Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

নদীতে দূষণ, উধাও ভ্যাদা-কুরসা

লোকালয়ে পরিচিত ‘ভ্যাদা’ নামে। কেউ বলেন ‘মেনি’। বৈজ্ঞানিক নাম— ‘ননডাস ননডাস’। সরষে বাটা, পেঁয়াজ দিয়ে ওই নদীয়ালি মাছের রেসিপি ভুলেছে উত্তরের ভোজন রসিক বাঙালি।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:১২
Share: Save:

লোকালয়ে পরিচিত ‘ভ্যাদা’ নামে। কেউ বলেন ‘মেনি’। বৈজ্ঞানিক নাম— ‘ননডাস ননডাস’। সরষে বাটা, পেঁয়াজ দিয়ে ওই নদীয়ালি মাছের রেসিপি ভুলেছে উত্তরের ভোজন রসিক বাঙালি।

কেন ভুলবে না! নদী আছে, জল নেই। যেখানে জল আছে, বোরো ধান চাষের সুবাদে বিষাক্ত দূষণের হানা। শুধু ভ্যাদা বা মেনি নয়, গবেষকদের অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, উধাও হয়েছে বাঘা আড়, কুরসা, পাবদা, ভাঙনা, সরপুঁটির মতো অন্তত চল্লিশটি মাছের প্রজাতি। মৃতপ্রায় তিস্তা, জলঢাকা নদীর অহংকার ছিল এ সব সুস্বাদু মাছ। বিষ তেল ছড়িয়ে সহজে মাছ শিকারের ধাক্কায় বোরলি বা বরিলিয়াস ভাগ্রাও এখন মহার্ঘ। মত্‌স্যজীবীরা জানান, দিনভর জাল নিয়ে রোদে পুড়ে নদীতে ঘুরেও এক কেজি বোরলি মেলে না।

হঠাত্‌ হঠাত্‌ দারিকা মাছ বাজারে দেখা দিলেও আড়াইশো টাকা কেজি দরে। কার্যত নিম্ন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। অথচ তিন দশক আগেও সস্তায় মিলত বলে দারিকার মতো তিত পুঁটি, তর শোল, চাপিলা, মৌরলা নিম্নবিত্তের প্রিয় ছিল। কয়েক দশকে ওই মাছ দামে ও কদরে কুলিন হয়েছে। উচ্চবিত্ত খদ্দের তিনশো টাকা কেজি দামে লুফে নিচ্ছেন মাছ। কেন এমনটা? পেশায় মত্‌স্যজীবী ময়নাগুড়ির দক্ষিণ মউয়ামারি গ্রামের দাস পাড়ার বাসিন্দা উত্তম দাস বলেন, “নদীতে মাছ নেই। সামান্য যা মেলে, দাম তো বেশি হবেই।”

নদীয়ালি মাছে আকালের জন্য উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের মাছ বিশেষজ্ঞ সুদীপ বরাট বেড়ে চলা জল দূষণকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, “মাছের আঁতুড় ঘর রাসায়নিক দূষণে বিপন্ন। প্রজননের জায়গা নেই। ফলে প্রচুর প্রজাতি বিলুপ্তির পথে।” জলপাইগুড়ি জেলা মত্‌স্য আধিকারিক পার্থ দাস প্রশ্ন তুলেছেন, বিলুপ্তপ্রায় প্রাণিদের জন্য অনেক আইন আছে, মাছের জন্য সংরক্ষিত এলাকা কোথায়?

মত্‌স্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দারিকা, খলসা, সাটি বা টাকি, চ্যাং, চাঁদার মতো অন্তত ত্রিশটি প্রজাতির মাছ বর্ষায় ধান খেতে ঢোকে প্রজননের জন্য। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ডিম ফুটছে না। একই কারণে নদী এমনকী ডোবা, নালার অনেক পরিচিত মাছ উধাও হচ্ছে। নদী দূষণের পরিস্থিতি দেখতে চোখ ফেরাতে হবে ধূপগুড়ির কুমলাই নদীতে। ময়নাগুড়ি-ধূপগুড়ি রোডে সেতুর কাছে শহরের আবর্জনার চাপে দূষণে গেঁজে উঠে, ফেনায় ভরে, জল শুকিয়ে ওই নদীর অবস্থা নালার মতো। একই দশা মূর্তি, কুরতি, ইন্দং, ডায়না নদীর। দু’দশক আগেও সেখানে দেখা মিলত সুস্বাদু খয়রা, রাইচেং, পাথর চাটা, বাছা, মহাশোলের মতো মাছের।

কালিম্পঙয়ের বিচিলা পাহাড় থেকে উত্‌পন্ন ময়নাগুড়ির ধরলা নদীর সুস্বাদু মাছ দু’দশক আগেও ময়নাগুড়ি ও জলপাইগুড়ি শহরের ভোজন রসিক বাঙালির চাহিদা মেটাত। এখন নদী বক্ষে তেজপাতা বাগান। বাকি অংশ জুড়ে শুধুই ধান চাষ। মাল, চেল, ঘিস, লিস নদীতেও মাছের আকাল। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মত্‌স্যজীবী সমিতির জেলা সম্পাদক শিবেন পৈত জানান, নদীতে রাসায়নিক সারের বিষক্রিয়ায় বিরল প্রজাতির মাছ ধ্বংস হচ্ছে। পাশাপাশি বিষ তেল ছড়িয়ে মাছ ধরার ফলে বড় নদীর বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের পথে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy