প্রতীকী ছবি।
এপ্রিল মাস। পূর্ণ লকডাউন চলছে। এর মধ্যে ঘরদোর সাফ করতে গিয়ে চোখে পড়ল, কোণে গুটিসুটি মেরে শুয়ে সাপটি। দেখেই আতঙ্কিত বাড়ির বউ। কোলের ছেলেকে নিয়ে ছুটে বার হলেন, এখনই ডাকতে হবে তাঁকে। ফোন গেল সঙ্গে সঙ্গে। কিছুক্ষণ পরে ইসলামপুর হাসপাতাল পাড়ায় স্কুটি চেপে লোহার রড হাতে হাজির হলেন তিনি। এবং চোখের সামনে দিয়ে সাপটাকে ধরে নিয়ে গেলেন।
সাপ ধরার কাজে কী ভাবে? হাসলেন নবনীতা উপাধ্যায়। বললেন, ‘‘নকশালবাড়ির চা বাগান এলাকায় বাড়ি ছিল। ছোটতে দেখতাম, গ্রামের লোক সাপ দেখলেই ধরে মেরে ফেলত। কষ্ট পেতাম। তখন থেকেই সাপ ধরার নেশা। বাবা কর্মসূত্রে ইসলামপুরে আসেন। ২০০৬ সাল থেকে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে সাপ ধরছি।’’
জীবনের প্ৰথম সাপটি ধরেছিলেন স্কুলের বারান্দায়। বলেন, ‘‘এই কাজে কত কটূক্তি শুনেছি! কিন্তু লক্ষ্য থেকে সরে যাইনি।’’ কেউটে, কালাচ, চন্দ্রবোড়া, গোখরোর মতো বিষধর তো বটেই, নির্বিষ সাপও ধরে এনে বন দফতরের হাতে তুলে দেন নবনীতা। বিজ্ঞান মঞ্চের ডালখোলার সম্পাদক তথা চিকিৎসক পার্থ ভদ্র বলেন, “ওঁর জন্য বহু সাপ প্রাণে বেঁচেছে।’’
তবে নবনীতার নিজের জীবনের ঝুঁকিও গিয়েছে প্রচুর। তিনি বলছিলেন, ‘‘দিন কয়েক আগেই চন্দ্রবোড়া ছোবল মেরেছিল। কোনও রকমে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি।’’ তাতেও উৎসাহে কমেনি তাঁর। বলছিলেন সাপেদের ‘অভ্যাস বদলের’ কথা। বলছিলেন, ‘‘লোকে জানে, সাপ শীতকালে ‘ঘুমোয়’। কিন্তু গত বছর শ্রীকৃষ্ণপুর হাইস্কুলে যখন সাপ বার হয়, পৌষের শীতেও ঘামছিলেন স্কুলের শিক্ষক আর পড়ুয়ারা। খবর পেয়ে সেখানে যাই। শেষে সাপটিকে উদ্ধার করে জঙ্গলে ছেড়ে দিই।’’ নবনীতার কথায়, ‘‘এখন জলাভূমি ভরাট করে তৈরি হচ্ছে বহুতল। জল-জঙ্গল কেটে ফেলা হচ্ছে। তাপমাত্রা বাড়ছে। তাই সাপের উপদ্রবও বাড়ছে।’’
শুধু সাপ ধরেই ক্ষান্ত নন তিনি, জনে জনে বুঝিয়ে বেড়ান— ওঝার কাছে নয়, সাপে কাটলে যান হাসপাতালে। সাপ ধরার জন্য কোনও ‘চার্জ’ নেই। তবে কেউ সাহায্য দিতে চাইলে না করেন না। সেই টাকা তুলে দেন পশুপ্রেমী সংগঠনের হাতে, অসুস্থ পশুপাখির চিকিৎসার জন্য। নবনীতার যুক্তি, ‘‘আমার ভয় হয়, টাকাপয়সা চাইতে শুরু করলে ওরা হয়তো আমাকে না ডেকে সাপ পিটিয়ে মেরে ফেলবে।’’ বন দফতরের ইসলামপুরের আধিকারিক নীলাদ্রিকিশোর রায় বলেন, ‘‘এই কাজের জন্য আমাদের দফতর থেকে ওঁকে একবার পুরস্কৃতও করা হয়েছে।’’ বাবা নীরেন এবং মা জয়শ্রীও মেয়ের কাজে খুশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy