কাজের বরাত পাইয়ে দেওয়া নিয়ে যাতে কোনও অভিযোগ না ওঠে, সে জন্য তাঁর দফতরে ‘ই-টেন্ডার’ প্রথায় জোর আনা হবে বলে জানিয়ে দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে দিনভর কয়েক দফায় বৈঠকের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে রবীন্দ্রনাথবাবু এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘‘অতীতেও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছে। আগামী দিনেও করবে। আগেও ই টেন্ডার মারফৎ কাজ হয়েছে। সেই প্রক্রিয়ায় আরও গতি আনা হবে।’’ কিন্তু, ই টেন্ডার হলেও ঘুরপথে বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তো উঠতে পারে। তা রুখতে কী করবেন সেই প্রশ্নে রবীন্দ্রনাথবাবুর জবাব, ‘‘যাঁর যোগ্যতা রয়েছে, তিনিই কাজ পাবেন। আগামীতেও হবে না।’’
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী হয়ে রবীন্দ্রনাথবাবু এ দিনই উত্তরকন্যায় প্রথমবার গেলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদা। দলীয় কর্মীদের মধ্যে যাতে কোনও ভুল বার্তা না পৌঁছয় তাই গোড়া থেকেই তিনি প্রাক্তন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের প্রশংসা করেছেন। বারবার বলেছেন, আগেও এই দফতর ভাল কাজ করছিল। এ বারও সেই গতি ধরে রাখতে হবে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের হাতে আগের মন্ত্রিসভা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ দিয়েছিল। সেই কাজের কথা ভোটের সময় বারবার শাসক দলের নেতারা প্রচারে বলেছেন। সেই ধারাও এই ভাবে অব্যাহত রাখলেন কোচবিহারের রবীন্দ্রনাথবাবু।
তবে এ বার শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের দায়িত্ব কে নেবেন, তা নিয়ে এ দিনও নানা জল্পনা চলেছে। ওই দায়িত্ব ছিল গৌতম দেবের হাতে। এখন নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পরে কাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হবে তা একনও পরিষ্কার নয়। একটি অংশের বক্তব্য, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর হাতেই আগে এসজেডিএ থাকায় লাভই হচ্ছিল। কিন্তু কোচবিহারের রবীন্দ্রনাথবাবুর হাতে সে দায়িত্ব দেওয়া হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। এসজেডিএ-তে নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সে কারণেই প্রথম দিনেই রবিবাবু ই টেন্ডারের কথা বলে দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। মুখেও তিনি বলেছেন, ‘‘অফিসারদেরও মাথা উঁচু করে কাজ করতে বলেছি। অন্যায়ের সঙ্গে আপসের কোনও প্রশ্নই নেই। সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছি।’’ তাতে খুশি আধিকারিকরাও।
বিভিন্ন লোকদের সঙ্গে দেখা করা, মন দিয়ে তাঁদের সমস্যার কথা শোনা, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাঁরই ফাঁকে কথা সেরে নিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। নাগরাকাটার বিধায়ক শুক্রা মুণ্ডা এদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করে তাঁর এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন। বিশ্রাম বলতে ট্রেন থেকে নেমে উত্তরকন্যার বাংলোতে ৩০ মিনিটে স্নান, খাওয়া সেরে নিতে দেখা গিয়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে। আধিকারিকদের একাংশ জানিয়েছেন, বিভিন্ন জিনিস বুঝে নিতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তাঁকে জানানো হয়েছে। মন দিয়ে সব শুনে কর্মীদের কোথায় কোনও সমস্যা হলে জানাতে বলেছেন। হেসে কথা বলেছেন। স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
এ দিন সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের উত্তরবঙ্গ শাখার চেয়ারম্যান এবং কর্মকর্তাদের কয়েকজন। তাঁরা ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। কিছুক্ষণ কথা বলেন। উত্তরকন্যায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন নকশালবাড়িতে ফুলচাষে যুক্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কয়েকজন প্রতিনিধি। নিজেদের চাষ করা জারবেরা ফুল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর হাতে তুলে দিতে পেরে তাঁরা খুশি।
দীর্ঘ দিন ধরে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে কাজ করলেও, মন্ত্রী পদ পাননি রবীন্দ্রনাথবাবু। এ বার সেই পদ পাওয়ার পরে তিনি যে বেশ হাত খুলেই কাজ করবেন, তেমন বার্তাই দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy