উচ্চ আদালতের নির্দেশে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ পদ ফিরে পেয়েছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শুভাশিস ওরফে সোনা পাল। সোমবার ফের তাকে কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে অপসারণ করা হল।
এ দিন বিকেলে বালুরঘাটে জেলা পরিষদ ভবনে ওই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন আইন পরিষদীয় সচিব তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘এর আগে পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে সোনা পাল বহিষ্কারের বিরুদ্ধে তার পক্ষে অন্তর্বর্তী রায় পেয়েছিলেন। গত ১৮ মার্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের তলবি সভায় পূর্ত স্থায়ী সমিতির সদস্য সোনা পালের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়েছিল। এ দিন অতিরিক্ত জেলাশাসকের উপস্থিতিতে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে তাঁকে অপসারণ করা হয়।
তবে গঙ্গারামপুর পুরভোটের মুখে সোনা পালের বিরুদ্ধে ফের কড়া অবস্থান নিয়ে আদতে দলের অন্দরে বিরোধী গোষ্ঠীকে চাপে রাখতেই জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র ওই বার্তা দিলেন বলে দলেরই একাংশ কর্মী মনে করছেন। প্রসঙ্গত, গঙ্গারামপুরের ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিপ্লববাবুর বিরোধী বলে পরিচিত স্থানীয় বিধায়ক সত্যেন রায়ের চাপে বেশকিছু ওয়ার্ড ছেড়ে দিতে হয় বলে দল সূত্রে খবর। ফলে অন্তত আটটি ওয়ার্ডে বিধায়ক সত্যেনবাবুর পছন্দের লোক গঙ্গারামপুর পুরভোটের টিকিট পেয়ে প্রার্থী হয়েছেন। নানা অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃত সোনা পাল গঙ্গারামপুরের বিধায়ক সত্যেনবাবুর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। এর আগে দল থেকে সোনা পালকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও সত্যেনবাবু সরব হয়েছিলেন বলে দল সূত্রে খবর। তবে এ দিন সত্যেনবাবু বলেন, ‘‘সোনা পালের ঘটনাটি দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। গঙ্গারামপুর পুরভোটের প্রার্থীরা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী। কেউ কারও অনুগত প্রার্থী নন।’’
নতুন করে অপসারণের বিষয়টিকে অবশ্য আমল দিতে চাননি সোনা পাল। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘‘পূর্ত বিষয়ক স্থায়ী সমিতির ছ’জন সদস্যের মধ্যে আমি এবং বিরোধী সিপিএমের এক সদস্য উপস্থিত ছিলাম না। চারজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলেই হলো নাকি ? ওঁরা কে আমাকে কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে সরানোর ?’’ সোনাবাবুর দাবি, অপসারণের ওই সিদ্ধান্ত ডিভিশনাল কমিশনারের কাছ পাঠাতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘ডিভিশনাল কমিশনার আমাকে এ বিষয়ে চিঠি পাঠান, তারপর দেখা যাবে। আসলে বিপ্লব মিত্র দলটাকে তুলে দেওয়ার জন্য যা খুশি করছেন।’’
জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে সোনা পালকে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে অপসারণ করা হয়। তার আগে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর তাঁকে দল থেকে ছ’বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লববাবু। এরপর গত ২৮ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় এবং সুদীপ অহলুওয়ালিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ অপসারণের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিলে সোনা পাল ফের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। এ দিন বিপ্লববাবু বলেন, ‘‘এর আগে স্থায়ী সমিতির সদস্য পদ থেকে ওকে (সোনা পাল) অপসারণ না করে সরাসরি পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে পদ্ধতিগত ভুল হয়েছিল। এ বারে প্রথমে স্থায়ী সমিতির সদস্য পদ থেকে সরাতে অনাস্থা পাশ করে পদ্ধতি মেনে এ দিন কর্মাধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।’’
তবে এই অপসারণের মাধ্যমে বিপ্লববাবু বিরোধী-গোষ্ঠীকে বার্তা দিলেন বলেই মনে করা হচ্ছে। দলীয় সূত্রের খবর, গঙ্গারামপুর পুরসভার রাশ নিজের কাছে রাখতে দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর কাছে আদতে কড়া বার্তা দিয়ে রাখলেন বিপ্লববাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy