Advertisement
E-Paper

৩ হাজার দিয়েও ৩ বছরে মেলেনি ঘর

‘আধার কার্ডে বয়স ৬০ বছর পেরিয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত কর্মীরা বলছেন, বয়স নাকি ৪০’! —রেশমী কর্মকার, দক্ষিণ মৌজগাঁয়ের বাসিন্দাসামনের উঠোনে বসে হাপর টেনে আগুন জ্বালিয়ে লোহার বঁটি বানাচ্ছেন রেশমী কর্মকার। বয়স ষাট পেরিয়ে গিয়েছে।

কাজে: হাপর টানছেন ষাটোর্ধ্ব রেশমী। নিজস্ব চিত্র।

কাজে: হাপর টানছেন ষাটোর্ধ্ব রেশমী। নিজস্ব চিত্র।

গৌর আচার্য 

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:০০
Share
Save

রায়গঞ্জ থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে শিলিগুড়ির দিকে যাচ্ছেন। কিছু দূর যেতেই বারোদুয়ারি মোড়। সেখান থেকে রাজ্যসড়ক সড়ক ধরে চলে যান বিন্দোলের দিকে। রাস্তার দু’ধারে কোথাও সর্ষের জমি, আবার কোথাও ভুট্টা, ফুলকপি বা বাঁধাকপির চাষ হচ্ছে। দু’দিকের এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে এক সময় পৌঁছে যাবেন বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের মোহিনীগঞ্জের দক্ষিণ মৌজগাঁও গ্রামে। ওই গ্রামের কেউ চাষি, আবার কেউ দিনমজুরের কাজ করেন। অনেকের ছোটখাটো ব্যবসাও রয়েছে। গ্রামে ঢুকতেই রাস্তার ধারে ভাঙাচোরা একটি টিনের বাড়ি নজরে এল। সামনের উঠোনে বসে হাপর টেনে আগুন জ্বালিয়ে লোহার বঁটি বানাচ্ছেন রেশমী কর্মকার। বয়স ষাট পেরিয়ে গিয়েছে। এই বয়সেও আপনাকে কামারের কাজ করতে হচ্ছে?

রেশমী: কী বলব বাবা, পাঁচ বছর আগে স্বামী মারা গিয়েছে। ছেলে নেই। বাড়িতে এক মেয়ে ও নাতি। ওরা কাজ পায়নি। তাই এই বয়সে আমাকেই কাজ করে সংসার চালাতে হচ্ছে।

প্রশ্ন: বার্ধক্যভাতা পান না?

রেশমী: দু’মাস আগে পঞ্চায়েত কার্যালয়ে বার্ধক্যভাতার আবেদন করেছি। আধার কার্ড অনুযায়ী আমার ৬০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েতের কর্মীরা আমাকে বলেছেন, আমার নাকি ৪০ বছর বয়স। তাই বার্ধক্যভাতা হবে না। দুয়ারে সরকারে গিয়েও লাভ হয়নি।

প্রশ্ন: আর কোনও সরকারি সুযোগ সুবিধা পান?

রেশমী: লকডাউনের সময় পঞ্চায়েত কার্যালয়ে গিয়েও চাল ও আটার স্লিপ পাইনি।

প্রশ্ন: সরকারি শৌচাগার পেয়েছেন?

রেশমী: চার বছর আগে পঞ্চায়েতের তরফে শৌচাগার তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু তার মান খুব খারাপ। সেফটিক ট্যাঙ্ক ছোট। তাই কিছু দিন আগে তিন হাজার টাকা খরচ করে বড় ট্যাঙ্ক তৈরি করতে হয়েছে।

প্রশ্ন: সরকারি ঘর পেয়েছেন?

রেশমী: দু’বছর আগে পঞ্চায়েত কার্যালয়ে সরকারি ঘর চেয়ে আবেদন করেছি। অনেকে বলছেন, পঞ্চায়েতের সদস্য ও তৃণমূলের নেতাদের টাকা না দিলে নাকি ঘর মিলবে না।

প্রশ্ন: কামারের কাজ করে আপনার সংসার চলে?

রেশমী: কোনওরকমে চলে। মাঝেমধ্যেই একবেলা খেয়ে থাকি। লকডাউনের সময়ে নাতি পঞ্চায়েতে ১০০ দিনের কাজের জন্য আবেদন করেও কাজ পায়নি।

রেশমীর প্রতিবেশি সজন মাহাতো। বাড়ির অদূরে মোহিনীগঞ্জ এলাকায় বছর চল্লিশের সজনের সাইকেল মেরামতির দোকান রয়েছে।

প্রশ্ন: আপনি ঘর পেয়েছেন?

সজন: তিন বছর আগে পঞ্চায়েত কার্যালয়ে ঘরের আবেদন করেছি। পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য তখন লোক পাঠিয়ে ঘরের জন্য তিন হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ঘর পাইনি।

প্রশ্ন: শৌচাগার পেয়েছেন?

সজন: একবছর আগে শৌচাগারের জন্যেও আবেদন করেছি। তৃণমূলের লোকেরা টাকা চেয়েছিলেন। ঘরের অভিজ্ঞতার পরে আর টাকা দিইনি। তাই শৌচাগার পাইনি।

প্রশ্ন: লকডাউনের সময় আপনার সংসারের খরচ কীভাবে উঠেছে?

সজন: লকডাউনের জেরে দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ ছিল। রোজগার না থাকায় পরিবারের লোকেদের নিয়ে একবেলা খেয়ে কাটিয়েছি। সেইসময় পঞ্চায়েতের কাছে একাধিকবার ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ চেয়েও পাইনি।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার ১০ জনেরও বেশি বাসিন্দা এলাকার তৃণমূল নেতাদের টাকা দিয়েও এখনও ঘর পাননি। এলাকার বহু বাসিন্দা দীর্ঘদিন ধরে আবেদন করেও শৌচাগার পাচ্ছেন না। অনেকের দাবি, তাঁরা এলাকার তৃণমূল নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ঘর ও শৌচাগার পাচ্ছেন না।

South Moujgaon distress

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}