করলা নদীর জলে ভেসেছে ঘরবাড়ি। বিছানা বালিশ কাঁধে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। মঙ্গলবার জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল
চুয়ান্ন বছর আগের আতঙ্কের স্মৃতি ফিরে এল জলপাইগুড়ি শহরে। ১৯৬৮ সালে প্রবল দুর্যোগে তিস্তা আর করলা ভাসিয়েছিল গোটা শহরকে। সে বার ৭২ ঘণ্টায় ১১২০ মিলিলিটার বৃষ্টি হয়েছিল জলপাইগুড়িতে। এ বার ভাসাল করলা এবং টানা বৃষ্টি। জলযন্ত্রণায় নাজেহাল অবস্থা জলপাইগুড়ি পুর এলাকার নাগরিকদের। কারও বাড়ির উঠোনে কোমরজল, কোনও বাড়ির ঘরের মধ্যে জল। শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছেঅনেককে। নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে পুরসভা মাস্টার প্ল্যানের আশ্বাস দিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
করলা নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। এ দিন সকাল থেকেই জল বাড়তে থাকে করলায়। তবে, জলস্তর কিছুটা বাড়লেও তিস্তা এখনও স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে সেচ দফতর। তিস্তার দোমহনী থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সঙ্কেত জারি করা হয়েছে। সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত দত্ত বলেন, ‘‘পাহাড়ে ও সমতলে এক সঙ্গে বৃষ্টি হলে তিস্তার জলস্তর বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে, এই মুহূর্তে তিস্তার জলস্তর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাঁধের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
গত ৪৮ ঘণ্টায় শহরে ৩৯৩.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আজ, বুধবারও ভারী বৃষ্টির সর্তকবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। শহরের একাধিক ওয়ার্ড জলমগ্ন। জল জমে আছে শহরের নিউটাউন পাড়া, মোহন্ত পাড়া, অরবিন্দ নগর, পান্ডা পাড়া, জয়ন্তী পাড়া, মহামায়া পাড়া, স্টেশন রোড-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায়। দিনভর বৃষ্টির জেরে জনজীবন ব্যাহত। রাস্তাঘাট ফাঁকা। হাতেগোনা কয়েকটি টোটো চলছে শহরের কিছু রাস্তায়। নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় বৃষ্টির জমা জল ধীর গতিতে বার হচ্ছে। নিউটাউন পাড়া ও মহামায়া পাড়ায় কোমরজল জমে আছে। অনেকেই পড়শির দোতলায় আশ্রয় নিয়েছেন। দিনবাজারে সন্ধের পর করলার জল ঢুকে যায়। মাছবাজার বসে দিনবাজার সেতুতে।
এ দিন জলবন্দি নাগরিকদের উদ্ধার করতে সিভিল ডিফেন্সের সঙ্গে স্পিড বোট নিয়ে এলাকায় যান পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর পৌষালি দাস। স্পিড বোটের সাহায্যে জলবন্দি জনাচল্লিশ নাগরিককে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে আনা হয়। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের পরেশ মিত্র কলোনি ও নিচ মাঠ এলাকাতেও চলে উদ্ধারকাজ। বন্যাদুর্গতদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। করলাপাড়ের একাধিক বাড়ি জলের তলায় তলিয়ে গিয়েছে। জলবন্দি কয়েকশো মানুষ।
বিরোধীদের অভিযোগ, মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে শহরের জলনিকাশি ব্যবস্থা উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে তা হয়নি। টাউন ব্লক কংগ্রেস সভাপতি তথা ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অম্লান মুন্সি বলেন, ‘‘পুরসভার মাস্টার প্ল্যান জলের তলায়।নাগরিকদের বোকা বানানো হচ্ছে।’’ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শহরে এমন বৃষ্টি ১৯৬৮ সালের পর হল। পরিস্থিতির উপর আমরা নজর রাখছি। নাগরিকদের শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার, ত্রিপল দেওয়া হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy