অপেক্ষা: দার্জিলিঙের ম্যাল আবার এমনই ভরে উঠবে বলে অপেক্ষায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা অপেক্ষায় বাজেটে ছাড়ের দিকে। ফাইল চিত্র
হাতে গোনা কয়েকটি কল-কারখানা রয়েছে উত্তরবঙ্গে। এখনও এই বিরাট এলাকার অর্থনীতি তাই চা, কৃষি ও পর্যটন নির্ভর। কিন্তু একাধিক বাণিজ্য সম্মেলন সত্ত্বেও তেমন বিনিয়োগের দেখা নেই। দরকার, পরিকাঠামোর উন্নয়ন থেকে শুরু করে যেখানে যেমন দরকার, তেমন শিল্পোদ্যোগ। সেই প্রত্যাশা কেন্দ্র ও রাজ্যের বাজেটে কতটা মেটে, তার দিকেই তাকিয়ে উত্তরের মানুষ।
শস্য সংরক্ষণের দাবি
কৃষি ভিত্তিক শিল্প স্থাপনের পরিকাঠামো উত্তরের বিভিন্ন জেলায় থাকলেও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায়, তা এখনও সম্ভব হয়নি। উত্তরবঙ্গের কৃষকদের দাবি, সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়তে রাজ্য সরকার উৎসাহমুলক নানা প্রকল্প ঘোষণা করুক। সম্প্রতি জাপানের একটি দল উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে কৃষি পণ্য উৎপাদনের পরিমাণ খতিয়ে দেখেন। তাঁরা ছোট হিমঘর তৈরিতে উৎসাহ দেখিয়েছেন। সংরক্ষণের ব্যবস্থা হলে মালদহে আমের মতো রেশমও কেন্দ্রিক শিল্পও গড়ে উঠতে পারে। তাই আমের মতো রেশম নিয়েও রাজ্য সরকারের দিকে চেয়ে রয়েছেন চাষিরা।
ফিরুন পর্যটকেরা
পুজোর ঠিক মুখে বন্ধ প্রত্যাহার করা হলেও পাহাড়ে পর্যটক ফেরেনি। সম্প্রতি জিটিএ দার্জিলিঙে পর্যটন মেলার আয়োজন করেছিল। পর্যটকের দেখা কিন্তু মেলেনি। মাথায় হাত হোটেল ব্যবসায়ী থেকে ফুটপাথের ব্যবসায়ীদের। রাজ্য বাজেটে দার্জিলিঙের জন্য নির্দিষ্ট করে ঘোষণা হবে এমন আশা রাখেন অনেকেই। আবার, দার্জিলিঙের প্রভাব পড়েছে ডুয়ার্সেও। পাহাড়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে ডুয়ার্স থেকেও মুখ ফিরিয়েছেন বহু। ট্যুর অপারেটরদের দাবি, পাহাড়ের পর্যটকদের বিশেষ কিছু সুবিধের কথা ঘোষণা করুক সরকার। হোটেল, রিসর্টগুলোর কর, বিদ্যুতে ছাড় দেওয়া যেতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তিতে ছাড় দাবি
তথ্য প্রযুক্তি বলতে শিলিগুড়ি শহরে কয়েকটি কল সেন্টার। আইটি পার্কের কাজ এখনও শেষ হয়নি। দার্জিলিং-কার্শিয়াং-কালিম্পঙে সফটওয়্যার পার্ক করার প্রস্তাবও রয়েছে রাজ্যের। সে জন্য দার্জিলিংকে বিশেষ কিছু ছাড় দিতে হবে। সিআইআই-এর উত্তরবঙ্গ শাখার চেয়ারম্যান রাজীব লোচন বলেন, ‘‘সবার আগে চাই উন্নত টেলি যোগাযোগ। এটি সরকারি নীতির প্রশ্ন।’’ অন্ধ্রপ্রদেশে তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলোকে জমির দাম থেকে বিদ্যুৎ সবেতেই ছাড় দেওয়া হয়। পণ্য বিপণনে মেলে বিক্রয় করে ছাড়। সে সবও এখানে দেওয়া হোক বলে দাবি। দার্জিলিংকে ঘিরে তথ্যপ্রযুক্তি সার্কিট তৈরি করতে হলে বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে আকর্ষণ করতে হবে বলে দাবি বণিকসভার। তার জন্য কর ছাড়ই বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
শিল্পের জন্য আদর্শ মালদহ
মালদহের আম রফতানির সুযোগ রয়েছে এ কোনও নতুন কথা নয়। প্রতি বছর গড়ে প্রায় তিন লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয় জেলায়। অথচ আজও জেলায় আম কেন্দ্রিক কোনও শিল্প গড়ে ওঠেনি। মালদহ ম্যাঙ্গো অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, “মালদহের আম থেকে বিভিন্ন রাজ্য আচার, জেলি, সরবত তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছে। এই জেলাতেই কেন সে সব হবে না, তার উত্তর নেই।” মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, “সড়ক থেকে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো মালদহে। জমিও রয়েছে। শিল্পের জন্য আদর্শ জেলা মালদহ। এখানে ভারী শিল্প গড়ে তোলার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।” মালদহের আশা এ বারের বাজেটে আম নিয়ে নিশ্চই সুখবর থাকবে।
নির্মাণ শিল্পে উৎসাহ চাই
নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের কয়েক লক্ষ শ্রমিক যুক্ত। শিলিগুড়ি শহর ও লাগোয়া এলাকায় আবাসন, বহুতলের চাহিদাও ক্রমশ বাড়ছে। তবে জিএসটির সুবাদে ফ্ল্যাট কেনাবেচায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। নির্মাণ শিল্পের জন্য কিছুটা ছাড়ের আশা করছেন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের সর্বভারতীয় একটি সংগঠন। বালি-পাথরের জোগান নিয়েও সমস্যা নেই। বেসরকারি কিছু নির্মাণ সংস্থার দাবি, জমি নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। সরকারের কাছে একটি ল্যান্ডব্যাঙ্ক গড়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। জমি কেনা এবং রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় ছাড় দিলে প্রথম সারির নির্মাণ সংস্থাগুলি উত্তরবঙ্গে আসবেই বলে আশা।
কোচবিহারের তামাক
অসমে নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পরে নাভিশ্বাস উঠেছিল কৃষক থেকে ব্যবসায়ী সকলের। সেই নিষেধাজ্ঞা উঠেছে। কিন্তু তার পরেও দাম না পাওয়ার আশঙ্কায় মাঝে মধ্যেই আতঙ্ক তৈরি হয় কৃষকদের মধ্যে। এই অবস্থায়, তামাকজাত শিল্পের দাবিতে সরব হয়েছে কোচবিহার। দাবি, জেলায় উৎপন্ন তামাক রং তৈরির কাজে লাগতে পারে। তা ছাড়া ওষুধ তৈরির কাজেও ব্যবহার হতে পারে এই তামাক। সেদিক থেকেই সরকার তেমন কোনও শিল্প জেলায় গড়ে তুললে গোটা জেলার অর্থনীতি পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। কোচবিহারের তামাক অসমের পাশাপাশি বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশায় যায়।
গেঁয়ো ধান ভিখ পায় না
কদর রয়েছে বিশ্ব জুড়ে। প্রবাসী বাঙালিদের কাছে এই চালের চাহিদাও প্রচুর। যদিও এই চালের বিপণন ব্যবস্থাই এখনও গড়ে ওঠেনি। প্রথমেই উন্নতমানের গুদামের প্রয়োজন। যেখানে মজুত করলেও চুলাইপাঞ্জির সুঘ্রাণ বজায় থাকবে। কিসান মাণ্ডিগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন না হলে বিপণনের ব্যবস্থাও সম্ভব নয়। কালো নুনিয়া, আতপ চাল উৎপাদনেও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি এগিয়ে। চাল প্রস্তুতকারী এবং বিপণনকারী সংস্থাগুলিকে উত্তরবঙ্গের মাটিতে না আনলে অর্থনীতির উন্নতি হওয়া সম্ভব নয়। উত্তরের ধান চাষিদের বিশেষ প্যাকেজ এবারের বাজেটে দেওয়া হতে পারে বলেও আশায় কৃষকেরা।
যোগাযোগে উন্নতির আর্জি
নেপাল, ভূটান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের এশিয়ান হাইওয়ে তৈরির কাজ চলছে উত্তরবঙ্গে। দেশের পূর্ব এবং পশ্চিম প্রান্ত যুক্ত করার ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের কাজও চলছে। তবে দুই কাজই ধীর গতিতে চলছে বলে অভিযোগ। দুই রাস্তা উত্তরবঙ্গের তিন জেলা কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিঙের যোগাযোগ ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে দিতে পারে। জোয়ার আসতে পারে অর্থনীতিতেও। পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়কের কাজ আটকে রয়েছে জমিজটে। রায়গঞ্জ থেকে বিহারের বারসই পর্যন্ত রাস্তা তৈরির জন্য রাস্তাটি তৈরির জন্য রাজ্য সরকারের বাজেটে টাকা বরাদ্দ করার দাবি তুলেছে রায়গঞ্জের ব্যবসায়ী সংগঠন। বেঙ্গল টু বেঙ্গল রোডের গুরুত্ব বাড়ছে। রাজ্য বাজেটে ওই রাস্তা সম্প্রসারণ এবং সংস্কারের প্রস্তাব থাকবে বলেও আশা। বাংলাদেশের সঙ্গে বহিবার্ণিজ্য চালু হিলি বাণিজ্য বন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র বাজেটে আর্থিক সংস্থানের দাবি উঠেছে। কোচবিহার, বালুরঘাট এবং মালদহ থেকে বিমান যোগাযোগের প্রস্তাব রয়েছে রাজ্যের। সেই খাতে ছাড়ের আশায় রয়েছে এজেন্সিগুলোও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy