কার্পেট কারখানায় পলি মণ্ডল (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
বাঁশ থোপের ছায়ায় প্লাস্টারহীন ইটের গাঁথনির উপরে টিনের চাল দেওয়া বাড়িটাকে ঘিরেই চলছে লড়াই। বৃদ্ধা মা ও ছোট মেয়েকে নিয়ে সংসার পলি মণ্ডলের। সে সব সামলে এলাকার আরও অন্তত ৪০ জন দুঃস্থ ও অসহায় মহিলাকে কার্পেট তৈরির কাজে যুক্ত করে তাঁদের আয় ও সম্মানের ব্যবস্থা করেছেন পলি।
বালুরঘাট-পতিরাম জাতীয় সড়কের পাশে, পোল্লাপাড়া এলাকা। বাড়িতে কার্পেট তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন পলি। ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে পলিদের ওই বাড়িকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে আত্রেয়ী নদী থেকে বয়ে আসা লম্বা খাঁড়ি। বাঁশের একটি সরু সাঁকোর সাহায্যে ওই সড়কে পৌঁছে বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ তাঁদের।
বেনারসের একটি কোম্পানি থেকে মেলে অর্ডার। কার্পেট তৈরি করে প্রতি মাসে আট-বারো হাজার টাকা আয় করে দুঃস্থ মহিলারা ঘুরে দাঁড়ানোর দিশা দেখছেন পলির হাত ধরে। স্বামী ছেড়ে গিয়েছেন প্রায় ১২ বছর। কোলের শিশুকন্যাকে নিয়ে সেই পলির লড়াই শুরু। ‘‘সে কারণেই বোধ হয় অন্যের দুর্দশা ওকে সহজেই নাড়া দেয়’’, বলেন তাঁর বৃদ্ধা মা সোলেমা বিবি। সোলেমার দুই ছেলে শ্রমিকের কাজ করেন। একমাত্র মেয়ে পলিকে ছোট থেকেই স্বনির্ভর হওয়ার তাগিদ তাড়া করে বেড়াত, জানান তিনি। বলেন, “অভাবের সংসারে প্রতিবেশী শিশুদের পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ চালাত। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে, আর পড়া হয়নি পলির।” গৃহস্থালির ভাঙাচোরা জিনিসপত্র বেচে তিনি রোজগারের চেষ্টা করেন। বছর চারেক আগে, পলি এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে কার্পেট তৈরির কাজ দেখে উৎসাহিত হন। সেখান থেকে কার্পেট তৈরি শিখে এসে ননদ মর্জিনা খাতুন ও এলাকার তিন জন মহিলাকে কার্পেট তৈরির কাজ শেখান। সেই থেকেই পথ চলা শুরু।
পলি বলেন, “চার জন মহিলাকে নিয়ে কাজ শুরু করে এখন দলের মহিলা সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫০ জনের বেশি।” গঙ্গারামপুর থেকে কাঁচামাল আনিয়ে বাড়ির কারখানায় প্রত্যেকে মিলে কার্পেট তৈরি করেন। পলির কথায়, “সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন সাহায্যে এগিয়ে এলে, বড় মাপের কারখানা তৈরি করে কার্পেট শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে যাই।’’
কার্পেট তৈরির অবসরে দুপুরে টিফিনের বাটি থেকে খাবার বার করতে করতে রূপালি ওরাওঁ, রিনা মণ্ডলরা বলেন, “দিদি আমাদের কাছে শুধু অন্নপূর্ণাই নন। মাথা তুলে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন উনি।” বিয়ের দু’বছরের মাথায় রূপালির স্বামী এবং ন’বছর আগে রিনার স্বামী পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। ১১ বছরের মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন রিনা। তাঁর মতো ওই কাজে যুক্ত হয়ে স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে চলেছেন অসহায় মৌমিতা দাস, রেশমি রবিদাস, শিবানী পালরা। অসুস্থ স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে সংসারের হাল ধরতে দূরের ব্লক থেকে পলির কারখানায় জায়গা পেয়েছেন শিখা প্রসাদ।
খাঁড়ির ধারে বেড়ে ওঠা কাশফুল বৃষ্টিতে নুইয়ে পড়েছে।
বাঁশের তৈরি লম্বা সাঁকো দিয়ে খাঁড়ির বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে পলির বাড়ির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন আরও অসহায় উমারা। মাথার উপরে তিনি অন্নপূর্ণা,পলি মণ্ডল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy