ঘটনাস্থলে তদন্তে পুলিশ। — নিজস্ব চিত্র
নৈশ ক্রিকেট দেখে ফেরার পথে রবিবার রাতে গুলি করে খুন করা হয় এক যুবককে। সেই খুনের পরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছিল। কিন্তু, কোনও রাজনৈতিক কারণ নয়, প্রেম ঘটিত সম্পর্কের জেরে খুন হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
ইতিমধ্যেই মোবাইলের কল রেজিস্টারের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ঘটনার সময় সঙ্গে থাকা যুবক রিজুয়ান কিংবা তাজির আলম ওরফে শুকনা বলেন, ‘‘এক সঙ্গে গ্রামের রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। যারা গুলি করেছে, তাদের মুখে সাদা অভ্র লাগানো ছিল। গুলি করার সময় দেখতে না পেলেও পালানোর টর্চের আলোতে দেখতে পেয়েছে একজন।’’ তবে তাদের কথায়, ‘‘ যে সাত জন ছিলাম কারও কোন প্রেমঘটিত কোন বিষয় নেই।’’
রবিবার রাতেই ওই গুলিতে আহত অপর এক যুবক মহম্মদ ফাইহাদের সঙ্গে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে দেখা করেন পুলিশের তদন্তকারী একটি দল। তবে ফইহাদও অবশ্য পুলিশকে কিছুই জানায়নি বলে জানতে পারা গিয়েছে। এমনকি ওই যুবকেদর সঙ্গে থাকা বাকি পাঁচজন যুবকের কেউই খুনের কারণ সম্পর্কে পুলিশকে কোন তথ্যই জানাতে পারেনি। সোমবার দুপুরে সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখার জন্য ঘটনাস্থলে যান গোয়ালপোখর থানার ওসি অভিজিৎ দত্ত। নিহত যুবকের সঙ্গে থাকা বাকি যুবকদের সঙ্গে আলাদা করে কথাও বলেন ওসি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, এর পিছনে প্রেম ঘটিত সম্পর্ক, নাকি টাকার লেনদেন—সমস্ত কিছুই এক এক করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইসলামপুরের এসডিপিও প্রদীপ কুমার যাদব বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই ঘটনার তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে।’’
শনিবার রাত প্রায় পৌনে ১২ নাগাদ বাড়ির থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের গোয়ালপোখরের কুট্টিবস্তি এলাকা থেকে নৈশ ক্রিকেট দেখে বাড়ি ফিরছিলেন গোয়ালপোখরের বড় পাটনা এলাকার সাত যুবক। গ্রামের ভিতর ধান খেতের মধ্যেই রাস্তা দিয়েই বাড়ি ফিরছিলেন তারা। রাস্তাটির সরু হওয়ায় এক লাইন ধরে রাস্তা দিয়েই হাঁটছিলেন সাত জন। বাড়ি থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরে দুই দুষ্কৃতীরা তাঁদের পথ আটকায়। সেখানে একটি গুলি মাটিতে করলেও পরপর দু’টি গুলি তাদের লক্ষ করে ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। গুলিতে আহত হয়ে লুটিয়ে পড়ে ফাইহাদ। তবে তার পেছনে রিজুয়ান মাটিতে বসে যাওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলি লাগে বছর ২৫ এর আনজারের গায়ে। গুলি লেগে আহত অবস্থায় তারা বাড়ি পর্যন্ত দৌড়ে চলে আসে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের বিহারের কিশানগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তায় মৃত্যু হয় আনজারের। অপর এক জনকে আহত অবস্থায় শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, একটি খুনের মামলা রুজু করে ইতিমধ্যেই তদন্তের কাজ শুরু করেছে গোয়ালপোখর থানা। শুধু মৃত বা আহত ব্যক্তিরই নয়, প্রত্যেকেরই ফোন নম্বারের ভিত্তিতে তদন্ত চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি সন্দেহভাজন ব্যক্তিদেরও নম্বর তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এ দিনও আনজারের জন্য চোখের জল ফেলেছেন এলাকার প্রত্যেকেই. এলাকার বাসিন্দা উসমান আলম বলেন, ‘‘আনজার ভাল ছেলে ছিল বলেই জানি। কে বা কেন তাকে গুলি করে খুন করতে গেল, বুঝতে পারছি না।’’ বড় ছেলেকে হারানোয় পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছেন আনজারের মা মায়ফাখাতুন। কিছুই বলতে পারছে না। বারান্দায় মাদুরের শুয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠছেন বারবার। শুধু বলেন, ‘‘ছেলের কোনও শত্রু ছিল না। ওকে মারল কে?’’
অপর দিকে, আনজারের কাকা কামালউদ্দিন বলেন, ‘‘আনজারের বাবা যখন মারা গেল, সে তখন খুব ছোট। এখন সবে সংসারের হাল ধরার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তার মধ্যেই মারা গেল সে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy