প্রতীকী ছবি।
বাড়ি থেকে সেজেগুজে বেরিয়েছিল মেয়েটি। আধার নামলেও ফেরেনি বাড়িতে। আধার ঘুচে ভোরের আলো ফুটলেও ঘরে ফেরেনি বাড়ির মেয়ে। উদ্বেগ, উৎকন্ঠা নিয়ে ছোটাছুটি শুরু হয়েছিল আত্মীয়-স্বজনদের কাছে। তার পরেও হদিশ না মেলায় দ্বারস্থ হতে হয় পুলিশের। সেখান থেকেই যা খবর মেলে, তাতে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব এক মহিলা। মেয়ের ঝলসানো নিথর মৃতদেহ দেখে শিউরে উঠেছিলেন তিনি। চেঁচিয়ে তিনি বলে ওঠেন, “কী নৃশংস অত্যাচারই না হয়েছে মেয়েটার উপরে।”
মাস খানেক আগে ইংরেজবাজারের ধানতলা থেকে উদ্ধার হওয়া মেয়ের দগ্ধ মৃতদেহ শনাক্ত করতে গিয়ে শিউরে উঠেছিলেন শিলিগুড়ির বাসিন্দা ওই মহিলা। তাঁর মতোই, তরুণী মেয়ের আধপোড়া ঝলসানো মৃতদেহ দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের আরও এক মা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “মেয়েকে শেষবারের মতো বুকে চেপে ধরতেও পারলাম না। মেয়ের উপর নৃশংস অত্যাচার চালানোর পরেও থামেনি অপরাধীরা। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেওয়া হল।”
মালদহ থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর। গত, তিন মাসে এমনই হাড়হিম করা একাধিক ঘটনা দেখে শিউরে উঠেছেন দুই জেলার মানুষ। গত, সেপ্টেম্বর মাসে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে পুনর্ভবা নদীর পাড় থেকে হদিশ মিলেছে এক যুবতীর অর্ধনগ্ন ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। যুবতীর প্রেমিক তার দুই বন্ধুর সহযোগিতা নিয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছিল বলে দাবি পুলিশের। তিন জনই এখন পুলিশের হেফাজতে। দক্ষিণ দিনাজপুরের পর গত, ডিসেম্বরে মালদহের ইংরেজবাজারের ধানতলা গ্রামের নির্জন আমবাগান থেকে হদিশ মেলে এক তরুণী দগ্ধ মৃতদেহ।
প্রথমে তরুণীর নাম পরিচয় জানা ছিল না পুলিশের কাছে। পরে যুবতীর পরিচয় জানার পাশাপাশি এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ঘটনাগুলির রেশ কাটতে না কাটতেই ফের মালদহের মানিকচকের আমবাগান থেকে উদ্ধার হয় আরও এক যুবতীর দেহ। একই সঙ্গে চলতি মাসেই দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জেও মালদহের ধানতলা কাণ্ডের মতোই এক তরুণীর ঝলসানো দেহ উদ্ধার হয়।
মফস্সল শহরগুলিতে এমন নৃশংসতা দেখে আঁতকে উঠছেন আম-আদমি। ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে কাণ্ডগুলি ঘটনো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তদন্তকারী পুলিশ কর্তাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, “খুনের আগে অপরাধীরা জায়গা বেছে নিচ্ছে। তার পরে নির্জন সেই স্থানে গিয়ে অপরাধ ঘটাচ্ছে। আর সেই অপরাধ মেটাতে পুড়িয়ে দেহ লোপাটের ঘটনা ঘটছে।” আর দুই জেলাতেই প্রচুর নির্জন স্থান রয়েছে। মালদহে যেমন বিঘার পর বিঘা আমের বাগান। তেমনই দক্ষিণ দিনাজপুরে ধানের জমি। নির্জন এই বাগান, জমিই যেন অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে।
কেন এমন নৃশংসতা? কেন এতো বেপরোয়া অপরাধীরা? এই প্রশ্নগুলি উঠতে শুরু করেছে। মালদহের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মানসী দত্ত বলেন, “অপরাধের নৃশংসতা ক্রমশ বাড়ছে মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুরের মতো ছোট শহরগুলিতে। মানুষ এখন হিংস হয়ে উঠছে। পরিবেশের সংজ্ঞাই এখন বদলে গিয়েছে। যার জন্য অপরাধের হিংস্রতাও বাড়ছে।”
এলাকার মানুষদের একাংশের বক্তব্য, এই সমস্যা মেটাতে প্রথমে শিক্ষার হার বাড়াতে হবে। গ্রামে বিদ্যুৎ, পাকা রাস্তা করা দরকার। ইন্টারনেট থাকা দরকার। তাতে এই প্রবণতায় রাশ টানা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy