প্রতীকী ছবি।
নাম একাব্বর মিয়াঁ। ইংরেজি বানানে যা লেখা হয়েছে, তার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘একাকাব্বর মিয়াঁ’। শুধু একটি ‘কা’ নিয়ে বিড়ম্বনা। তা নিয়ে সকাল থেকেই হন্যে হয়ে ঘুরছে নবম শ্রেণির ছাত্র একাব্বর।
ব্যাঙ্কে গিয়ে একাব্বর জানতে পারে, সেখানে সংশোধনের কাজে এই মুহূর্তে আর নাম নেওয়া হচ্ছে না। তাকে সেখান থেকে কোচবিহার প্রধান ডাকঘরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। হন্তদন্ত হয়ে ডাকঘরে গিয়ে একাব্বর জানতে পারে, সেখানেও নতুন নাম নেওয়া আপাতত বন্ধ। হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরার পথ ধরে একাব্বর। তার কথায়, “নাম তো আমি ভুল করিনি। তাহলে তা ঠিক করতে এমন ভাবে ঘুরতে হবে কেন?”
শুধু একাব্বর নয়, এমন ভাবেই কেউ আধার কার্ড সংশোধন, কেউ আবার নতুন আধার কার্ড তৈরির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন এদিক এদিক। ডাকবিভাগের কোচবিহারের এক আধিকারিক বলেন, “তালিকা দীর্ঘ হয়ে যাওয়ায় কিছু সময় পর পর নাম নেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক লোককেই ওই পরিষেবা দেওয়া সম্ভব। সেই ভাবেই কাজ করা হচ্ছে।”
অসমে এনআরসির পরেই আধার কার্ড নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে একই সঙ্গে আতঙ্ক ও তৎপরতা শুরু হয়। সংশোধন থেকে নতুন কার্ডের জন্য ভিড় বাড়তে শুরু করে আধার সেন্টারগুলিতে। কোচবিহার জেলায় হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাঙ্ক এবং প্রধান ডাকঘরে ওই পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই কাজের জন্য কাউকে রাতভর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কেউ ভোররাতে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। তার পরে যে ‘ডেট’ মিলছে, সেটাও তিন সপ্তাহ থেকে এক মাস পরে। মঙ্গলবার নতুন আধার কার্ডের জন্য প্রধান ডাকঘরে আবেদন করেন পুণ্ডিবাড়ির যুবক সমীর রায়। তিনি জানান, কর্মসূত্রে তিনি বাইরে থাকেন। তাই এর আগে আধার কার্ড তৈরি করতে পারেননি। এবারে আর দেরি করতে চান না তিনি। তিনি এ দিন বলেন, “তিন সপ্তাহ আগে নাম নথিভুক্ত করে গিয়েছি। আজ তারিখ পড়েছিল। আজ আবেদন করলাম।” একই ভাবে একমাস অপেক্ষার পরে সুযোগ পেয়েছেন বড় আঠারোকোটার জিকোরুদ্দিন মিয়াঁ। এ দিন তিনি বলেন, “আমার আধার কার্ডে ভুল রয়েছে। এক মাস আগে নাম নথিভুক্ত করার পরে ডাক পড়ে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হওয়ার পরে আধার কার্ড নিতে ব্যাপক ভিড় হতে শুরু করে। অনেকেই দিনভর আধার কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষা করতে শুরু করেন। অবস্থা বুঝে নির্দিষ্ট সময় ধরেই ওই কাজ করার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। প্রধান ডাকঘরে নাম নথিভুক্ত করা হয়। প্রথম ২০ জনের নাম নিয়ে তারিখ দিয়ে দেওয়া হয়। ওই তারিখ হিসেবেই তাঁদের কার্ডের কাজ করা হয়।
ডাকঘরের এক কর্মী বলেন, “প্রচুর নাম নথিভুক্ত হয়েছে। সবাইকে যে তারিখ দেওয়া হয়েছে তা শেষ করতেই অনেকদিন লাগবে। সেই জন্যেই কয়েকদিন পর নতুন করে নাম নেওয়ার বিষয়ে নোটিস দেওয়া হয়।” বাসিন্দারা অবশ্য দাবি তুলেছেন, গ্রামে গ্রামে নতুন আধার কার্ড দেওয়া এবং সংশোধনের কাজ শুরু করুক প্রশাসন।
কিশোর একাব্বরের কথায়, “তেমনটা হলে তো সত্যিই আমাদের হয়রানি কমে যায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy