মুখোমুখি: প্রতীক্ষার অবসান। চালু হল স্কুল। আলিপুরদুয়ারে শুক্রবার। ছবি: নারায়ণ দে।
তখন বন্ধ চলছে। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যাও অনেকটাই কম। তার মধ্যেই কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ সাইকেলে চেপে ছাত্রছাত্রীরা এগিয়ে চলছে স্কুলের পথে। যা দেখে আশপাশের বাড়ি থেকেও শুরু হয়ে যায় উঁকিঝুঁকি। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও বলছেন, ‘‘মনে হচ্ছে এক যুগ পর এমন ছাত্রছাত্রী দেখছি।’’ কয়েকজন বন্ধ সমর্থকও ছাত্রছাত্রীদেরকে দেখে বললেন, ‘‘ওদের কেউ কিছু বলবেন না। অনেকদিন পর ওঁরা স্কুলে যাচ্ছে।’’
বন্ধ সত্ত্বেও শুক্রবার, প্রথমদিনেই কোচবিহারে দেওয়ানহাট হাইস্কুলের কাছে দেখা মিলল এমন দৃশ্যের। ভিড় করলেন পাঁচশোর বেশি ছাত্রছাত্রী। স্কুলের মাঠ জুড়ে ছাত্রছাত্রীদের যেন মেলা বসে গিয়েছিল। স্কুলের প্রধানশিক্ষক জয়ন্ত কুমার পাল বলেন, ‘‘সবাই অনেক উৎসাহ নিয়ে স্কুলে এসেছে। আমরাও খুব খুশি হয়েছি। আজ ক্লাস হয়েছি।’’
তবে পাশের জেলা আলিপুরদুয়ারের ম্যাকউইলিয়াম হাইস্কুল কিংবা নিউটাউন গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা অবশ্য তেমন খুশি হওয়ার সুযোগ পাননি। অভিযোগ, কয়েকজন শিক্ষক ও জনা কয়েক ছাত্র ঢোকার পরই এ দিন ম্যাকউইলিয়াম স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন বন্ধ সমর্থকরা। যা নিয়ে শিক্ষকদের একাংশের সঙ্গে বন্ধ সমর্থকদের বচসাও বেধে যায়।
গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় আলিপুরদুয়ার শহরের নিউটাউন গার্লস হাইস্কুলের ভিতরে শিক্ষিকারা এ দিন ঢুকতেই পারেননি বলে অভিযোগ। ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি কনোবল্লভ গোস্বামী জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে ছাত্রীরাও স্কুলে আসেনি। ফলে এ দিন সেখানে পড়াশোনা হয়নি। তবে জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, বন্ধ সত্ত্বেও অধিকাংশ স্কুলই এ দিন খোলা ছিল। যদিও বন্ধের কারণে অনেক স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি কম ছিল। আলিপুরদুয়ারের বিদ্যালয় পরিদর্শক আসানুল করিম বলেন, ‘‘জেলার ১২০টি স্কুল এ দিন খুলেছে।’’
বন্ধে বেশিরভাগ গাড়ি বন্ধ থাকায় কোচবিহার শহরেও অনেক স্কুলে এ দিন পড়ুয়াদের সেভাবে আসতে দেখা যায়নি। সুনীতি অ্যাকাডেমি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মনিদীপা নন্দী বিশ্বাস বলেন, “বন্ধ থাকায় আজ ছাত্রীর সংখ্যা অনেকটাই কম ছিল। তারপরও সময় মেনে স্কুলে ক্লাস হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী কয়েকদিনে ছাত্রীদের উপস্থিতির সংখ্যা বাড়বে।”
এরই মধ্যে প্রায় এক বছর স্কুলে আসা পড়ুয়াদের অভিনব উপায়ে বরণ করে নিলেন মাদারিহাট হাই স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। নিজেদের টাকায় পড়ুয়াদের জন্য খাতা, কলম ও জলের বোতল কিনে তা তাদের হাতে তুলে দিলেন তাঁরা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নারায়ণ সরকার বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের কেউ যাতে অন্য কারও ওয়াটার বোতল থেকে জল না খায়, সেজন্যই এই উদ্যোগ। এ ছাড়া স্কুল ভবনের প্রতিটি তলায় পরিস্রুত পানীয় জলের যন্ত্রও বসানো হয়েছে।”
দিন কয়েক আগেই শিক্ষা দফতরের তরফে ১২ জানুয়ারি স্কুল খোলার কথা জানানো হয়েছিল। সেই হিসেবেই দুই জেলার প্রত্যেকটি স্কুলের ক্লাস দূষণমুক্ত করার কাজ শুরু হয়। সেইসঙ্গে এ দিন সকাল থেকেই করোনা মোকাবিলায় সব স্কুলেই সতর্কতামূলক সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। স্কুলের শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মী থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রী প্রত্যেককেই থার্মাল চেকিংয়ের পর স্কুলের ভিতর যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। ব্যবস্থা রাখা হয় স্যানিটাইজ়ার এবং সাবান ও জলেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy