Advertisement
E-Paper

‘জানি না, এখন কত দিন এ শিবিরে থাকতে হবে’

ধুলিয়ানের অনুপনগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাত দিন আগেই ছেলের জন্ম দেন বছর তিরিশের সপ্তমী মণ্ডল। এলাকার বেতবোনা এলাকায় বাপের বাড়িতে ওঠেন নবজাতককে নিয়ে। শুক্রবার বিকেলের পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বেতবোনা এলাকা।

মালদহের পারলালপুরের আশ্রয় শিবিরে।

মালদহের পারলালপুরের আশ্রয় শিবিরে। ছবি: জয়ন্ত সেন।

জয়ন্ত সেন

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৩৩
Share
Save

বর্ষাকালে বানভাসিদের থাকার জায়গা এখন আশ্রয় ওঁদের। ওঁরা গঙ্গার অন্য পারের জেলা মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের বাসিন্দা। কিন্তু সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ-আন্দোলনে তেতে ওঠা সে এলাকা ছেড়ে ওঁরা ঠাঁই নিয়েছেন মালদহের কালিয়াচক ৩ ব্লকের পারলালপুর গ্রামে। শনিবার সকাল থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত ধুলিয়ানের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বেতবোনা, বাজারপাড়া বা হাতিচিত্রা এলাকা থেকে আসা শিশু, মহিলা-সহ চারশোরও বেশি মানুষের আশ্রয়স্থল পারলালপুর হাই স্কুল।

ধুলিয়ানের অনুপনগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাত দিন আগেই ছেলের জন্ম দেন বছর তিরিশের সপ্তমী মণ্ডল। এলাকার বেতবোনা এলাকায় বাপের বাড়িতে ওঠেন নবজাতককে নিয়ে। শুক্রবার বিকেলের পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বেতবোনা এলাকা। সপ্তমীর কথায়, ‘‘এক দল লোক বেশ কিছু বাড়িতে লুট করে, আগুন লাগায়, বোমাবাজি করে। ব্যাগে সামান্য কিছু জামাকাপড়, সন্তান আর মাকে নিয়ে বেরিয়ে ধুলিয়ানের গঙ্গার ঘাটে এসে ডিঙি ধরে এখানে পৌঁছেছি।’’ একই পথে পারলালপুরে পৌঁছনো বেতবোনার বাসিন্দা কাঞ্চন মণ্ডল বলেন, ‘‘পড়শির বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। বোমাবাজি করে। লুঠপাট হয়। দুই ছেলে-মেয়ে। ঝুঁকি নিয়ে ঘরে থাকতে পারিনি।’’ হাতিচিত্রার বাসিন্দা কালীচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় নেট পরিষেবা বন্ধ, মোবাইল ফোনও কাজ করছে না। ফিরে যে যাব, সে
সাহস নেই।’’

শনিবার দুপুরের পর থেকে ছোট ছোট ডিঙি নৌকা করে যখন ধুলিয়ানের দিক থেকে প্রধানত শিশু ও মহিলারা পারলালপুরে আসতে শুরু করেন। রবিবার পারলালপুর
হাই স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, স্কুল চত্বরটি কার্যত ত্রাণ শিবিরে পরিণত হয়েছে। মুর্শিদাবাদ থেকে আসা জনতার জন্য সাহায্যের হাত
বাড়িয়ে দেন পারলালপুর গ্রামের বাসিন্দারাই। তাঁরাই খাবারের ব্যবস্থাও করেন। শিবিরের উদ্যোক্তাদের অন্যতম নিতাই চৌধুরী বলেন, ‘‘গ্রামের অনেক পরিবারের আত্মীয়-স্বজন থাকেন শমসেরগঞ্জ এবং ধুলিয়ানে। তাঁরা একে-একে এখানে আসছেন।’’

এ দিন সকালে আশ্রিতদের শুকনো খাবারের প্যাকেট ও ত্রাণসামগ্রী দেন মহকুমাশাসক (মালদহ সদর) পঙ্কজ তামাং, বিডিও সুকান্ত শিকদার। তবে বিজেপির মালদহ দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অজয় গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বিজেপির তরফেই খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশাসনের ভূমিকা নেই।’’ সন্ধ্যায় এলাকায় যায় বৈষ্ণবনগরের তৃণমূল বিধায়ক চন্দনা সরকার, জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মন ঘোষ-সহ তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল। বিধায়ক চন্দনা বলেন, ‘‘ধুলিয়ান থেকে প্রায় ৪০০ মানুষ এ পারে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রশাসনের উদ্যোগেই খাবার দেওয়া হচ্ছে।’’

ধুলিয়ানের হাতিচিত্রা মোড়ের বাসিন্দা মৌমিতা সাহা বলেন, ‘‘এলাকায় এমন অশান্তি আগে দেখিনি। জানি না, এখন কত দিন এ শিবিরে থাকতে হবে!’’ জঙ্গিপুর পুলিশ-জেলার সুপার আনন্দ রায় অবশ্য বলেন, ‘‘অশান্তির কারণে যাঁরা ঘর ছেড়েছেন, তাঁরা ঘরে ফিরতে চাইলে, সব রকম সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত। পুলিশ আপনাদের নিরাপত্তা দিতে তৈরি।’’

সহ প্রতিবেদন: বিমান হাজরা

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

WAQF Amendment Law Unrest Situation

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}