দোকান ঘিরে কচিকাঁচাদের ভিড়। এক মনে চাউমিন তৈরি করছেন বছর তিরিশের যুবক। ‘‘সুব্রত কেনা-বেচা কেমন?’’ প্রশ্ন শুনে একগাল হেসে সুব্রত বসাকের উত্তর, ‘‘ভাল রবিউলদা। নমাজ পড়লেন?’’ মোথাবাড়ির প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক রবিউল ইসলামের জবাব, ‘‘নমাজ পড়েই তোর দোকানে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে হাজির হয়েছি। চাউমিন খেতে।’’ পাশে বাদাম, পাঁপড়, চপ-ঘুগনির পসরা সাজিয়ে বসেছেন নীলিমা সাহা, সান্ত্বনা সাহা। ইদের নমাজের পরে সেখানে ভিড় জমিয়েছেন আমিরুদ্দিন মোমিন, আলমগীর খানেরা। সোমবার এমন আবহেই ইদের মেলা চলল মালদহের মোথাবাড়ির বাঙিটোলা মাঠে।
তবে শুধু এ বার নয়, বছরের পর বছর ধরে এমন আবহেই মেলা হয়ে আসছে বাঙিটোলার মাঠে, জানান রবিউল, বুলবুল খান, নীলিমা সাহা, অজয় মণ্ডলের মতো এক ঝাঁক ক্রেতা-বিক্রেতা। স্থানীয়দের দাবি, ওই মাঠে ২২ বছর ধরে ইদের মেলা বসছে। মাঠ লাগোয়া ইদগাহে ইদের সকালে নমাজ পড়েন পঞ্চায়েতপাড়া, গোঁসাইহাট, জাহিদটোলা, আব্বাসটোলা, বানুটোলা, ঘাসিটোলার মানুষ। নমাজের পরে মেলায় উপচে পড়ে ভিড়। ফি বছর পসরা সাজিয়ে বসেন গীতা মোড়, পাঁচকড়িটোলা, আকন্দবাড়িয়া, গোলকটোলা, অমৃতির মতো গ্রামের বাসিন্দারা।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেলার ৪০টি দোকানে কেনা-বেচা চলে। সান্ত্বনা বলেন, “মেলায় প্রতিবারই দোকান দিয়ে ভাল ব্যবসা করেছি। এ বারও ভালই কেনাবেচা হয়েছে।” সুব্রত বসাক বলেন, “পুজোয় যেমন রোল, চাউমিন বিক্রি করি, তেমনই ইদেও দোকান দিই। ক্রেতারা আপনজনের মতোই। অন্য কিছু নিয়ে ভাবার সময় নেই।”
রবিউল, আলমগীরেরা বলেন, ‘‘কিছু লোক ভেদাভেদের চেষ্টা করে। বাঙিটোলার ইদের মেলা, তাদের সে চেষ্টায় জল ঢেলে দেবে।” মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “জেলা জুড়ে সুষ্ঠু ভাবে ইদ পালিত হয়েছে। পুলিশের টহলদারিও আছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)