শূন্যতা: ঘরের সামনে বসে দাহারি। নিজস্ব চিত্র
“মা তো নিজেই আমায় চান না! তা হলে ওঁর পুজোয় যাই কী করে?”
দীর্ঘদিনের অযত্নে জরাজীর্ণ হয়ে গিয়েছে ঘরটা। তারই দাওয়ায় বসেছিলেন দাহারি ওরাওঁ। সেখান থেকেই প্রশ্নটাই ছুড়ে দিলেন।
পাঁচ বছর ধরে বন্ধ মধু চা বাগানের বির্ষু লাইনে বাড়ি দাহারির। যেখান থেকে মেরে কেটে একশো মিটার দূরে বাগানের কারখানার গেটের উল্টো দিকে রয়েছে স্থায়ী একটি মণ্ডপ। যে মণ্ডপের সামনে বাঁশ ও কাপড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে ছোট্ট একটা প্যান্ডেল। পুজোর ক’দিন ছোট্ট এই প্যান্ডেলটিতেই বাগানের শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের লোকেদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। যেখানে বসে মণ্ডপে দুর্গার পুজো দেখেন তাঁরা।
একটা সময় এই পুজোর সমস্ত ব্যায়ভার বাগান কর্তৃপক্ষই বহন করত। কিন্তু পাঁচ বছর আগে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পুজোর ঠিক আগে বোনাস নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে বিবাদের জেরে বাগান বন্ধ করে চলে যান কর্তৃপক্ষ। তার পর আজ পর্যন্ত বাগান আর খোলেনি। বাগান বন্ধ হওয়ায় জৌলুস খানিকটা হারালেও সেই পুজো কিন্তু বন্ধ হয়নি। সামর্থ অনুযায়ী শ্রমিকদের থেকে পাঁচ-দশ টাকা ও বাগানের আশপাশের মহল্লার লোকেদের থেকে চাঁদা তুলে হয় এই পুজো।
কিন্তু এই পুজোকে ঘিরে মনে এতটুকুও আগ্রহ অবশিষ্ট নেই দাহারির। বলেন, “মা তো বছরে একবারই আসেন। তখন সবাই নতুন জামা-কাপড় পরে। সব মা-বাবা তাঁদের সন্তানদের নতুন জামা কিনে দেন। কিন্তু আমাদের তো সেই উপায় নেই। শেষ কবে দুই সন্তানের জন্য জামা কিনেছি, মনে পড়ে না। এ বারও পারব না। ছেলেরাও জানে। এখন আর জেদ করে না।’’ তার পরেই ভিজে গেল দাহারির চোখ, বুজে এল গলা: ‘‘কিন্তু আমার মন তো মানে না।”
একটু আনমনা হয়ে যান দাহারি। বলেন, “গত ছ’মাস ধরে ফাউলাই বন্ধ। দিন দুয়েক আগে এই কয়েক মাসের টাকা একসঙ্গে অনেকেই পেলেন। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য! কোনও এক অজানা কারণে আমি পেলাম না।’’ একটা দীর্ঘশ্বাস। তার পরে বলেন, ‘‘আসলে মা বুঝি নিজেই চান না, তাঁর পুজোয় একটু আনন্দ করি। না হলে, টাকা পেলাম না কেন বলুন তো!’’
কথার মাঝেই ঘর লাগোয়া একটা ছোট ছাপড়ায় ঢুকলেন দাহারি। ওটাই ওঁর রান্নাঘর। পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া একটা হাঁড়ি থেকে থালায় মোটা চালের ভাত নিলেন। সঙ্গে নিলেন আলু সেদ্ধ। বললেন, “ছেলেরা বেশিরভাগ দিন স্কুলে মিড ডে মিলের ভাত খায়। কিন্তু বাড়িতে সারা বছর আমাদের খাবারের মেনু বলতে এই আলু সেদ্ধ আর ভাত। কখনও এর সঙ্গে ঢেকি শাক। জানি না পুজোর চার দিন ছেলে দু’টোর স্কুলে মিড ডে মিলের রান্না হবে কিনা। না আলু সেদ্ধই খেতে হবে।’’
বলছেন দাহারি, আর তাঁকে ঘিরে তখন উড়ছে পুজোর হাওয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy