জলপাইগুড়ির কুমোরপাড়ায় চলছে কাজ। —সন্দীপ পাল
পরিশ্রম প্রচুর৷ কিন্তু সেই অনুযায়ী আয় নেই৷ আর তাই প্রতিমা গড়তে উৎসাহ হারাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম৷ ফলে জলপাইগুড়িতে প্রতিমা শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েই চিন্তায় এখানকার মৃৎশিল্পীরা৷
বাতাসে শিউলি ফুলের সুবাস৷ ফুটেছে কাশফুল৷ জোড় কদমে চলছে পুজোর কাউন্ট ডাউন গোনার কাজ৷ ফলে এখন চরম ব্যস্ততা মৃৎশিল্পীদের মধ্যেও৷ নাওয়া-খাওয়া ভুলে তাঁরা ব্যস্ত প্রতিমা গড়তে৷ কিন্তু এ সবের মধ্যেই যেন চোরাস্রোতের মতো মনে ঢুকে পড়ছে একটা আশঙ্কাও৷
মাসকালাইবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মৃৎশিল্পী জীবন পাল তো বলেই দিলেন, প্রতিমা গড়েই তাঁদের সারা বছর সংসার চলে ৷ বাড়িতে চার ছেলে৷ তারাও জানে ৷ অথচ, চার জনের এক জনের মনেও বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই এই কাজে আসার ৷ অথচ, বাজারে এই কাজের জন্য এখন শ্রমিকও মেলে না৷ তিনি বলেন, ‘‘তাই এ বছরও জোড় করে চার ছেলেকে নামিয়েছি, আমায় সাহায্য করার জন্য৷ আগামীবার থেকে এটা হবে কি না জানি না৷”
দিশারী ক্লাবের কাছে নিজের নিজের কারখানায় প্রতিমা গড়েন মৃৎশিল্পী রতন পাল৷ বললেন, প্রতিমা গড়ার জন্য এখন আর কারিগর পাওয়া যায় না৷ আমরা দুই ভাই জোর করে তবুও কাজটা করে যাচ্ছি৷ জানি না, আর কত দিন এ ভাবে টানতে পারব৷ জলপাইগুড়ির মৃৎশিল্পীদের কথা, কয়েক বছর আগেও এই শিল্পে এত সমস্যা ছিল না৷ কিন্তু এখন যত দিন যাচ্ছে, ততই যেন সমস্যা বেড়েই চলছে৷ তাঁদের কথায়, মাটি, খড় থেকে শুরু করে প্রতিমা তৈরির সব উপকরণেরই দাম দিনকে দিন বেড়েই চলছে৷ অথচ, বাড়ছে না মূর্তির দাম৷ রতনবাবুর কথায়, “ক্লাবের উপরই আমাদের ব্যবসা দাড়িয়ে৷ কিন্তু এখানে বড় ক্লাব মাত্র কয়েকটা৷ তার উপর বিগ বাজেটের পুজো হলে ক্লাবগুলি হয় শিলিগুড়ি থেকে প্রতিমা আনছে, কিংবা দক্ষিণবঙ্গ থেকে শিল্পী এনে প্রতিমা গড়ছে৷ আর বাকি যে সব ক্লাব থাকছে, এখন আর সে ভাবে চাঁদা ওঠে না বলে কম দামে প্রতিমা চাইছে ৷ যার ফলে মার খাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা৷”
আর জীবনবাবুর এক ছেলে বাবাই পালের বক্তব্য, ‘‘গত কয়েক বছরে বাবার সঙ্গে কাজ করে দেখেছি, প্রতিমা গড়তে অমানুষিক পরিশ্রম হয়৷ কিন্তু সেই অনুযায়ী আয় হয় না৷ আর তাই ভবিষ্যতে এই কাজে আমার কোন উৎসাহ নেই৷’’
জলপাইগুড়ি জেলা মৃৎশিল্পী সমিতির সম্পাদক রঞ্জিৎ বর্মন বলেন, সে জন্যই কয়েক বছর ধরে তাঁরা দাবি জানিয়ে আসছেন, মৃৎশিল্পের নিয়ে জেলায় একটি স্কুল গড়ার৷ কিন্তু জায়গা খুঁজে না পাওয়ার জন্যই এখনও সেটা গড়ে ওঠেনি৷ তাঁর দাবি, সেটা হলে, বর্তমান প্রজন্মও এই শিল্পে উৎসাহিত হবে৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy