মালহদহে গঙ্গার ভাঙন। —নিজস্ব চিত্র।
ফরাক্কা-গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি নবীকরণে ভাঙন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন মালদহের গঙ্গাপারের মানুষ। তাঁদের দাবি, ফরাক্কা ব্যারাজ তৈরি হওয়ার পর থেকেই উজান এবং ভাটিতে ভাঙন বেড়েছে। গত দু’তিন দশকে ব্যারাজের আশপাশে পলি জমে নদীর নাব্যতা কমে চর গজিয়েছে। ড্রেজ়িংয়ের কাজ না হওয়ায় মালদহের নদীপারে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ওই চুক্তি নবীকরণ হলে, দিনে দিনে গঙ্গার ভাঙন আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করেছে মালদহের ‘গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ অ্যাকশন নাগরিক কমিটি’ও।
নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফরাক্কা-গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি নবীকরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছেন বলে জানান। গঙ্গার জলবণ্টন নিয়ে ১৯৯৬ সালে ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি হয়। সে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে। এই আবহে শনিবার নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মধ্যে বৈঠক হয়। সেখানে ফরাক্কা-গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি নবীকরণে একটি ‘যৌথ কারিগরি কমিটি’ তৈরি করা হয়েছে। কার্যত এই পদক্ষেপে দু’দেশের জলবণ্টন চুক্তি নবীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হল বলেই খবর। রবিবার তৃণমূলের তরফে মোদী সরকারের ওই পদক্ষেপের সমালোচনা করা হয়েছিল। এ দিন নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গঙ্গার ড্রেজ়িংয়ের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যা বাংলায় বন্যা এবং ভাঙনের প্রাথমিক কারণ হয়ে উঠেছে। ভাঙনে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা জলের তলায় চলে যাচ্ছে। কলকাতা বন্দরে এর প্রভাব পড়ছে। ফরাক্কা-গঙ্গা চুক্তিতে রাজ্য সরকারও পক্ষ। কিন্তু নবীকরণের বিষয়ে রাজ্য সরকারকে কিছুই জানানো হয়নি।"
মালদহ জেলায় ৮০ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে বয়েছে গঙ্গা। প্রতি বছর ভাঙনে জেরবার গঙ্গাপারের বিস্তীর্ণ এলাকা। ‘ভাঙন প্রতিরোধ কমিটি’র দাবি, গত দু’ দশকে ভাঙনে ২৯টি মৌজা সহ বেশ কয়েক হাজার বিঘা জমি গঙ্গায় তলিয়েছে। বিলুপ্ত একটি গোটা গ্রাম পঞ্চায়েত—কেবি ঝাউবোনা। ভাঙনের পরে ২৬টি মৌজা বা ৩০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা চর হিসেবে জেগে উঠেছে। নদীবক্ষে এই সমস্ত চর গজিয়ে ওঠায়, গঙ্গার নাব্যতা কমেছে এবং ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে বলে তাদের দাবি। কমিটির কর্ণধার তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘গঙ্গা জাতীয় নদী। কিন্তু ভাঙন ঠেকাতে কেন্দ্রের সরকার অর্থ বরাদ্দ করছে না। রাজ্য সরকার গঙ্গা ভাঙন রোধের কাজ করলেও বালির বস্তা দিয়ে তা করায় অর্থ অপচয় হচ্ছে, ভাঙন থামছে না। কেন্দ্রের উচিত, গঙ্গা ভাঙন রুখতে একটি মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে স্থায়ী ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করে জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভাবা।"
মালদহ দক্ষিণের নবনির্বাচিত কংগ্রেস সাংসদ ইশা খান চৌধুরী বলেন, ‘‘ফরাক্কা-গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি নবীকরণের আগে মালদহ মুর্শিদাবাদে ভাঙন-পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করা উচিত।’’ সেচ প্রতিমন্ত্রী তৃণমূলের সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘‘রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে কেন্দ্র চুক্তির জন্য উদগ্রীব। গঙ্গা ভাঙনের মতো জাতীয় সমস্যা ঠেকাতে কেন্দ্র উদাসীন।" মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ‘‘বিষয়টি দুই দেশের পররাষ্ট্রনীতির উপরে নির্ভর করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy