সবুজ সংকেত পেলেই বাঘ আসবে বক্সায়। ফাইল চিত্র ।
বাঘ আসছে বক্সায়! বছরের পর বছর ধরে বাঘ হারিয়ে বাঘ শূন্য হয়েছিল বক্সা। ঠিক যেন নিজের মাথার মুকুট হারালো রাজা। এর মধ্যেই বিগত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরেই বাঘ-শূন্য বক্সায় ছয় থেকে আটটি বাঘ নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। বহু ক্ষেত্রে রাজ্য-কেন্দ্র সংঘাত থাকলেও এই ক্ষেত্রে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ শুরু করেছে রাজ্য ও কেন্দ্র। তবে মুখে বললেই তো আর হল না। বাঘ আনার ঝক্কি অনেক। প্রয়োজন সঠিক বন্দোবস্তেরও।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে জাতীয় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ (এনসিটিএ) ও ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়া এই গোটা কর্মকান্ডের দ্বায়িত্বভার নিয়েছে । তাদের সবুজ সংকেত মিললেই আনা হবে বাঘ। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে বিভাগীয় বাজেট পেশ করা হয়েছে। তবে খুব শীঘ্রই বক্সার জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আগমন ঘটবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধান মুখ্য বনপাল (বণ্যপ্রাণ) তথা চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন দেবল রায়।
তাই বাঘ আনার আগে পুরো বিষয়টির বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ যেমন, জায়গা নির্বাচন, বাঘ আনার পরিবেশের জন্য বাস্তুতন্ত্রের উন্নতি, সঠিক খাদ্যের জোগান রয়েছে কি না তা জানার জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হচ্ছে। খাদ্যের অভাবে বাঘ যেন লোকালয়ের খুব কাছে না চলে আসে সেদিকেও লক্ষ রাখছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলি। বাঘেদের নতুন পরিবেশে অভ্যস্ত করতে বক্সা জঙ্গলের একাংশে বিশাল তারজালি দিয়ে ঘেরা জায়গা বা এনক্লোজার তৈরি করা হচ্ছে। বেশ কিছুদিন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিলে তবেই নবাগত বাঘেদের এনক্লোজার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে বলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বক্সার যে এলাকাগুলিতে বাঘ থাকার কথা আছে, সেখানে খাদ্যাভাব লক্ষ হওয়ায় সেই জায়গাগুলিতে চিতল হরিণ ছাড়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এই বিষয়ে দেবল জানান, যে কোনও জঙ্গলের একটি কেন্দ্রীয় এলাকা এবং একটি গৌণ এলাকা থাকে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় এলাকা এই মুহুর্তে বাঘের জন্য কতটা প্রস্তুত সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।
তবে প্রশ্ন উঠে আসছে একটাই। কোথা থেকে আনা হবে এই বাঘেদের? জানা গেছে যে, বক্সার জঙ্গলের সঙ্গে মিল রয়েছে অসমের মানসের জঙ্গলের। তাই সেখান থেকেই আনা হতে পারে বাঘগুলিকে। তবে এই বিষয়ে কোনও চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলেও দেবল জানিয়েছেন।
তবে আপাত দৃষ্টিতে সোজা মনে হলেও বাঘ আনার কাজ বাস্তবায়িত করতে বিভিন্ন সমস্যারও মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বক্সায় বাঘের জন্য যে এলাকাগুলির নির্বাচিন করা হয়েছে সেখানে মূলত আদি বাসিন্দাদের বাস। বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে ওই এলাকায়। এই পরিস্থিতে সেখানে বাঘ আনা খুব সহজ হবে না বলেই মনে করছেন আধিকারিকরা।
এই প্রসঙ্গে দেবল জানান, ‘‘বিষয়টি রাজ্য সরকারের নীতির উপরে নির্ভর করছে । রাজ্যের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। তবে শুধু বক্সা নয়, ভারতের অনেক গভীর অরণ্যেই মানুষের বাস রয়েছে। তাঁরা না চাইলে কেউ জোর করে তাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করতে পারবে না।’’ তবে পুনর্বাসন কেন্দ্র করে রাজ্য এবং কেন্দ্রের বহু স্কিম রয়েছে এবং তাতে আখেরে এলাকাবাসীরাই লাভবান হবেন বলেও তাঁর দাবি।
তথ্য অনুযায়ী বক্সায় শেষবার বাঘের দেখা মিলেছিল ১৯৯৯ সালে। তারপর দীর্ঘ ২৩ বছর পর, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর হঠাৎই বন দফতরের ক্যামেরায় ধরা পড়ে একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। তার পর থেকে বক্সার আয় প্রায় আড়াই গুণ বেড়ে গেছে । সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছয় থেকে আটটি বাঘের আগমন ঘটলে গোটা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে বক্সা একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বলেও আশার আলো দেখছে বন দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy