ফাঁসিদেওয়ায় বিক্ষুব্ধ আইএনটিটিইউসি সমর্থিত শ্রমিকেরা। — বিশ্বরূপ বসাক
তৃণমূলের নেতৃত্বে শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে রাজ্যের অন্যতম কেক-বিস্কুট প্রস্তুতকারী সংস্থার একটি কারখানায় অচলাবস্থা দেখা দেয়। বুধবার ভোরে শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়ার মহানন্দা ক্যানেল লাগোয়া কারখানার ঘটনা। কয়েকশো শ্রমিক তৃণমূলের নেতৃত্বে নানা অভিযোগ তুলে ভোর ৬টা থেকে ১০টা অবধি চার ঘণ্টার কর্মবিরতি করে। পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। বিকালে কলকাতা থেকে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা শিলিগুড়ি পৌঁছে আলোচনায় বসেন। সেখানে সমস্যা মিটেছে বলে দু’পক্ষের দাবি। সংস্থার তরফে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে কিছু জানানো হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন্ধ, অবরোধ আন্দোলনের বিপক্ষে সব সময় থাকার নির্দেশ দিলেও তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের আন্দোলনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। ওই নেতাদের দাবি, কারখানা কতৃর্পক্ষ শ্রমিক বিরোধী কাজকর্ম করছিল। স্থানীয়দের ছাঁটাইয়ের চক্রান্ত চলছে। বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামতে হয়েছে। সেখানে কারখানা বন্ধ বা অবরোধের প্রশ্নই নেই। শ্রমিকেরা নিজেরাই কর্মবিরতি করেছেন মাত্র।
কারখানার কয়েকজন অফিসারের দাবি, প্রতি মাসে নিয়ম মেনে শ্রমিকদের ২৪ দিন কাজ করার কথা। সেখানে অনেকেই কম দিন কাজ করেছেন। তেমনই, নির্দিষ্ট সময়ের কম কাজ করার উদাহরণও রয়েছে। এমন অনেককে কাজ থেকে গত কয়েক মাসে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতেই অনেকের ক্ষোভ থাকতে পারে। তারাও বিক্ষোভের পিছনে থাকতে পারেন। শ্রমিক কল্যাণের কোনও খামতি নেই সংস্থায়। সেখানে নেতাদের নিয়ে শ্রমিক সংগঠন ধাঁচে আন্দোলনের মানে হয় না। উল্লেখ্য, কারখানায় কোনও শ্রমিক সংগঠন নেই। শ্রমিকদের কোনও সমস্যা হলে সরাসরি কর্তৃপক্ষ দেখেন। বিষয়টি শুনেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবে’ও। মন্ত্রী বলেন, ‘‘মালিকপক্ষ টেলিফোন করেছিলেন। ওঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে। শ্রমিকদেরও নানা অভিযোগ রয়েছে। তবে কোনও সমস্যা হবে না। আলোচনায় সব মিটে যাবে।’’
ওই সংস্থার উৎপাদিত পণ্য উত্তর পূর্ব ভারত-সহ দেশের বিভিন্ন অংশে জনপ্রিয়। ২০০৯ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে শিলিগুড়িতেও কারখানা গড়ে সংস্থাটি। এদের উলুবেড়িয়া, সাঁকরাইলেও কারখানা রয়েছে। পরবর্তীতে তৃণমূল সরকারের আমলে সংস্থার কাজকর্ম আরও ছাড়ায়। ফাঁসিদেওয়ার কারখানাটি থেকে গোটা উত্তর পূর্ব ভারত, সিকিম-সহ নানা প্রান্তে সংস্থার প্রোডাক্ট পাঠানো হয়। ফাঁসিদেওয়ার কংগ্রেসের বিধায়ক সুনীল তিরকে বলেন, ‘‘রাজ্যে এমনিতেই কলকারখানা হচ্ছে না। সেখানে আন্দোলন করে অচলাবস্থা তৈরি করলে তো মুশকিল। শাসক দলের নেতাদের বিষয়টি ভাবতে হবে।’’
শ্রমিকদের দাবি, কারখানায় ৩০০ উপর শ্রমিক আছেন। তার মধ্যে অর্ধেকই মহিলা। ৬ থেকে সাড়ে ৭ হাজারের মতো সকলে মাসে মজুরি পান। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের ছাঁটাই করা শুরু করেছে। বাইরে থেকে লোক আনা হচ্ছে। মালতি বিশ্বাস, মায়া রায়, শিবেন বর্মনের জানান, মহিলাদের পাকেজিং এর কাজ। তাঁদের অভিযোগ, সেখানে শৌচালয় সাফাই, দিয়ে মাল ওঠানো-নামানো করানো হচ্ছে। ৯/১০ ঘন্টা কাজ করালেও বেতন বেশি মেলে না। প্রতিবাদ করে কাজ ছাড়ার কথা বলা হয়। এ দিন ফাঁসিদেওয়া জালাম নিজামতারা এলাকার তৃণমূল সভাপতি মইজুদ্দিন মহম্মদ আন্দোলনে ছিলেন। ওই নেতার দাবি, ‘‘কাজে ফাঁকি দেওয়ার বিষয় নেই। গ্রামের লোকজন অনেক সময় কাজে আসেন না। তাই কয়েক মাস আগে কয়েক জনের কাজও যায়। এর মধ্যে মহিলাদের প্যাকেজিংয়ের বদলে অন্য কাজ করানো হচ্ছিল। সব মিলিয়ে শ্রমিকেরা ক্ষেপে যান। স্থানীয় বাসিন্দা হিসাবে তাই আমরা ওদের পাশে দাঁড়াই।’’
মালিকপক্ষের তরফে অবশ্য শ্রমিকদের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করা হয়েছে। কারখানার কয়েকজন অফিসার জানান, পুজোর মরসুমে কাজের চাপ বেশি থাকে। সবাইকে টানা কাজ করতে হয়। এদিন বিকালে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। মালিকপক্ষের তরফে উৎপল চৌধুরী বলেন, ‘‘শ্রমিক কল্যাণের আমাদের কোনও খামতি নেই। শ্রমিকদের কিছু অভিযোগ ছিল। আলোচনায় সমস্যা মিটেছে। শ্রমিকেরা স্বাভাবিকভাবেই কাজকর্ম করবেন।’’ দার্জিলিঙের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘শ্রম দফতরের অফিসারদের নজর রাখার কথা বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy