Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

দিতে হল না ফি, হাসি ফুটল চন্দনার

বাগান ম্যানেজারের মানবিকতায় রাতারাতি সিদ্ধান্ত বদলাল স্কুল। আর তাতেই হাসি ফুটলো বছর পাঁচেকের ছোট্ট চন্দনার ফ্যাকাসে মুখে।

বাবা (বাঁ দিকে) ও বাগানের ম্যানেজারের সঙ্গে চন্দনা।— নিজস্ব চিত্র।

বাবা (বাঁ দিকে) ও বাগানের ম্যানেজারের সঙ্গে চন্দনা।— নিজস্ব চিত্র।

পার্থ চক্রবর্তী
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫১
Share: Save:

বাগান ম্যানেজারের মানবিকতায় রাতারাতি সিদ্ধান্ত বদলাল স্কুল। আর তাতেই হাসি ফুটলো বছর পাঁচেকের ছোট্ট চন্দনার ফ্যাকাসে মুখে।

নোট বাতিলের জেরে চা বাগানে মজুরি অনিয়মিত। মেয়ের স্কুলের ফি মেটাতে পারেননি চন্দনার বাবা আশুদেব মালো। শুক্রবার পরীক্ষার ফল আনতে গিয়ে তাই খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল ছোট্ট চন্দনাকে। আশুদেবের মুখে এ কথা শুনে নিজের পকেট থেকে টাকা বের করে দেন জলপাইগুড়ির করলাভ্যালি চা বাগানের ম্যানেজার। সে কথা জানতে পেরে এরপর স্কুলের প্রধানশিক্ষকও ফি জমা না নিয়েই মেয়ের মার্কশিট তুলে দেন তাঁর হাতে।

নোট বাতিলের পর থেকে উত্তরবঙ্গের বাকি বাগানগুলির মতই করলাভ্যালি চা বাগানেও মজুরি সঙ্কট চলছে৷ ২৬ ডিসেম্বর আরও এক পক্ষের মজুরি দেওয়ার দিন আসতে চললেও, আগের বকেয়া কবে মিলবে তার কোনও উত্তর নেই কারও কাছেই৷ এই পরিস্থিতিতে মেয়ের স্কুলে প্রায় দু’হাজার টাকা ফি মেটাতে পারেননি আশুদেব৷ তার মেয়ে চন্দনা মোহিত নগরের একটি বেসরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলের লোয়ার কেজির ছাত্রী। শুক্রবার তার বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। দেওয়া হয় পরের ক্লাসে ভর্তির কাগজপত্র।

আশুদেবের কথায়, “স্কুল থেকে যখন মেয়েকে আনতে যাই তখন মেয়ের মুখটা কালো৷ আমায় দেখেই জানায় টাকা দেওয়া হয়নি বলে পরীক্ষার ফল জানানো হয়নি তাঁকে। দেওয়া হয়নি ক্লাসে ভর্তির কাগজও।’’ আশুদেব এরপর মেয়েকে বাড়িতে রেখে ছুটে যান ম্যানেজার সারভেস ত্রিপাঠীর কাছে৷ আশুদেবের কথায়, ‘‘ম্যানেজার দেরি না করে নিজের পকেট থেকে দু’ হাজার টাকা আমায় দেন৷ তবে স্কুলের প্রধানশিক্ষক সবটা শুনে এমনিই মেয়ের মার্কশিট দিয়ে দেন ৷ তাই ম্যানেজারকে তাঁর টাকা ফিরিয়ে দিয়েছি ৷ উনি যে উপকার করলেন তা কোনদিনই ভুলব না৷”

ম্যানেজার অবশ্য এর মধ্যে উপকারের কিছু দেখছেন না ৷ তাঁর কথায়, “নোট সমস্যার জন্য বাগানের শ্রমিকদের মজুরির টাকা ঠিক মতো দিতে পারছি না৷ আর মজুরির অভাবেই এক শ্রমিক তার মেয়ের স্কুলে ফি জমা দিতে না পারায় তার মার্কশিট আটকে গিয়েছে৷ মন থেকে এটা মানতে পারিনি৷’’

আর স্কুলের প্রধানশিক্ষক শঙ্কর দাস জানান, স্কুলের নিয়মানুযায়ী, কোনও পড়ুয়ার ফি বকেয়া থাকলে আগে তা দিতে হয়৷ না হলে মার্কশিট দেওয়া হয় না৷ সেজন্যই কর্মীরা ওই ছাত্রীর মার্কশিট আটকে দিয়েছিলেন৷ পরে জানতে পেরে ব্যবস্থা নেন তিনি।

শঙ্করবাবু বলেন, “বাগানের একজন ম্যানেজার যদি এক শ্রমিকের মেয়ের রিপোর্ট কার্ডের জন্য নিজের পকেট থেকে দু’হাজার টাকা দিতে পারেন, তবে আমরা কেন বকেয়া আপাতত ছাড় দিতে পারবো না? তাই ওই অভিভাবককে বলেছি, যখন মজুরির টাকা হাতে পাবেন তখনই যেন টাকা মেটান৷”

পরের ক্লাসে ভর্তির ক্ষেত্রেও অসুবিধা হবে না বলে জানিয়েছেন স্কুলের প্রধানশিক্ষক। শেষ পর্যন্ত মার্কশিট হাতে পেয়ে রীতিমত খুশি ছোট্ট চন্দনা৷ কষ্ট ছাপানো আনন্দে চোখ মুছছেন আশুদেব।

অন্য বিষয়গুলি:

little girl school fees
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE