ছবি এএফপি।
বোল্লা রক্ষাকালী মন্দিরের অদূরে দু’পাশে ধানজমির মাঝ-বরাবর প্রায় দু’কিলোমিটার মাটির রাস্তা ধরে পৌঁছনো যায় ছোট্ট গ্রাম পূর্ব মহেশপুরে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশভাগের আগে বালুরঘাটের পতিরাম এলাকার জমিদারের অধীনে থাকা ওই এলাকায় আরও কয়েকটি গ্রামের সঙ্গে তৎকালীন রানি সুলোজিনীদেবীর ‘এস্টেটের’ প্রজা হয়ে শুরু হয় বাসিন্দাদের বসবাস।
এলাকাবাসী জানান, রানির শর্ত মেনে সেই সময় সকলকেই নিজেদের পদবী বদলে ফেলতে হয়। এস্টেটের জমি চাষে যুক্ত প্রজাদের নতুন পরিচিতি হয় ‘সর্দার’ পদবীতে। গ্রামের প্রবীণ কৃষক আব্দুল সর্দারের কথায়, ‘‘ঠাকুরদার বিশ্বাস পদবী বদলে হয় সর্দার।’’ সেই থেকে দু’প্রজন্ম ধরে সর্দার পদবীতেই রয়েছে তাঁদের রেশন কার্ড থেকে আধার, স্কুল শংসাপত্র থেকে জমির খাজনা, পঞ্চায়েতের করের মতো যাবতীয় নথি।
নতুন নাগরিক আইন নিয়ে তাই কপালে ভাঁজ আব্দুলের মতো পূর্ব মহেশপুরবাসীর অনেকের। আব্দুলের বক্তব্য, ‘‘কয়েক জনের পুরনো নথিতে ঠাকুরদার আমলের বিশ্বাস পদবী রয়েছে। পরে সর্দার পদবীতে বদলের কোনও নথি নেই।’’ বিশ্বাস-ই যে সর্দার— তা প্রমাণ করতে না পারলে দেশ ছাড়তে হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে এক সময় রানির দেওয়া জমিতে ঘরবাড়ি ও চাষাবাদ করে গড়ে ওঠা পূর্ব মহেশপুরের মতো সজনপুর, বিকোজ, বোল্লা, হরিহরপুর, আমদুলবাড়ির মতো একাধিক বসতির অনেক বাসিন্দার মধ্যে।
পতিরাম এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের অনেকে জানান, নতুন নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পরে গ্রামের কয়েক জন বাসিন্দা পুরনো ট্রাঙ্ক ও বাক্স থেকে রানির আমলের দখলি-সত্ত্বের নথি খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু সেগুলি প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এলাকার একাধিক মহিলা জানিয়েছেন, বিয়ের আগে তাঁদের পদবী ছিল খাতুন। বিয়ের পরে তা হয় বিবি। স্বামীর মৃত্যুর পরে বেওয়া। ভোটার ও আধার কার্ডেও তা-ই লিপিবদ্ধ হয়েছে। তাঁদের কারও প্রশ্ন, ‘‘বিবি ও বেওয়া পদবী যে একই মহিলার, তার প্রমাণ কী ভাবে হবে?’’
বোল্লা এলাকার নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি আধিকারিকের কথায়, ‘‘দেশভাগের পরে ঠাকুরদার হাত ধরে বাবা-কাকারা পূর্ব পাকিস্তান (এখন বাংলাদেশ) থেকে এপারে এসেছিলেন। পুরনো নথি সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখন কী হবে?’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি অর্পিতা ঘোষ বলেন, ‘‘এক জন বাসিন্দাকেও জেলা ছাড়া হতে হবে না।’’ বিজেপি জেলা সভাপতি বিনয় বর্মণের অভিযোগ, ‘‘নাগরিক আইন নিয়ে রাজ্যের শাসকদল মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। জেলাবাসীর চিন্তার কিছু নেই।’’
কিন্তু শাসক-বিরোধী দলের নেতাদের এমন আশ্বাসেও এখনও চিন্তা মেটেনি পূর্ব মহেশপুর, সজনপুর, হরিহরপুরের বাসিন্দাদের অনেকেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy