Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

অরণ্যে ছবি, ভিডিওতে কড়া নিয়ন্ত্রণ

সম্প্রতি জলপাইগুড়ি পুরসভার সহকারী বাস্তুকার যশপ্রকাশ দেবদাসের গ্রেফতারির পরে এমন অনেক ঘটনাই উঠে আসছে। তাই এ বার জঙ্গলের ভিতরে ছবি বা ভিডিও তোলার অনুমতি দিতে কড়াকড়ির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বনদফতর।

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫৪
Share: Save:

তথ্যচিত্রের জন্য ছবি তোলা হবে বলে জঙ্গলের ‘কোর’ এলাকায় ঢোকার ছাড়পত্র পেয়েছিল জনাকয়েক যুবক। মাঝপথে শ্যুটিং বন্ধ করে হঠাৎই জঙ্গল ছেড়ে চলে যায় যুবকের দল। সন্দেহ হওয়ায় বনকর্মীরা যুবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে জানতে পারেন, যে মোবাইল নম্বরগুলি বন দফতরকে দেওয়া হয়েছিল সেগুলির সবকটিই বন্ধ। যে ঠিকানা, সংস্থার নামে অনুমতি আদায় করা হয়েছিল তাও ভুয়ো। অভিযোগ, ভুয়ো পরিচয় দিয়ে জঙ্গলে ঢুকেছিল একটি আর্ন্তজাতিক চোরাচালান চক্রের কয়েকজন এজেন্ট। বছরদুয়েক আগে মালবাজার লাগোয়া একটি জঙ্গলের ঘটনা।

সম্প্রতি জলপাইগুড়ি পুরসভার সহকারী বাস্তুকার যশপ্রকাশ দেবদাসের গ্রেফতারির পরে এমন অনেক ঘটনাই উঠে আসছে। তাই এ বার জঙ্গলের ভিতরে ছবি বা ভিডিও তোলার অনুমতি দিতে কড়াকড়ির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বনদফতর। কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি আবেদন করলে ঠিকানা যাচাই থেকে শুরু করে মুচলেকাও নেওয়া হবে। কী ধরনের ছবি বা ভিডিও তোলা হল তাও যাচাই করা হবে। রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয় বর্মনের কথায়, ‘‘বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তা এবং জঙ্গল রক্ষার স্বার্থেই কড়াকড়ি করা হবে। যে কেউ আবেদন করলেই এখন থেকে আর ছবি তোলার অনুমতি দেওয়া হবে না।’’

জঙ্গলের ভিতরে ছবি তোলায় কেন লাগাম টানার উদ্যোগ, তার দুটি ব্যাখ্যা দিয়েছে বন দফতর। প্রথমত, জঙ্গলের কোর এলাকার ছবি তুলে প্রকাশ করা আইনত দণ্ডনীয়। কোর এলাকাই বুনোদের আবাসস্থল। সেখানে শ্যুটিংয়ের দল গেলে বুনোদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত হবে। যা আর্ন্তজাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আচরনবিধির পরিপন্থী। অনেক ক্ষেত্রেই অনুমতি নিয়ে ছবি তুলতে আসা দলের সদস্যরা নানা অছিলায় কোর এলাকায় ঢুকে পড়ে বলে বনকর্মীদের অভিজ্ঞতাই বলছে। তা ছাড়া কোর এলাকা অথবা জঙ্গলের ভিতরের খুঁটিনাটি ছবি তুলে প্রকাশ করলে তা চোরাশিকারীদের নজরেও আসবে।

দ্বিতীয়ত, চোরাশিকারী বা তাদের এজেন্টরাও অনেকসময় ডকুমেন্টারি অথবা নানা ফিল্ম তৈরির অজুহাতে জঙ্গলে ঢুকে পড়ে বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। বন্যপ্রাণীর দেহাংশ পাচারচক্রের জাল উত্তরবঙ্গেও বিস্তৃত বলে বনকর্মীদের দাবি। গরুমারা থেকে গন্ডারের খড্গ পাচারেই তার প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি। সে কারণে গরুমারাতে বাড়তি সর্তকতা নিচ্ছে দফতর।

তেমন প্রযোজন না হলে গরুমারার ভিতরে ছবি তোলার অনুমতি দেওয়ার কাজ আপাতত স্থগিত রাখার ভাচিন্তাও করছে দফতর। বনমন্ত্রী বলেন, ‘‘একেবারেই অনুমতি দেওয়া তো বন্ধ করা যাবে না। বন্যপ্রাণী নিয়ে নানা শিক্ষামূলক ছবিও হয়। তবে কে বা কারা ছবি তুলতে আসছে এখন থেকে তাতে কড়াকড়ি হবে।’’ যারা ছবি তোলার আবেদন করে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর করার জন্য বিশেষজ্ঞ দল তৈরির কথাও ভাবছেন মন্ত্রী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE