নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মাফিক ১০ হাজার পর্যন্ত ভোটার রয়েছে এমন ওয়ার্ডে প্রার্থীরা প্রচারে সর্বাধিক ৬০ হাজার টাকা খরচ করতে পারবেন। তার বেশি জনসংখ্যা হলে মাথা পিছু ৬ টাকা খরচ করা যাবে। শিলিগুড়ি পুর নির্বাচনে ওয়ার্ডগুলির একাংশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের খরচ অবশ্য অনেক বেশি বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে শাসক দলের প্রার্থীদের ওয়ার্ডগুলির একাংশে খরচের বহর অনেক বেশি বলে অভিযোগ।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাংশের তরফে প্রার্থীদের আর্থিক-সহযোগিতা, ফ্লেক্স, পতাকা দিয়ে সাহায্য করা হচ্ছে। সিপিএম, বিজেপি বা কংগ্রেস দাবি করেছে, তাদের প্রার্থীদের তারা কোনও টাকা দেননি। পতাকা, ফ্লেক্স, পোস্টারের মতো সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে বলে জানান তাঁরা। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়, তাদের প্রার্থীদের একাংশকে ২০ হাজার টাকা এবং পরে কিছু প্রার্থীকে আরেক দফায় ১৫ হাজার টাকা করে প্রচার খরচ দেওয়া হযেছে। জনা তিনেক প্রার্থী সেই টাকাও নেননি। অনেককে দেওয়া হচ্ছে ফ্লেক্স, পোস্টারও। অথচ তৃণমূলের বেশ কিছু ওয়ার্ডে প্রার্থীদের প্রচার খরচ দলের তরফে দেওয়া টাকার ২০/৩০ গুণ বেশি। কোথা থেকে খরচ আসছে? প্রার্থীদের দাবি, শুভানুধ্যায়ী, পরিচিতেরা অনেকে ফ্লেক্স, পোস্টার ছাপিয়ে দিয়ে সাহায্য করছেন। তাতেই বেশি খরচ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
মাত্রা ছাড়া খরচের অভিযোগ উঠলেও মডেল কোড অব কনডাক্ট সেলের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওই সেলের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক বীরবিক্রম রাই বলেন, ‘‘প্রার্থীদের খরচের হিসাব দিতে হবে। এক্সপেনডিচার সেলের তরফে নজর রাখা হচ্ছে। তবে খরচের বিষয় নিয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
তৃণমূলের ১২, ২৩, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী যথাক্রমে নান্টু পাল, কৃষ্ণ পাল, জয়প্রকাশ চৌহ্বান ওরফে হিম্মত চৌহ্বানরা। জনসংখ্যা ২৬১৩, ৫৩২৮, ১৭০৪৬। নান্টুবাবুর ওয়ার্ডে ছোট, বড় মিলিয়ে অন্তত ৫০টি ফ্লেক্স রয়েছে। যার মূল্য আনুমানিক ৩০ হাজার টাকা। তা ছাড়া, অন্তত দেড় হাজার পতাকা রয়েছে। সেই সঙ্গে ১৫-২০ জন যুবক প্রতিদিন প্রচার কাজে খাটছেন। দুই বেলা তাঁরা খাওয়াদাওয়ার খরচও রয়েছে। সব মিলিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে বলে দলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থী বাসুদেব বসু-ও প্রচারে প্রচুর ছোট বড় ফ্লেক্স, দেওয়াল লিখন করেছেন। তাঁর হয়েও প্রচুর যুবক খাটছেন। তিনিও কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করেছেন বলে অভিযোগ। নান্টুবাবু, বাসুদেববাবু দু’জনেরই দাবি, পরিচিতেরা তাঁদের সাহায্য করছেন বলেই সম্ভব হয়েছে। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থী সুজয় ঘটকের প্রচারে ফ্লেক্সের ঘটা দেখেও অনেকে খরচের মাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সুজয়বাবুরও দাবি, পরিচিতেরা এই ব্যাপারে সাহায্য করেছেন। কমিশনের নিয়ম মেনেই খরচ করা হয়েছে।
হিম্মতবাবুর ওয়ার্ড বড়। ১ হাজার কর্মী প্রচারের কাজে যুক্ত বলে জানান। তারাই জানান, ছোট, বড় ফ্লেক্স লাগিয়েছেন অন্তত ১৫০টি। হিম্মতবাবু বলেন, ‘‘কর্মীদের কাউকে টাকা দেওয়ার ব্যাপার নেই। বিভিন্ন এলাকায় চেনা পরিচিতেরা অনেকেই ফ্লেক্স তৈরির খরচ দিচ্ছেন। দলের তরফে তাঁকে ৩০টি ফ্লেক্স দেওয়া হয়েছে।’’ বাস্তবে অনেক বেশি খরচ হচ্ছে বলে অভিযোগ। তবে নিয়মের মধ্যেই তাঁরা খরচ করছেন বলে জানান, নান্টুবাবু, কৃষ্ণবাবুরা। কৃষ্ণবাবু দলের কাছ থেকে কোনও টাকা নেননি। সব খরচের ব্যবস্থা স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে বসে তাঁকেই করতে হচ্ছে।
সিপিএমের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মুকুল সেনগুপ্ত, ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী দিলীপ সিংহরা দাবি করেন, তাদের প্রচারে খরচের বহর নেই। যদিও দিলীপবাবুর ওয়ার্ডে প্রচুর দেওয়াল লিখন রয়েছে। দলের তরফে যেটুকু দেওয়া হয়েছে তা দিয়েই প্রচার চলছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থীর সবিতা অগ্রবাল বলেন, চেনা পরিচিতেরা ফ্লেক্স বানিয়ে দিয়ে সাহায্য করছেন। দলের তরফে কিছু পতাকা দেওয়া হয়েছে। তা দিয়েই নিয়মের মধ্যেই প্রচারের খরচ রাখা হয়েছে। যদিও তাঁর ওয়ার্ডেও প্রচুর ফ্লেক্স দেখা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy