প্রতীকী ছবি।
বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, টিকাই রক্ষা করতে পারে করোনা সংক্রমণ থেকে এবং সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া থেকেও। উত্তরবঙ্গের চারটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে গত দেড়-দু’মাসের করোনা রোগীদের তথ্য যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, এই দাবি অনেকাংশেই ঠিক। করোনা সংক্রমিত যে রোগীদের অবস্থা খারাপ, যাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হচ্ছে, ৮০-৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের একটি ডোজ় টিকাও হয়নি। প্রথম ডোজ় হওয়া সত্ত্বেও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে, এমন রোগীর সংখ্যা হাসপাতাল ভেদে ৩-১৫ শতাংশ। আর দুটো ডোজ় টিকা নেওয়ার পরেও সংক্রমণ? এই সংখ্যা নগন্য বলেই দাবি করা হয়েছে হাসপাতালগুলির নিজস্ব তথ্য থেকে।
চার মেডিক্যালের থেকে পাওয়া এই তথ্য একেবারেই সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ বলে দাবি। একে প্রামাণ্য হিসেবে এখনই গণ্য করতে চান না অনেকেই। তবে টিকাকরণের পরে করোনা কতটা কাবু করতে পারে, তার একটা চিত্র এই তথ্য থেকে উঠে এসেছে।
প্রথমেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল। এই হাসপাতালে গত দেড়-দু’মাসে যাঁরা করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের ৮৫ শতাংশই একটাও ডোজ় টিকা নেননি। এই পরিসংখ্যান দেখে চিকিৎসকদের একাংশের ধারণা, প্রতিষেধক নেওয়া থাকলে তা অনেক ক্ষেত্রেই সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে অথবা সংক্রমণ হলেও তা প্রাণঘাতী বা হাসপাতালে ভর্তি করার মতো হচ্ছে না। কোচবিহারের নিউটাউনের বাসিন্দা এক বয়স্ক দম্পতির উদাহরণ দিচ্ছেন অনেকেই। এক জনের বয়স ৭০ বছর, অন্য জনে ৮০ বছর। দু’জনেরই কোমর্বিডিটি রয়েছে। তার পরেও করোনা আক্রান্ত হয়েও তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। তাঁদের দু’টি ডোজ় টিকাই নেওয়া ছিল। কোচবিহার মেডিক্যালে ভর্তি আক্রান্তের ৯৫ শতাংশই টিকা নেয়নি বলে এই সূত্রে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কল্যাণ খানের মতো বিশেষজ্ঞদের কয়েক জন জানান, ডেল্টা সংক্রমণ আমেরিকায় ভয়াবহ হয়ে উঠলেও সেখানকার বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী, টিকার দুটি ডোজ় নেওয়া থাকলে তা সাধারণত প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে না। রাজ্যের কয়েক জন বিশেষজ্ঞ অবশ্য জানিয়েছেন, রাজ্য এবং দেশে ডেল্টা সংক্রমণ এর মধ্যেই হয়ে গিয়েছে। টিকা দেওয়ার পরও কারা আক্রান্ত হচ্ছেন, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে তা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। কোচবিহার মেডিক্যালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান সৈকত দত্ত বলেন, ‘‘টিকা দেওয়া থাকলে স্বাভাবিক ভাবেই ঝুঁকি অনেক কম। সংক্রমণ প্রাণঘাতী হওয়ার আশঙ্কাও কম থাকে।’’
মালদহ মেডিক্যালে সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ নিয়ে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের কারও টিকা দেওয়াই ছিল না। করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ় নিয়ে আক্রান্ত কেউ এখন পর্যন্ত মেডিক্যালে ভর্তি হননি। প্রথম ডোজ় নেওয়ার পরেও যাঁরা ভর্তি হন, তাঁরা সকলেই সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। মালদহ মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলেন, "করনো টিকার দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার পরে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই।’’ উত্তর দিনাজপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত এক মাসে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৮০ শতাংশেরই টিকা হয়নি। এর পরেও মাস্ক পরতে ও বিধি মানতেই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রশাসনকে টিকাকরণে গতি বাড়াতেও অনুরোধ করা হয়েছে।
(সহ-প্রতিবেদন: সৌমিত্র কুণ্ডু, নমিতেশ ঘোষ, জয়ন্ত সেন,
গৌর আচার্য)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy