আতঙ্কে: ভূমিকম্পের সময় বাড়ির বাইরে। নিজস্ব চিত্র
অসমের কম্পনের জেরে কেঁপেছে গোটা উত্তরবঙ্গই। ভরা সকালে ওই কম্পনে আতঙ্কও ছড়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে। আতঙ্কিত হয় পশুপাখিরাও। তবে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার বা ডুয়ার্সের কোথাওই বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।
রাস্তায় চেয়ারম্যান
প্রথম ঝটকায় বুঝতে পারেননি৷ কিন্তু দ্বিতীয় ঝটকায় ভূমিকম্প বুঝতেই চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে একেবারে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন আলিপুরদুয়ার পুরসভার চেয়ারম্যান আশিস দত্ত৷ তিনি জানালেন, “সকালে বাড়ির সামনে একটি জুতোর দোকানে চেয়ারে বসে সেখানকার কর্মীদের সঙ্গে গল্প করছিলাম৷ প্রথম ঝটকার পর কর্মীদের জিজ্ঞাসা করতে যাই৷ কিন্তু তখনই দ্বিতীয় ঝটকায় বুঝে ফেল এটা ভূমিকম্প৷ দেরি না করে লাফিয়ে দোকান থেকে বাইরে বক্সা-ফিডার রোডে নেমে আসি৷” আশিসবাবুর কথায়, ‘‘বাইরে বেরিয়েই দেখি বিদ্যুতের খুঁটি ও তারগুলি কেমন যেন নড়ছে৷ তবে এত বড় ভূমিকম্প হলেও ভাগ্যিস শহরের কারও কিছু হয়নি৷’’ জেলা হাসপাতালে সেই সময় রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। রোগীর আত্মীয়রা নিজেদের রোগীদের ধরে নীচে নামানোর চেষ্টা করেন। কিছু পরে ভূমিকম্প থেমে গেলের রোগীরা নীজেদের বেডে ফিরে যান।
বিশ্বকর্মায় চিড়
অফিসের ব্যস্ত সময়ে তখন মেখলিগঞ্জে ব্যস্ততা তুঙ্গে। সেই সময় ভূমিকম্প হওয়ায় কিছুক্ষনের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় । আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। ভূমিকম্পের তীব্রতা কম থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সেরকম নেই বললেই চলে। তবে কুমোরটুলির বেশ কয়েকটি বিশ্বকর্মার মূর্তিতে চিড় ধরেছে। তা নিয়ে চিন্তায় শিল্পীরা। কুমোরপাড়ার একজন বলেন, “বেশ কয়েকটি প্রতিমায় চিড় ধরেছে। জানি না কত তাড়াতাড়ি সামলানো যাবে।” দোকান থেকে দৌড়ে বের হতে গিয়ে হাত থেকে মোবাইল পড়ে ভেঙে যায় ব্যবসায়ী রাজু ভৌমিকের। এ ছাড়া কয়েকজন তাড়াহুড়ো করে ঘর থেকে বেরোতে গিয়ে সামান্য চোট পান।
উদ্বিগ্ন মন্ত্রী
আতঙ্ক ছড়ায় কোচবিহারেও। কম্পনের জেরে বাসিন্দারা অনেকেই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন। উলু ও শাঁখ বাজানোর রোল পড়ে পাড়ায় পাড়ায়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘বাড়ির দফতরে অনেকের সঙ্গে কথা বলছিলাম। আচমকা বেশ ভাল মাত্রায় কম্পন অনুভূত হয়।’’ মন্ত্রী জানান, প্রাথমিকভাবে শিলিগুড়িতে একজনের মৃত্যুর কথা শুনেছি। পাশাপাশি উত্তরের অন্য সব জেলাগুলির ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। জেলাশাসক কৌশিক সাহা ভূমিকম্পের সময় দোতলা অফিসে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘কম্পনের তীব্রতা ভালই বুঝেছি। ক্ষয়ক্ষতির কোনও খবর এখনও মেলেনি। খোঁজ রাখছি।’’ বাসিন্দা শুক্লা ঘোষ বলেন, ‘‘রান্না করছিলাম। কম্পন হতেই রান্না ফেলে বাইরে বেরিয়ে আসি।’’
মেঘলালের হুঙ্কার
গরুমারার মেদলা নজরমিনারের পাশে জঙ্গল ক্যাম্প রয়েছে। সেখানে থাকে অবসরপ্রাপ্ত কুনকি হাতি মেঘলাল। বনকর্মীদের দীর্ঘদিনের সঙ্গী। সারাদিন শান্তই থাকে। এ দিন সদ্য মাহুতের দল ক্যাম্পে ফিরেছে। হঠাতই হুঙ্কার দিতে থাকে মেঘলাল। শিকল ছেঁড়ে বেড়িয়ে আসার চেষ্টাও করে। কম্পন থামতেই অবশ্য শান্ত হয় মেঘলাল। ভূমিকম্পের সময়ে গাছ ছেড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়তে শুরু করে পাখিরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy