সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
মালদহের ঘটনা নিয়ে বিতর্কের আবহেই এ বার বেফাঁস মন্তব্য করে বসলেন রাজ্যের গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। বেহাল রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স না ঢোকায় শুক্রবার খাটিয়ায় শুইয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় বামনগোলার এক তরুণীর। এই নিয়ে বিতর্কের আবহেই শনিবার সিদ্দিকুল্লা দাবি করেন যে, বেহাল রাস্তার জন্য নয়, ‘খারাপ ভাগ্যে’র জন্যই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। এ দিন বর্ধমানের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মন্ত্রী। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “১০০-র মধ্যে এক জনের অবস্থা যদি খারাপ হয়, তবে ৯৯টাকে খারাপ বলব কেন?” তার পরেই তাঁর সংযোজন, “মৃত্যু ভাগ্যে ছিল। রাস্তার জন্য তাঁর মৃত্যু হয়নি।” স্বাভাবিক ভাবেই সিদ্দিকুল্লার এই মন্তব্যের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি।
সিদ্দিকুলার এই মন্তব্য প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “রাজ্যের মন্ত্রীরা যে ক্রমশ সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলছেন, এই ধরনের মন্তব্য তারই প্রমাণ।” এই নিয়ে রাজ্যের তৃণমূল মন্ত্রিসভার সদস্যকে তীব্র আক্রমণ করেছে সিপিএমও। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এক সময় ওঁর (সিদ্দিকুল্লা) ডাকে লোকজন জড়ো হত। এখন দল এবং সরকারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। তাই প্রচারে থাকতে এই ধরনের মন্তব্য করছেন।” সিদ্দিকুলাকে বিঁধে সুজনের সংযোজন, “এই কথাটা উনি মৃত তরুণীর পরিবারকে গিয়ে বলতে পারবেন? গ্রামবাসীকে গিয়ে বলতে পারবেন যে, খারাপ ভাগ্যের জন্যই এই মৃত্যু হয়েছে?”
ইতিমধ্যেই মালদহের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। রাজ্য প্রশাসনকে বিঁধে তিনি বলেন, “এই লজ্জা রাখার জায়গা নেই।” এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বলেন, “বিষয়টি জেলাশাসকের দেখা উচিত।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং গ্রামবাসীদের তরফে জানা গিয়েছে, মালডাঙা গ্রামের বাসিন্দা, বছর পঁচিশের তরুণী মামণি রায় গত দু’তিন দিন ধরেই জ্বরে ভুগছিলেন। শুক্রবার দুপুরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য তরুণীর পরিজনেরা অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে পাঠান। কিন্তু বেহাল মেঠো রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স দূরস্থান, গ্রামে কোনও যানবাহনই ঢোকে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এই অবস্থায় কোনও উপায় না দেখে ওই তরুণীকে খাটিয়ায় তুলে গ্রামের মেঠো পথ পেরিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। গন্তব্য ছিল বামনগোলার গ্রামীণ হাসপাতাল। কিন্তু বেহাল রাস্তা পেরিয়ে হাসপাতালে পৌঁছতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তরুণীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
রাস্তা সংস্কারের দাবিতে শনিবার সকাল থেকেই মালদহের নালাগোলা রাজ্য সড়কের কলোনি এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা। তবে বামনগোলার বিডিও রাস্তা তৈরি করার আশ্বাস দেওয়ায় প্রায় তিন ঘণ্টা পর এই অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। বিডিওর লেখা মুচলেকায় বলা হয়েছে, “আগামী তিন মাসের মধ্যে গঙ্গাপ্রসাদ কলোনি থেকে মালডাঙা গ্রাম পর্যন্ত যে রাস্তা খারাপ অবস্থায় রয়েছে, তার কাজ শুরু হবে।” তবে এই ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতর থেমে নেই। রাজ্য সরকার ‘পথশ্রী’র মতো প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরেও কেন গ্রামীণ রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে পারবে না, সেই প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। পাল্টা তৃণমূলের বক্তব্য, এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে বিজেপির বিধায়ক রয়েছেন। সাংসদও বিজেপির। তার পরেও রাস্তা হল না কেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy