Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
World Water Day

বিশ্ব জল দিবসে আক্ষেপ পরিস্রুত পানীয় জলের জন্য

গ্রামবাসীদের দাবি, টিন কিংবা প্লাস্টিকের জারের সঙ্গে মশারির মতো জাল বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। সে জালের উপরে বালির সঙ্গে পাথরের টুকরো দেওয়া হচ্ছে।

টিউবওয়েলের জল ছেঁকে খাচ্ছেন আর্সেনিক কবলিত গ্রামের বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

টিউবওয়েলের জল ছেঁকে খাচ্ছেন আর্সেনিক কবলিত গ্রামের বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ সাহা
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪২
Share: Save:

নোংরা ‘অপরিচ্ছন্ন’ প্লাস্টিকের জার। তার তলা দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে। পরিষ্কার বালতিতে সেই জল সংগ্রহে ব্যস্ত বছর তিরিশের শারিফা বিবি। পরে, বালতি থেকে এক গেলাস জল নিয়ে স্বামীর দিকে এগিয়ে দিলেন তিনি। তিনি বলেন, “বিয়ের পর থেকে এ ভাবেই জল ছেঁকে সবাইকে খাওয়াচ্ছি।” এর কারণ কি? চোখেমুখে বিরক্তি শারিফার। তিনি বলেন, “জলে আর্সেনিকের বিষ তো আছেই, সে সঙ্গে আয়রনও রয়েছে। আয়রন জমে প্লাস্টিকের সাদা জার কালচে হয়েছে। মশারি, বালি, পাথর দিয়ে না ছেঁকে নিলে জল মুখে দিতেও রুচিতে বাধবে।” বাবার বাড়িতে গেলে শুধু আদর-যত্ন নয়, পরিস্রুত জলের আশায় দু’-এক দিন বেশি থাকতে ইচ্ছে করে, আক্ষেপ তাঁর।

বুধবার ‘বিশ্ব জল দিবসে’ শারিফার মতোই পরিস্রুত পানীয় জলের জন্য আক্ষেপ করেন কালিয়াচক ১ ব্লকের সিলামপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের রুস্তম আলি টোলা, বিসারদ সর্দার টোলা, এমএসকে পাড়ার বধূরা। আর্সেনিকপ্রবণ গ্রাম হয়েও এখনও পরিস্রুত পানীয় জল মেলেনি সেখানে। তাই পানীয় জলের জন্য তিন গ্রামের মানুষের ভরসা টিউবওয়েলই। ঘরে-ঘরে এখন বসানো হয়েছে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি ‘ঘরোয়া ফিল্টার’। রুস্তম আলি টোলার মেয়ে বছর তিরিশের আনজিমা খাতুন বলেন, “টিউবওয়েল থেকে জল ভরে রাখলে দশ মিনিটের মধ্যে লালচে হয়ে যায়। মনে হয়, যেন পুকুরের ঘোলা জল। তাই, নিজেরাই ফিল্টার বানিয়ে জল খাওয়ার যোগ্য করার চেষ্টা করছি।”

কী এই ঘরোয়া ফিল্টার? গ্রামবাসীদের দাবি, টিন কিংবা প্লাস্টিকের জারের সঙ্গে মশারির মতো জাল বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। সে জালের উপরে বালির সঙ্গে পাথরের টুকরো দেওয়া হচ্ছে। বালি, পাথরের টুকরোয় আয়রন আটকে জল কিছুটা হলেও পরিষ্কার হচ্ছে। জল কী তাতে আর্সেনিকমুক্ত হচ্ছে? মালদহের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (আর্সেনিক) নিত্যানন্দ আচার্য বলেন, “সহজেই জল থেকে আর্সেনিক দূর করা যায় না। সে জন্য আধুনিক যন্ত্রের সাহায্য নিতে হয়। গ্রামবাসীরা জাল, পাথর, বালি দিয়ে জলের ঘোলাটে রং দূর করতে পারলেও আর্সেনিক থেকেই যাবে।”

প্রশাসনের দাবি, কালিয়াচকের তিনটি, রতুয়ার দু’টি এবং ইংরেজবাজার ও মানিকচক, জেলার এই সাতটি ব্লক আর্সেনিক-প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত। ১৯৯০ সালে ব্লকগুলিতে আর্সেনিক মিললেও এখনও লক্ষাধিক বাড়িতে পরিস্রুত পানীয় জলের পরিষেবা পৌঁছয়নি। কালিয়াচক ১ ব্লকের রুস্তম আলি টোলা, বিসারদ সর্দার টোলা, এমএসকে পাড়ার মতো জেলার আরও একাধিক গ্রাম পরিস্রুত পানীয় জলের পরিষেবা থেকে দূরে রয়েছে। আর্সেনিক আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে গ্রামগুলিতে। আর্সেনিকে আক্রান্ত মাবুদ মোমিন বলেন, “আর্সেনিক-গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত হলেও আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলটুকুও মিলছে না। এ দিকে, আর্সেনিক আমাদের শরীর একটু একটু করে শেষ করে দিচ্ছে।” অপর এক আক্রান্ত খুরশেদ আলি বলেন, “আমার তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে। আমার জন্য নয়, আর্সেনিকমুক্ত ভাল জল চাইছি, আমার ছেলেমেয়েদের জন্য।”

যদিও বছর খানেক আগে, গ্রামে ‘পাড়ায় সমাধান’ প্রকল্পে পরিস্রুত পানীয় জলের জন্য ৬৫ লক্ষ টাকার একটি বোর্ড দেওয়া হয়েছে, দাবি গ্রামবাসীদের। গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের সাহানারা বিবি বলেন, “প্রশাসনের তরফে বোর্ড দিলেও কোনও কাজ শুরু হয়নি।” নিত্যনন্দ বলেন, “প্রকল্পের বোর্ডের বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। তবে সমস্ত বাড়িতে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল পৌঁছানোর জন্য আমরা ৮০৪ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছি। টেন্ডার প্রক্রিয়াও দ্রুত শুরু হবে।” (শেষ)b

অন্য বিষয়গুলি:

World Water Day Pure drinking water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE