Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
আতঙ্কে ১২ দিন ঘরছাড়া, দাবি পরিবারের
Last Rites

ভিন্ জেলায় গোপনে শ্রাদ্ধ হল মৃত্যুঞ্জয়ের

২৬ এপ্রিল রাতে কালিয়াগঞ্জের রাধিকাপুর পঞ্চায়েতের চাঁদগাঁও গ্রামে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুঞ্জয় বর্মণের (৩৩) মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। সিবিআই তদন্তের দাবিতে বাড়ির পাশেই মৃত্যুঞ্জয়ের দেহ সমাধি দেওয়া হয়।

An image of the last rite

চলছে শ্রাদ্ধের কাজ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ ও কালিয়াগঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৩ ০৮:৪৫
Share: Save:

দু’চোখে জল। মায়ের পাশে বসে রয়েছে ছোট্ট দীপাঞ্জন। সামনেই বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ও পিণ্ডদানে ব্যস্ত পরিবার।

২৬ এপ্রিল রাতে কালিয়াগঞ্জের রাধিকাপুর পঞ্চায়েতের চাঁদগাঁও গ্রামে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুঞ্জয় বর্মণের (৩৩) মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। সিবিআই তদন্তের দাবিতে বাড়ির পাশেই মৃত্যুঞ্জয়ের দেহ সমাধি দেওয়া হয়। এর পরেই ‘নিরাপত্তার অভাব’ বোধ করায় মালদহে এক আত্মীয়ের বাড়িতে মৃত্যুঞ্জয়ের গোটা পরিবার আশ্রয় নেয় বলে দাবি। মঙ্গলবার মালদহ শহরের এক ‘গোপন’ আস্তানায় মৃত্যুঞ্জয়ের শ্রাদ্ধের ব্যবস্থা করা হয়। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ছিলেন মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী গৌরী, বছর পাঁচেকের ছেলে দীপাঞ্জন, দাদা মৃণালকান্তি, বাবা রবীন্দ্রনাথ ও মা জ্যোৎস্না বর্মণ। চাঁদগাঁওয়ের বাড়ি যাতে ফাঁকা না থাকে, সে জন্য প্রথম দিন থেকেই সেখানে পরিবার নিয়ে রয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়ের বোন মৌসুমী। এ দিন সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে নামসংকীর্তনের আয়োজন করা হয়।

রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তন্ময় সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘চাঁদগাঁও গ্রাম-সহ রাধিকাপুর পঞ্চায়েত ও পার্শ্ববর্তী পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। এর পরেও তাঁরা কেন এমন কথা বলছেন, সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।’’

উত্তর দিনাজপুরে এক নাবালিকার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ২৫ এপ্রিল কালিয়াগঞ্জ থানা ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ ও পুলিশকর্মীদের মারধরের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৬ এপ্রিল মাঝরাতে কালিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সদস্য বিষ্ণু বর্মণকে ধরতে যায় পুলিশ। অভিযোগ, সে সময় পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় বিষ্ণুর খুড়তুতো ভাই মৃত্যুঞ্জয়ের। দেহ সমাধি দেওয়ার পরের দিন ‘নিরাপত্তার অভাব’ বোধ করায় মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবার বাড়িছাড়া হয় বলে দাবি। শুক্রবার মালদহের লক্ষ্মীপুরে এক অতিথিশালায় মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের চাঁদগাঁও গ্রামে ফিরিয়ে আনতে যান জাতীয় এসসি কমিশনের ভাইস চেয়ারপার্সন অরুণ হালদার। কিন্তু নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় অরুণের সহযোগিতাতেই গ্রামের রাস্তা থেকে ফের মালদহের নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে যায় ওই পরিবার।

এ দিন গৌরী বলেন, ‘‘স্বামীর মৃত্যুর ১২ দিন পরেও কালিয়াগঞ্জের বাড়িতে ফিরতে পারিনি। আমাদের ১২ দিনে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের কাজ হয়। স্বামীর শেষ কাজটুকুও বাড়িতে করতে পারছি না! ছেলে বড় হলে এর কী উত্তর দেব, জানি না!’’ তিনি আরও বলেন, “পুলিশে আমাদের ভরসা নেই। কারণ, পুলিশই তো আমার স্বামীকে মেরেছে। তা হলে আমাদের কী নিরাপত্তা দেবে পুলিশ? আমরা চাই সিবিআই তদন্ত হোক।” এ দিন শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের যাবতীয় রীতি-নিয়ম পালন করেন মৃণালকান্তি বর্মণ। তিনি বলেন, “দীপাঞ্জন ছোট। তাই শ্রাদ্ধের কাজ করতে হচ্ছে।’’ সে কাজটুকু বাড়িতে করতে না পারায় আক্ষেপ করেন তিনিও। তিনিও সিবিআই তদন্তের দাবি করেন।

১২ মে পর্যন্ত কালিয়াগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। এর মধ্যেই এ দিন থানা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশকে মারধরে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া পরিবারের পাশে দাঁড়াতে তাঁদের বাড়ি-বাড়ি যান রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। আইনি লড়াই-সহ সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আতঙ্কিত মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবারকে সুরক্ষিত জায়গায় রাখার ব্যবস্থা দলের তরফে করা হয়েছে বলে দাবি তাঁর। দেবশ্রীর দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী করা হবে এমন বিজেপি নেতা কর্মীদের বিনা দোষে পুলিশ রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে জোর-জবরদস্তি তুলে নিয়ে গিয়েছে। গ্রামে ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নিজের বাড়িতে শ্রাদ্ধের কাজ করতে পারল না একটা পরিবার। পুলিশমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধিক্কার জানাই।’’ তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান শচীন সিংহ রায়ের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘থানা-কাণ্ডের ভিডিয়ো ফুটেজ দেখেই পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করছে। শান্ত কালিয়াগঞ্জকে অশান্ত করার চেষ্টা করছেন দেবশ্রী।’’

অন্য বিষয়গুলি:

last rites Malda Kaliyaganj Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE