হানাদার: চান্দামারিতে লোকালয়ে বাইসন। নিজস্ব চিত্র
গরমে শুকিয়ে গিয়েছে নদী। জলের অভাব তৈরি হয়েছে। রোদের তাপে ঘাস, পাতাও সতেজ ভাব হারিয়েছে। অসহায় হয়ে পড়েই বাইসনের দল জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে বলে মনে করছেন পরিবেশপ্রেমীরা।
সেই সঙ্গে এই সময় কোথাও সচেতন ভাবে আবার কোথাও না জেনেশুনে জঙ্গলের গাছের শুকনো পাতায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। তাতেও বনে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে বন্যপ্রাণীরা। শুধু বাইসনই নয়, অন্য বন্যপ্রাণীরাও বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন।
বন দফতরও খাবারের অভাবের কথা অনেকটাই স্বীকার করে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে বন দফতরের মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন দাবি করেছেন, বাইসনের সংখ্যা উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। তাদের জঙ্গল ছেড়ে বেরোনোর এটাও একটা কারণ। তিনি বলেন, “ওই প্রাণীর উপরে সমীক্ষা করা হয় না। তা করা হবে। তবে জঙ্গলে গেলে প্রথম দেখা মেলে বাইসনের। সেই সঙ্গে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে এখন ভুট্টা চাষ বাড়ছে। ভুট্টা খেতেও বাইসন বেরিয়ে যাচ্ছে।”
হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের অনিমেষ বসু জানান, এই সময় সুখা মরসুম। প্রতি বছরই এই সময় বন্যপ্রাণীরা জঙ্গল ছাড়তে শুরু করে। গরমের জন্য নদীর জল শুকিয়ে যায়। বাইসন বা অন্য বন্যপ্রাণী পানীয় জলের অভাব বোধ করে। সেই সঙ্গে জঙ্গলের ঘাস, পাতা শুকিয়ে যেতে শুরু করে। অনেকে আবার কচি ঘাসের জন্য এই সময় জঙ্গলের পাতায় আগুন ধরিয়ে দেয়। আবার কখনও বিড়ি, সিগারেটের টুকরো থেকেও আগুন লাগে। তাতে একদিকে যেমন খাবারের সঙ্কট তৈরি হয়। পাশাপাশি বন্যপ্রাণীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, “এই সব কারণের জন্যেই এমন সময় জঙ্গল থেকে বেরিয়ে লোকালয়ে চলে বন্যপ্রাণীরা। তার পরেই তাদের ঘিরে ধরে জনতার একটি অংশ। তাতেই বন্যপ্রাণীদের মৃত্যু হয়। বিশেষ করে বাইসনের হৃদযন্ত্র খুব দুর্বল।” তিনি দাবি করেন, ছোটাছুটির পরে ঘুমপাড়ানিগুলিতে কাবু হয়ে বাইসন বেচে যাওয়ার ঘটনা খুব কম ঘটে। সে ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার থেকে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা জঙ্গল লাগোয়া। সেই এলাকাগুলিতেই মূলত বন্যপ্রাণীদের দেখা যায়। গত দু’দিনে কোচবিহারের মাথাভাঙার পারাডুবি ও কোচবিহার সদরের চান্দামারি গ্রামে বাইসন দেখা যায়। গত বছরও মাথাভাঙার লতাপাতা-সহ একাধিক এলাকায় বাইসন দেখা যায়। রবিবার শামুকতলার বানিয়াডাবরিতে বাইসন দেখা যায়।
পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাস গ্রুপের অরূপ রায় বলেন, “জঙ্গলে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। যাতে বন্যপ্রাণ নিরাপদে রয়েছে কি না সেটা দেখা যায়। অন্যদিকে যাতে বাইসন বা বন্যপ্রাণ বাইরে বেরিয়ে এলে যাতে কেউ তাদের তাড়া না করে বন দফতরে খবর দেয় সেই ব্যপারে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy