Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

বেহাল, নিকাশি সমস্যায় জেরবার আলিপুরদুয়ার

হাইড্র্যান্ট দখল করে তার উপর পিলার তুলে বাড়িঘর নির্মাণ হচ্ছে। রাস্তার দু’পাশের নিকাশি ড্রেনের উপর গড়ে উঠেছে দোকান। অনেক জায়গায় ড্রেনের পরিসর ছোট হয়ে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫১
Share: Save:

হাইড্র্যান্ট দখল করে তার উপর পিলার তুলে বাড়িঘর নির্মাণ হচ্ছে। রাস্তার দু’পাশের নিকাশি ড্রেনের উপর গড়ে উঠেছে দোকান। অনেক জায়গায় ড্রেনের পরিসর ছোট হয়ে গিয়েছে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, অল্প বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ছে শহরের অধিকাংশ ওয়ার্ড। অথচ পরিস্থিতি বদলাতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। পুরসভা, সেচ দফতর থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিকাশি ড্রেনগুলির অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। শহরবাসীর ক্ষোভ, বিভিন্ন মহল থেকে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে জেলা শহরের নিকাশি ঢেলে সাজানোর দাবি জানানো হলেও সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

অভিযোগ, দু’তিন ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হলেই শহরের অধিকাংশ ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। এর উপর ভোলারডাবরি এবং আলিপুরদুয়ার জংশনের বৃষ্টির জল রেলের সাতটি কালভার্ট দিয়ে শহরে ঢুকে পড়ায় সমস্যা আরও জটিল হচ্ছে। কালজানি নদীতে জল নামানোর জন্য শহরের বিভিন্ন জায়গায় কালজানি বাঁধে মোট ২২টি স্লুইস গেট রয়েছে। কালজানি নদীর বেড উঁচু হয়ে পড়ায় তা দিয়েও জল নামছে না সঠিক ভাবে। এ ছাড়া পাম্পের সাহায্যে পুরসভা জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে থাকে। গত বছরও তিনটি পাম্প মেশিন ভাড়া করে এনেছিল পুরসভা। কিন্তু কয়েক বার শহর জলমগ্ন হলেও এ বছর সে ব্যবস্থা করা হয়নি।

শহরবাসীরা জানান, ‘‘কলেজ পাড়া থেকে নিউটাউন ও নেতাজি রোড হয়ে নোনাই নদী পর্যন্ত যে হাইড্র্যান্ট রয়েছে। সেটি দিয়ে শহরের ২, ৩, ৪, ৭, ১৪, ১৬, ২০ ওয়ার্ডের জল নামানো হয়। অন্য একটি হাইড্র্যান্ট অরবিন্দ নগর থেকে সূর্যনগর, বিধানপল্লি হয়ে কালজানি নদীতে মিশেছে। ওই ড্রেন দিয়ে ১, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৫ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের জল নামানো হয়। এ ছাড়া বিএফ রোডের দু’পাশ দিয়ে দু’টি ড্রেন রয়েছে। কিন্তু সব ক’টি ড্রেনের উপরই পাকা পিলার বা কাঠের খুঁটি বসিয়ে অবৈধ নির্মাণ হওয়ার ফলে ওই ড্রেন দিয়ে সঠিক ভাবে জল যাচ্ছে না। এর ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ছে শহরের অধিকাংশ ওয়ার্ড।

আলিপুরদুয়ার পুরসভার চেয়ারম্যান আশিষ দত্ত বলেন, ‘‘শহরের নিকাশির জন্য আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি। ড্রেনগুলির উপর পিলার বসিয়ে অথবা খুঁটি দিয়ে বাম আমলে দোকান বাড়ি তৈরি করা হলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা ক্ষমতায় এসে সেগুলি নিয়ে আলোচনা করছি। এ ছাড়া শহরবাসীর একাংশ ড্রেনের মধ্যে আবর্জনা ফেলায় সেগুলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’’ তিনি জানান, পুরসভার উদ্যোগে লাগাতার ড্রেন সাফাই করা হচ্ছে। শহরের জমা জল নিষ্কাশনের জন্য পাঁচটি পাম্প মেশিন কেনার অর্ডারও দেওয়া হয়েছে। আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসু ক্ষোভের সঙ্গে জানান, ‘‘নিকাশি দখলের বিরুদ্ধে মুখ খুললে পাড়ার মস্তান ও রাজনৈতিক দাদাদের হুমকি শুনতে হয়। মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা উন্নয়নের দাবি জানাচ্ছি।’’

আলিপুরদুয়ার পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা সিপিএম কাউন্সিলর অনিন্দ্য ভৌমিক বলেন, ‘‘নিকাশির সমস্যা দূর করতে হলে রেল দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে রেল লাইনের পাশ দিয়ে হাইড্র্যান্ট বানিয়ে সমস্ত জল নোনাই নদীতে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া জেলা শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে সবার আগে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা দরকার।’’

আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন আরএসপি বিধায়ক নির্মল দাস নিজেও এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমি আলিপুরদুয়ার জেলা হওয়ার অনেক আগেই এ ব্যাপারে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করার জন্য বিধানসভায় সরব হয়েছি। কিন্তু সে দাবি আজও পূরণ হয়নি। এই সমস্যা মেটাতে পুরসভা এবং অন্যান্য সমস্ত দফতরের এক মত হওয়া জরুরি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy