দূষণ: প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার চলছেই। নিজস্ব চিত্র
হম্বিতম্বি সার। প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে কোনও পদক্ষেপই করতে পারল না বালুরঘাট পুরসভা। তাই এই শহরকে গ্রিনসিটি করে গড়ে তোলার পথে শুরুতেই প্রকল্পটি ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন বাসিন্দাদের একাংশ।
চলতি মার্চের ১ তারিখ থেকে বালুরঘাট শহরকে ক্যারিব্যাগ মুক্ত করতে অভিযান চলবে বলে ঢাকঢোল পিটিয়ে মাইক প্রচার করা হয়েছিল। গোটা মার্চ শেষ হতে চললেও পুর-কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। অথচ প্রচার অভিযানে পুর-কর্তৃপক্ষ প্রায় ৩ লক্ষ টাকা খরচ দেখিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিরোধী কাউন্সিলরদের প্রশ্ন, ‘‘ক্যারিব্যাগ বন্ধের ডাক দিয়ে শহরে কয়েকদিন মাত্র মাইক প্রচার হয়েছে। তাতে এত টাকা খরচ হয় কী করে?’’
শহরকে সবুজায়ন প্রকল্পের আওতায় আনতে শুরুতেই প্লাস্টিক ও ক্যারিব্যাগ যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে, তা টের পেয়েও পুরসভার পক্ষ থেকে কেন কোনও তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি সেই প্রশ্ন তুলেও সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বাম কাউন্সিলর প্রলয় ঘোষ, অরিজিত চন্দের অভিযোগ, কোনও পদক্ষেপ না করে লক্ষাধিক টাকা খরচের হিসেব পুর-কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। তাঁদের ক্ষোভ, শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া আত্রেয়ী নদী ক্রমশ প্লাস্টিক দূষণের কবলে পড়ে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ক্যারিব্যাগ থার্মোকলের পাতা জমে বেহাল দশা হয়েছে নিকাশি নালার। এই পরিস্থিতিতে ফেব্রুয়ারিতে ক্যারিব্যাগের বিরুদ্ধে শুধু মাইকে প্রচার করে দায়িত্ব পালন ছাড়া আদতে কোনও পদক্ষেপই হয়নি বলে তাঁদের দাবি।
পুরপ্রধান রাজেন শীল এ দিন অবশ্য দাবি করেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অভিযানে নামা যায়নি। পরীক্ষা শেষ হলে পদক্ষেপ করা হবে। তবে ক্যারিব্যাগের ব্যবহার রোধে নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে বলে রাজেনবাবুর মত। যা শুনে শহরের একাংশ বাসিন্দার অভিযোগ, বাজারে হানা দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে পুর-কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। ফেব্রুয়ারি জুড়ে শহরে প্রচারের পর ১ মার্চ থেকে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের বিরুদ্ধে কড়া অভিযান শুরু করার কথা ঘোষণা করেছিল পুরকর্তৃপক্ষ। এমনকী পুলিশ নিয়ে গিয়ে দোকান বাজারে হানা দিয়ে ক্যারিব্যাগ প্লাস্টিক থার্মোকলের পাতা আটক ও জরিমানার ফতোয়াও জারি করা হয়েছিল। পুরসভা থেকে বার্তা পেয়ে বালুরঘাট ব্যবসায়ী সমিতিও প্রচার অভিযানে নামে। তবে তাতে কাজের কাজ হয়নি।
বণিকসভার সহ-সভাপতি গোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘অবৈধ ক্যারিব্যাগ, প্লাস্টিকের থালা বিক্রি বন্ধে প্রচার করায় শুরুতে কয়েকদিন বিক্রেতারা সতর্ক ছিলেন। দোকাদারেরা নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ও ক্যারিব্যাগ রাখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তায় নেমে অভিযান না হওয়ায় ফের আগের চেহারায় ফিরে এসেছে বালুরঘাটের প্রধান বাজার।’’ এখন বালুরঘাটের তহবাজারে মাছ, মুদি, মাংস থেকে আনাজের দোকানদার ও ক্রেতার মধ্যে ক্যারিব্যাগে জিনিসপত্র আদনপ্রদান জারি রয়েছে। শহরের সাধনামোড় থেকে চকভবানী কালীবাড়ি ও পুরসভা মোড়ের একাধিক মিষ্টির দোকান থেকে নিষিদ্ধ ক্যারিব্যাগের মধ্যে সন্দেশ রসগোল্লা শিঙাড়া সরববরাহ করা হচ্ছে। বাসিন্দাদের একাশের ক্ষোভ, দেখে মনে হচ্ছে বালুরঘাট শহরে পরিবেশ দূষণ নিয়ে শাসন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy