পরিবারের সঙ্গে কেশব দাস। মালদহের দরিদ্র পরিবারের সন্তান এখন বিডিও হতে চলেছেন। —নিজস্ব চিত্র।
আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন মালদহের এক পরিযায়ী শ্রমিকের পুত্র কেশব দাস। এ বার বিডিও হওয়ার পথে ২৮ বছরের ওই যুবক। কেশবের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের দৌলতপুর পঞ্চায়েতের হরদমনগর গ্রাম। খুশির হাওয়া পরিবারে। ফুলের তোড়া, মিষ্টির প্যাকেট আর অজস্র শুভেচ্ছাবার্তায় আনন্দে ভাসছেন কেশব।
লড়াইটা মোটেই সহজ ছিল না। অভাব তাঁর পরিবারের দৈনন্দিন সঙ্গী। বাবা শ্রমিকের কাজ নিয়ে ভিন্ রাজ্যে ছিলেন। তবে করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময়ে কাজ হারিয়ে বাড়িতে থাকেন তিনি। বর্তমানে দিনমজুরি এবং অন্যের জমিতে চাষবাস করে সংসার চালান। ওই পরিবারের ছেলে কেশব পড়াশোনার খরচ চালাতে গৃহশিক্ষকতাও করেছেন।
২০২০ সালে দ্বিতীয় বার ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা দিয়েছিলেন কেশব। চলতি মাসের ২ ফেব্রুয়ারি তার চূড়ান্ত ফল বেরিয়েছে। ডব্লিউবিসিএসে ২৭তম স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন ‘এগ্জিকিউটিভ’ কেশব।
দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা করতে। স্কুলে দারুণ ফল না করলেও লক্ষ্যে স্থির ছিলেন কেশব। তিনি জানান, ২০১১ সালে হরদমনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৫৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেন। ২০১৩ সালে দৌলতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ৭৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে। তার পরে মালদহ কলেজে সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। ২০১৬ সালে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য ভর্তি হন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৮ সালে ৭৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে এমএ পাশ করেন। মালদহের হস্টেলে থাকতে থাকতেই আমলা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কেশব। তিনি বলেন, ‘‘আর্থিক অভাবের জন্য কোনও কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে পারিনি। তবে নিজে টিউশন দিয়ে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতাম। ছোট থেকে ইচ্ছা ছিল শিক্ষক হওয়ার। তবে পরে বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি।’’ কঠোর পরিশ্রমেই সাফল্য ধরা দিয়েছে। মত কেশবের।
ছেলের সাফল্য চোখ ভিজে আসে বাবা জ্ঞানবান দাসের। তিনি বলেন, ‘‘আমার দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। কেশব ছোট ছেলে। ছোট থেকেই ও কঠোর পরিশ্রমী। পড়তে বসার জন্য কখনও বকাঝকা করতে হয়নি। সামান্য আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। এমনকি, স্ত্রীর সোনার দুল পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এখনও ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ করতে পারিনি।’’
একটু থেমে জ্ঞানবান আরও বলেন, ‘‘মাধ্যমিক পাশ করার পর ছেলের আবদার ছিল একটি নতুন সাইকেলের। সেটাও কিনে দিতে পারিনি। প্রতি দিন প্রায় ৬ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে দৌলতপুরের স্কুলে যেত ও। মালদহের হস্টেলে থাকাকালীন একটা ল্যাপটপ কিনতে চেয়েছিল। সে আবদারও রাখতে পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy