প্রধানশিক্ষক: সামসুল আলম। নিজস্ব চিত্র
সেবার মুরলিগঞ্জ হাইস্কুলে ছিল বিজ্ঞান প্রদর্শনীর আসর। প্রশাসনের অন্দরের খবর, দার্জিলিঙের তৎকালীন জেলাশাসক পুনিত যাদব অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরে সহকর্মীদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, সরকারি অনুষ্ঠান বেসরকারি স্কুলে কেন? পরে তাঁর ভুল ভাঙান সহকর্মীরা। তাঁরা জানান, স্কুলটি বেসরকারি নয়। বরং পুরোপুরি রাজ্য সরকারি স্কুল। শোনা যায় অবাক হয়ে গিয়েছিলেন জেলাশাসক।
স্কুল সূত্রের খবর, ফাঁসিদেওয়া ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকার এই স্কুলটিতে ২০০৪ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সামসুল আলম যোগ দেন। তখন স্কুলে দু’টি মাত্র বেঞ্চ। সাকুল্যে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী আর একটি দোচালা ঘর। দেড় দশক পরে সেই স্কুল এখন পাকাবাড়ির। রয়েছে আধুনিক সরঞ্জাম, পর্যাপ্ত ক্লাসঘর, সিসিটিভি আর সাজানো বাগান। শুধু পরিকাঠামোই নয়, স্কুল এগিয়েছে ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক উন্নয়নেও। স্কুলের ছাত্রভর্তি, ফল প্রকাশ, উপস্থিতির হার এবং শংসাপত্র প্রদান সবই হয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে। চালু হয়েছে বাস পরিষেবাও। মুরলিগঞ্জ হাইস্কুলের এই উন্নতিতে সিংহভাগ কৃতিত্বই যে প্রধান শিক্ষক সামসুল আলমের, তা বলছেন অভিভাবকরাই। একই কথা বলছেন তাঁর সহকর্মীরাও।
এই স্কুল থেকে ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে তিনজন উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম সারিতে স্থান পেয়েছেন। স্কুলের প্রাক্তনীরা বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত। মডেল স্কুলের সাফল্য জানাতে কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশি শিক্ষকদের প্রতিনিধিদলও পাঠিয়েছিল কয়েক বছর আগে। ২০১৩ সালে যামিনী রায় পুরস্কারও পায় এই স্কুল।
সবটাই যে সরকারি অর্থে হয়েছে তা নয়। স্কুলের উন্নয়ন দেখে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও এগিয়ে এসেছে সাহায্যের জন্য। প্রধান শিক্ষক সামসুল আলম বলেন, ‘‘সরকারি অর্থ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পূর্ণ ব্যবহার করেছি। স্কুলের ছোট বড় প্রতিটি কাজেই স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সংযুক্ত করা এবং সহকর্মীদের টিমওয়ার্কে এই সাফল্য পেয়েছি।’’ এখন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা অন্তত ১৯০০। প্রতিবছর শিলিগুড়ি এবং সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকেও ছাত্রছাত্রীরা এই স্কুলে ভর্তি হচ্ছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক।
সামসুল আলমের ব্যক্তিগত ক্যারিশমাও অতুলনীয় বলে দাবি করছেন শিক্ষা জেলার কর্তারাও। তাঁরা জানান, রাজ্যের অন্যান্য প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকদের বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণের রিসোর্স পার্সন হিসেবে অন্তত ১২ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সামসুল আলম।
রাজ্য সরকারের তরফে এ বছর তাঁর নাম জাতীয় শিক্ষক পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করে পাঠানো হয়েছিল। শেষপর্যন্ত তা কেন্দ্রীয় তালিকায় স্থান পায়নি ঠিকই কিন্তু তাতে তাঁর কোনও আক্ষেপ নেই। উন্নত মানবসম্পদ তৈরি করতে সকলের সাহায্যই তাঁর বড় পুরস্কার বলে জানান সামসুল আলম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy