—প্রতীকী চিত্র।
সাড়ে ১১ হাজার ভোট গেল কোথায়? দলের জলপাইগুড়ি জেলা নেতৃত্বের কাছে তা জানতে চাইল বিজেপি। এই ‘ভোট ক্ষয়ের’ কারণ কী তা-ও জানাতে হবে নেতৃত্বকে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ। শনিবার বহু চেষ্টা করেও বাপির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিজেপি সভাপতি-নির্ভর দল নয়। কোনও এক জনকে সামনে রেখে, নির্বাচনী লড়াইয়ে নামে না। সকলের মিলিত প্রয়াসে নির্বাচনী লড়াইয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিছু ভুল-ত্রুটির কারণে জয় অধরা থেকে গিয়েছে। দল সময় মতো সে সব ভুল-ত্রুটি শুধরে নেবে।’’
দলীয় সূত্রে খবর, এ বারে উপনির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পরে, সঙ্ঘের তরফে ৮২টি বুথের তালিকা বিজেপি নেতাদের দেওয়া হয়েছিল। গত বিধানসভা এবং পঞ্চায়েতের নিরিখে সে বুথগুলি ‘দুর্বল’ বলে চিহ্নিত করে ওই এলাকায় শক্তি বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছিল সঙ্ঘ। বিজেপির জেলা নেতারা ভোটের পরে, ‘সব ঠিক আছে’ জানিয়ে রিপোর্ট দিয়েছিলেন। গণনায় দেখা গিয়েছে, ওই বুথগুলিতে বিজেপি অনেকটাই পিছিয়েছে। তাতেই প্রশ্ন উঠেছে, জেলা নেতারা সংগঠন সামলাতে কতটা দক্ষ? কর্মী-সমর্থকের একাংশের দাবি, এই নেতৃত্বকে রেখে লোকসভা ভোটে গেলে, জলপাইগুড়িতে চরম মাসুল দিতে হবে।
বিজেপি নেতাদের একাংশের দাবি, বছরভর জেলা নেতারা সংগঠন প্রসারের কাজ না করে দলের ভিতরের ‘গোষ্ঠী’ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। উপনির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার দিন বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী এবং যুব মোর্চার সভাপতি পলেন ঘোষের বিরুদ্ধে ‘বিক্ষুব্ধ’ বিজেপি নেতা আলোক চক্রবর্তীকে রাস্তায় ফেলে লাথি মারার অভিযোগ উঠেছিল। সে ছবি সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়েও পড়ে। তা নিয়ে জনমানসে প্রতিক্রিয়া হয়। ধূপগুড়ি ভোটে বিষয়টিকে প্রচারের কাজে লাগায় তৃণমূল। তার পরেও রাজ্য নেতারা ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, বাপি-পলেনকে সতর্কও করেননি বলে দাবি। তার ফলেও বিজেপির কিছু ভোট কমেছে বলে দলের একাংশ মনে করছেন। এ দিন অলোক বলেন, ‘‘অনেক কিছুই মানুষ মেনে নেয়নি। এর পরে, রাজ্য নেতারা জেলায় এলে, হয়তো কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়বেন। ওঁরা চোখে দেখছেন না, কানে দেখছেন।’’
অভিযোগ, ধূপগুড়ি ভোটের প্রচারে ব্লক বা অঞ্চল নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করেননি জেলা নেতারা। জলপাইগুড়ি শহর-সহ আশপাশের জেলা থেকে কর্মীদের দিয়ে প্রচার চালানো হয়েছে, তাঁরাই স্থানীয় নেতাদের উপরে ‘ছড়ি ঘুরিয়েছেন’ বলেও দাবি। জেলা সভাপতিকে সে সব বললেও তিনি গ্রাহ্য করেননি বলে অভিযোগ। এক স্থানীয় নেতার কথায়, ‘‘জেলা সভাপতিকে ফোনে পাওয়াই যায় না, পেলেও তিনি পুরো কথা শোনেন না। সামনে বললেও ধৈর্য ধরে শুনতে চান না।’’
ভোটের ঠিক এক দিন আগে প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক মিতালী রায়কেও দলে যোগদান করানো নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বলে দাবি। বিশেষত মিতালীর বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তোলার অভিযোগ থাকায়, দলের কর্মীদের একাংশের প্রশ্ন, যাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে, তাঁকেই কেন দলে নেওয়া হল? এর ফলে, কর্মীদের একাংশও দলের প্রার্থীকে ভোট দেননি বলে দাবি। কেন জেলা সভাপতি বা নেতৃত্ব একতরফা ভাবে মিতালীকে যোগদান করালেন, তার নেপথ্যেও ‘রহস্য’ রয়েছে বলে দাবি বিজেপি সূত্রের। মিতালীর নিজের বুথেই পর্যদুস্ত হয়েছে বিজেপি। সেই বুথে তৃণমূল পেয়েছে ৪৮৪টি ভোট। বিজেপি পেয়েছে ২৮৮। মিতালীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডেও পিছিয়ে গিয়েছে বিজেপি। গত বিধানসভায় এই ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। মিতালী বলেন, ‘‘সবে বিজেপিতে যোগ দিয়েছি। সে কথা সকলের জানতেও সময় লাগবে। আগামী ভোটে দেখা যাবে।’’
হারের পরে জলপাইগুড়িতে প্রশ্ন উঠেছে নেতারা কোথায়? দিনভর কর্মী-সমর্থকেরা জেলা নেতাদের দেখা পাননি।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীকে ফোন করলে একটাই বার্তা শোনা গিয়েছে, ‘‘যাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছেন, তাঁর মোবাইল বন্ধ রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy