দুশ্চিন্তায়: ছেলে-মেয়েকে নিয়ে শোকস্তব্ধ হারুর স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র
মন্দিরের পাশেই চায়ের দোকান। সেই মন্দিরেই ৪৫ ফুটের কালী প্রতিমা পুজো হয়। দোকান বন্ধ করে প্রতি বছরের মতো সেই পুজোয় মেতে ওঠেন হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডীর বাসিন্দা হারু দাস (৪৮)। এই পুজোর বিসর্জন খুবই বিখ্যাত। প্রতিমাকে বাঁশের কাঠামোর সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয় ৫০০ মিটার দূরের একটি দিঘিতে। এই রাস্তাটি বাজারের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে হাজার হাজার লোক প্রতিমার রশি ধরে টান দেন। রবিবার সেই সময়ই প্রতিমার ওই বিশাল কাঠামোর সামনে পড়ে যান হারু। তাঁর গায়ের উপরে গিয়ে পড়ে প্রতিমার কাঠামো। তাতে পিষ্ট হয়ে মারা যান তিনি। বাড়ির একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তি ছিলেন হারু। তাঁর মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন স্ত্রী ইতি দাস, বৃদ্ধা মা নন্দরানি। অসহায় এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন বুলবুলচণ্ডী কালী পুজো কমিটি এবং ব্লক প্রশাসনের কর্তারা।
সোমবার বিকেলে হারুর দেহ বাড়িতে পৌঁছতেই ভিড় জমাতে শুরু করেন গ্রামবাসীরা। পুজোর বিসর্জনে কোন ত্রুটি ছিল কি না, তা তদন্তের দাবি তুলেন তাঁরা। একই সঙ্গে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হবিবপুরের বিধায়ক বিজেপির জুয়েল মুর্মু। তিনি বলেন, “বুলবুলচণ্ডীর কালী পুজোয় মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। বহু বছর ধরে বিশালাকার কালী প্রতিমা বিসর্জন হয়ে আসছে। সেই বিসর্জন দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান। অথচ, বিসর্জনে পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল না। যে ক’জন পুলিশকর্মী ছিলেন, তাঁরাও যথেষ্ট তৎপর ছিলেন না। এখানে পুলিশের আরও তৎপর হওয়া উচিত ছিল।” পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি বলে জানিয়েছেন হবিবপুর থানার আইসি ত্রিদীপ প্রামাণিক। তিনি বলেন, “অভিযোগ এখনও হয়নি। তবে দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগের বিষয়ে ত্রিদীপ বলেন, ‘‘শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল। ভিড়ের মাঝখানে তাও দুর্ঘটনা কী ভাবে ঘটল আমরা দেখছি।’’
বুলবুলচণ্ডী বাজারে ৭১ বছর ধরে স্থায়ী মন্দিরেই বিশালাকার দেবী মূর্তির পুজো হয়। আর পুজোকে ঘিরে ১৫ দিন ধরে চলে মেলা। তারপরে বাজার সংলগ্ন ডুবা পাড়ার মাঠের জলাশয়ে রথের মতো করে প্রতিমা টেনে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। সেখানে হারুও প্রতিবার যোগ দিতেন। এ বার ভিড়ের মধ্যে তিনি প্রতিমার সামনে পড়ে যান।
হারুর দুই ছেলে-মেয়ে। তাঁর ছেলে-মেয়েরা প্রথম এবং তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। মা নন্দরানি ৮০ বছরের বৃদ্ধা। পঞ্চাশোর্ধ দিদিও স্বামী মারা যাওয়ার পর হারুর কাছেই থাকেন। কালী মন্দিরের পাশেই চায়ের দোকান করেই কোনও রকমে চলে তাঁদের সংসার। নন্দরানি বলেন, “ছোট থেকেই বড় কালীর বিসর্জন যায়। কখনও কিছু হয়নি। এ বার কী করে এমন হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারছি না।” ছেলে-মেয়েদের কিভাবে মানুষ করবেন, তা ভেবেই পাচ্ছেন না হারুর স্ত্রী ইতি। তিনি বলেন, “আমার পরিবারটাই জলে ভেসে গেল।” তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে সব রকম ভাবে সাহায্য করা হবে বলে জানিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তা সুবোধ রায়, বিনোদ প্রসাদেরা। তাঁরা বলেন, “সব রকম ভাবে আমরা পরিবারটিকে সাহায্য করব।” হবিবপুরের বিডিও শুভজিৎ জানা বলেন, “পরিবারটি যাতে সরকারি যাবতীয় সুবিধে পায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy