ভাঙাচোরা: হিলি যেতে এমনই জাতীয় সড়ক পার হতে হয়। কামারপাড়ায়। ছবি: অমিত মোহান্ত।
দৃশ্য এক: বুনিয়াদপুরের বাসিন্দা রঞ্জন সরকার সরকারি বাসের পিছনের সিটে বসে বালুরঘাট যাচ্ছিলেন। বাসটি ফুলবাড়ির কাছে আসতেই জাতীয় সড়কের উপরে থাকা একটি গর্তে চাকা পড়ে যায়। এমন ঝটকা লাগে যে রঞ্জনবাবু সিট থেকে দু’হাত উঁচুতে লাফিয়ে ওঠেন। বাসের রডে মাথা লেগে জখম হন তিনি।
দৃশ্য দুই: জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থার কথা জেনে গঙ্গারামপুর-তপন রাজ্য সড়ক ধরে বালুরঘাট যাচ্ছিলেন বাপি দাস। নয়াবাজার পেরোতেই গোটা রাস্তার গর্তে চাকা পড়ে। টায়ার ফেটে যায় বাপিবাবুর গাড়ির। চরম দুর্ভোগে পরে বিরক্তির সুরে বাপি বলেন, ‘‘এখানে রাস্তায় বের হওয়াটাই একটা ঝকমারি।’’
উপরের দু’টি ছবিতেই বোঝা যায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জাতীয় ও রাজ্য সড়কের বর্তমান কী অবস্থা! জেলার সড়কগুলির এ হেন বেহাল দশা নিয়ে তাই তিতিবিরক্ত জেলাবাসী। জেলার উপর দিয়ে বুনিয়াদপুর থেকে গঙ্গারামপুর হয়ে বালুরঘাট ঘুরে হিলি সীমান্ত পর্যন্ত গিয়েছে ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়ক। গঙ্গারামপুর থেকে রামপুরহাট পর্যন্ত এই জাতীয় সড়কের অবস্থা খুবই শোচনীয়। সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে বাড়তি ওজন নিয়ে হাজার হাজার লরি এই পথে যাতায়াত করে। তার মধ্যে বেশিরভাগই পাথরের গাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, এই কঙ্কালসার রাস্তার উপরে দিয়ে এত ওজনদার লরি গেলে সড়কের হাল তো খারাপ হবেই।
বাসিন্দাদের চোখের সামনেই ধীরে ধীরে সেই রাস্তার একাধিক জায়গায় পিচ উঠে পাথর বেরিয়ে পড়ছে। কিছু কিছু জায়গায় রাস্তার উপরেই তৈরি হয়েছে গর্ত। তাতে চাকা পড়ে ছোটবড় দুর্ঘটনা তো ঘটছেই। গাড়িরও ক্ষতি হচ্ছে। গঙ্গারামপুরের ফুলবাড়ির বাসিন্দা সন্দীপ সরকার বলেন, ‘‘গাড়ি নিয়ে বালুরঘাটে যাতায়াত করা যায় না। রাতের দিকে আবার বড় বড় পাথর বোঝাই লরি চলে। এ সব বন্ধ না হলে রাস্তার অবস্থা ভাল হবে না। প্রশাসনের এ দিকে নজর দেওয়া উচিত।’’
শুধু জাতীয় সড়কই নয়, জেলায় রাজ্য সড়কের অবস্থাও তথৈবচ। গঙ্গারামপুর থেকে তপন পর্যন্ত রাজ্য সড়কের অবস্থা খুবই শোচনীয়। গঙ্গারামপুরের নয়াবাজারের পর থেকে তপন চৌমাথা পর্যন্ত রাস্তা দিয়ে একবার গেলে দ্বিতীয় বার কেউ আসতে চাইবে না— অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদেরই। এই রাস্তাতেও পিচ উঠে গিয়েছে। গোটা রাস্তা খানাখন্দ আর পাথরকুচিতে ভর্তি। ফলে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা গাড়ি, সাইকেল, বাইক তো বটেই, রাস্তা পথচারীদের পক্ষেও হয়ে উঠেছে বিপজ্জনক। স্থানীয়দের কাছ থেকেই শোনা যায় দুর্ঘটনার সব কাহিনি। নিত্যযাত্রীরা বলছেন, প্রাণ কার্যত হাতের মুঠোয় নিয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়।
অভিযোগের আঙুল জেলা প্রশাসন এবং জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দিকে। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, এই সব প্রধান সড়ক ছাড়াও গ্রামের ভিতর দিয়ে যাওয়া অধিকাংশ জেলা পরিষদের রাস্তার ‘স্বাস্থ্যও’ ভাল নয়। কুমারগঞ্জ, তপন, হরিরামপুরের মতো ব্লকগুলিতে থাকা জেলা পরিষদের বড় রাস্তাগুলিও দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে বেহাল হয়ে রয়েছে।
এই ভোগান্তিতে ক্ষোভ জমছে সাধারণ মানুষের মনে। এ দিকে রাস্তার হাল ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই তিনি পথশ্রী প্রকল্পের সূচনাও করেছেন। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে জেলায় ১৪০টি রাস্তার কাজ হবে। এই তালিকায় যে সব রাস্তা পড়েছে, আগে সেই রাস্তার সংস্কার করা হবে। তার পর তালিকার বাইরে থাকা বেহাল রাস্তা মেরামত করতে পরিকল্পনা নেওয়া হবে। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক নিখিল নির্মল বলেন, ‘‘পরিবহণ দফতরকে বলা আছে পাথর বোঝাই গাড়িগুলির উপরে নজর রাখতে। নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। পথশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সড়ক মেরামত করা হচ্ছে।’’
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মালদহ ডিভিশনের একজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার জয়ন্ত সামন্ত বলেন, ‘‘সারা বছরই রাস্তা মেরামত হচ্ছে। যে সব জায়গায় রাস্তা খারাপ, তার তালিকা করে পাঠিয়ে দিয়েছি। টাকা বরাদ্দ হলেই কাজ শুরু হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy