকজ না করে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না দলের প্রবীণ নেতৃত্বের একাংশ। যেমন, তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওঁদের ডেকে কথা বলা উচিত ছিল।’’
মঙ্গলবার বেলা দু’টো নাগাদ শহরের সিনিয়ার সিটিজেন পার্কে পুরসভার ২৫টি ওয়ার্ডের প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বৈঠকের পরে গৌতমবাবুই শাস্তির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারে যোগ দিয়ে বিভান্তি সৃষ্টি এবং ধারাবাহিক ভাবে গোলমাল পাকানো সহ বিভিন্ন অপরাধে দল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সাত জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও নির্দল প্রার্থীর হয়ে প্রচারে সামিল হওয়ার জন্য একজনকে শোকজ করা হয়েছে।’’ দলের তরফে জানানো হয়েছে, তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের প্রদেশ কমিটির সদস্য তথা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বোর্ড সদস্য সাগরিকা সেন, অপর্ণা ভট্টাচার্য, দীপা ঘোষ, কৃষ্ণা দত্ত, মিনা বণিক, সদন ছেত্রি এবং স্বপন সরকারকে ৬ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়কে নির্দল প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারের অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে।
বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময়ে দলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী এবং সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মণও সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন। প্রার্থী বাছাইয়ের সময়ে পুরোনো নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কোনও আলোচনাই হয়নি বলে দাবি তুলে গত ২৩ মার্চ রাতে সাংসদের বিজয়বাবুর কার্যালয়ে ঢুকে গোলমাল করার অভিযোগ ছিল বহিষ্কৃতদের বিরুদ্ধে। এ দিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে সাংসদ বিজয়বাবু দলনেত্রীকে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। গৌতমবাবুর দাবি, ‘‘ওঁদের (বিক্ষুব্ধদের) কয়েক বার সতর্ক করেও লাভ হয়নি।’’ গত সোমবারও প্রয়াস হলে মহিলা কর্মিসভায় সভায় জেলা সভাপতিকে হেনস্থা করার অভিযোগও উঠেছিল বিক্ষুব্ধদের বিরুদ্ধে। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘কোনও একটি বিষয় নয়। ওঁদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক দল বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে।’’
এ দিন সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ সদ্য বহিষ্কৃত সাগরিকা সেন, কৃষ্ণা দত্ত, মিনা বণিকরা অনুগামীদের নিয়ে থানা মোড়ে দলের জেলা সভাপতির দফতরের সামনে যান। বন্ধ দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে সাগরিকা দেবী বলেন, “অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করেছি। ওঁরা প্রমাণ করুন আমরা শৃঙ্খলা ভেঙেছি।” এর পরে তাঁর চ্যালেঞ্জ, “ওঁরা বহিষ্কার করার কে? আমরা দলে আছি, থাকব।’’ দলের একাংশ কর্মী-সমর্থকদের মদত না তাকলে, ক্রমাগত দলের জেলা নেতাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে তৃণমূলের অন্দরেই জল্পনা তৈরি হয়েছে। সে কারণেই দলের এ দিনের সিদ্ধান্তেও বিক্ষোভে কতটা রাশ টানা যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
গত সোমবার যে ভাবে বিক্ষোভ হয়েছে, তাতেও দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল বলে জেলা নেতাদের আশঙ্কা। সোমবার সভাস্থলের বাইরে পৌঁছতে কয়েকজন মহিলা তৃণমূল কর্মী ‘গো ব্যাক সৌরভ’ স্লোগান দিয়ে তেড়ে যান। পরিস্থিতি দেখে পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষী সৌরভকে ঘিরে ফেলে হলের ভিতরে নিয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ মহিলাদের পক্ষে বিউটি সেন দাবি করেন, তিনি দলের জেলা সভাপতির জামার কলার ধরেও টেনেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সৌরভবাবু এবার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে সিপিএমের লোকজনকে প্রার্থী করেছেন। দলনেত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে যা ইচ্ছে সেটাই করে বেড়াচ্ছেন। এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সে জন্য আমরা বলেছিলাম ওঁকে জলপাইগুড়িতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সেজন্য এদিন বিক্ষোভ দেখান হয়। কয়েকজন কর্মী ওঁকে হেনস্থা করে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy