বাপ্পাদিত্য অধিকারী
অর্থকষ্টে এক সময়ে রিকশাও চালিয়েছেন তিনি। রং মিস্ত্রির সাহায্যকারী, দিনমজুরি, ফেরিওয়ালার কাজ— কী না করেছেন সংসার চালাতে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে টানা পাঁচ বছর লেখাপড়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না। তবে ছিল ইচ্ছাশক্তি আর জেদ। যে জেদের বশেই সাফল্যের সিঁড়ি বাইতে শুরু করেছেন আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের উত্তর পারোকাটা এলাকার বাসিন্দা বাপ্পাদিত্য অধিকারী। দু’বার নেট এবং এক বার সেট কোয়ালিফাই করে বর্তমানে সিকিম ইউনিভার্সিটিতে তিনি গবেষণা করছেন সিকিমের শিক্ষার ইতিহাস নিয়ে। শুধু তাই নয় ওই ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতাও করছেন বাপ্পাদিত্য।
আর্থিক অনটনের কারণে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় তাক লাগানো ফলাফল করতে পারেননি বাপ্পাদিত্য। উচ্চ মাধ্যমিকের পরের পাঁচ বছর সংসার চালাতে গিয়ে খাতা-বই গুটিয়ে রাখতে হয়েছে বছর ছত্তিশের যুবকটিকে। পরিবার সূত্রে খবর, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরে বাবার মৃত্যুতে সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব এসে পড়ে বাপ্পাদিত্যর কাঁধে। ওই সময় পেট চালাতে রিকশা চালানোর পাশাপাশি দিনমজুরি-সহ বিভিন্ন কাজ করেছিন তিনি। তবে লেখাপড়া করার ইচ্ছেটা টাটকা ছিল মনে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পাঁচ বছর পরে তিনি ফের পড়াশোনা আরম্ভ করেন। ইতিহাস, এডুকেশন সাইকোলজি—এই তিন বিষয়ে স্নাতকোত্তর হওয়ার পর এমএড করেন। বর্তমানে সিকিম সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছেন বাপ্পাদিত্য। গত সাত বছর শিক্ষকতার পেশায় যুক্ত রয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই প্রায় ২০০ শিক্ষক তৈরি হয়ে গিয়েছে তাঁর হাত ধরে। অসম এবং বাংলার একাধিক কলেজে তিনি পড়িয়েছেন। ক্লাসে প্রতি নিয়ত ছাত্রদের তিনি বুঝিয়ে চলেছেন, শেষ থেকেও শুরু করা যায়। মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলই শেষ কথা নয়। পড়ুয়াদের উৎসাহ বাড়াতে তাঁর নিজের জীবন-কাহিনীই তুলে ধরছেন এই শিক্ষক।
বাপ্পাদিত্য অধিকারী বলেছেন, ‘‘মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল নম্বর না থাকলেও বড় জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব, এই বিষয়ে আমি প্রচার চালাব। আমি সবাইকে একটা কথাই বলতে চাই। যে কেউ, যে কাজেই যুক্ত থাকুক পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া যায়।’’ শিক্ষার ইতিহাস নিয়ে গবেষণামূলক কাজ করা বাপ্পাদিত্যের স্বপ্ন। তাঁর কথায়, ‘‘উত্তরবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করার ইচ্ছা রয়েছে আমার। শিক্ষার মাধ্যমেই সমাজের উন্নতি ঘটাতে হবে বলেই আমি মনে করি।’’ বাপ্পাদিত্যর শিক্ষক তথা চেপানী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত তালুকদার বলেন, ‘‘ জীবনের কঠিন সময় থেকে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয় তার প্রকৃত উদাহরণ বাপ্পাদিত্য অধিকারী। এক সময় ও আমাদের কাছ থেকে উপদেশ নিত। এখন আমাদের ওঁর কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ নিতে হয়। ওঁর মতো করে সবাই উঠে আসুক, এটাই চাইব। ওঁর এই কঠিন লড়াইকে কুর্নিশ জানাই।’’
আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, ‘‘মনের ইচ্ছে এবং জেদ থাকলে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় বাপ্পাদিত্য অধিকারী তারই প্রমাণ। রিক্সা চালানোর পাশাপাশি বিভিন্ন কঠিন পরিশ্রমের কাজ করেও জীবনের এই সাফল্য সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy