বৃষ্টিই কপালে ভাঁজ ফেলছে শিল্পীদের। — নিজস্ব চিত্র
প্লাস্টিক মুড়িয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে দুর্গাকে। লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিকরাও ঢাকা পড়েছেন প্লাস্টিকে। তার মধ্যেই কোনওরকম ভাবে চলছে মাটি লেপে দেওয়ার কাজ।
এ তো গেল ঘরের বাইরের ছবি। ঘরের ভিতরেও অবস্থা ভাল নয়। রোদ না থাকায় প্রতিমা শুকনোর কাজ চলছে হিটার দিয়ে। দুদিনের টানা বৃষ্টিতে নাজেহাল কোচবিহার কুমোরটুলিতে। আকাশের সঙ্গে শিল্পীদেরও মুখ ভার। অনেকেই জানাচ্ছেন, ‘‘পুজোর আর দু’সপ্তাহও বাকি নেই। এখন এমন বৃষ্টি হলে কাজ শেষ করব কীভাবে?’’ কুমোরটুলির শিল্পী সুজিত পাল বলেন, “এমন সমস্যায় বহু বছর ধরে ভুগছি। পুজোর সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে ভগবানকে ডাকি আমরা। যাতে বৃষ্টি না হয়। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার।”
মৃৎশিল্পীদের অবশ্য অভিযোগ, এই সমস্যা কেবল এই বছরের নয়। ফি বছরই এমন সমস্যার পড়তে হয় তাঁদের। স্থায়ী কুমোরটুলি না থাকাতেই এমন সমস্যা। কোচবিহারের কুমোরটুলি পালপাড়া নামেই পরিচিত। ওই এলাকা এবং গুঞ্জবাড়ি এলাকা মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশ জন শিল্পী মূর্তি তৈরির কাজ করেন। অনেকে সেখানে সহযোগী হিসেবেও কাজ করেন। এ ছাড়াও শহর ও শহরতলি এলাকাতেও অনেকে প্রতিমা তৈরির কাজ করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রধান সমস্যা জায়গা। যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে পালপাড়ায়। ছোট্ট জায়গায় গাদাগাদি করে কাজ করতে হয়। রাস্তার উপরে বাধ্য হয়ে প্রতিমা রাখতে হয়। এই অবস্থার মধ্যেও কাজ করে যাওয়া শিল্পীদের সমস্যা আরও বাড়িয়েছে বৃষ্টি।
শিল্পীরা জানাচ্ছেন, আকাশের মুখ ভার দেখেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তাঁরা। তড়িঘড়ি করে প্লাস্টিক কিনে আনেন অনেকে। টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হতেই প্লাস্টিক মুড়িয়ে বেঁধে ফেলেন দুর্গা, কার্তিক, গণেশদের। রাতে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলে বারে বারে নজরদারি করতে হয়েছে। কাঁচা মাটি ধুয়ে গেলে অনেক বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে তাঁদের। শিল্পীরা জানান, আরও কয়েকদিন এমন চললে মাথায় হাত পড়ে যাবে। কয়েকজন বলেন, “স্থায়ী কুমোরটুলি থাকলে এমন সমস্যায় পড়তে হত না আমাদের।” ঘুঘুমারি এলাকার এক মৃৎশিল্পী নন্দ বর্মন জানান, রোদ না থাকায় প্রতিমা শুকোতে আগুনের তাপ দিতে হচ্ছে তাঁদের। তিনি বলেন, “মাটি শুকোতে হিটার ব্যবহার করতে হচ্ছে। তাতে আমাদের প্রতিমা তৈরির খরচও বেশি পড়ে যাচ্ছে।”
স্থানীয় কুমোরটুলি তৈরির ক্ষেত্রে জমিই সমস্যা বলে জানাচ্ছে পুরসভা। কোচবিহার পুরসভার চেয়ারপার্সন রেবা কুণ্ডু বলেন, “ওই বিষয়টি জানি। পুরসভার হাতে জমি নেই। জমির কোনও ব্যবস্থা করা যায় কি না তা নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।” কোচবিহার জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “এ নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই ভাবনাচিন্তা করছি। আশা করছি কোনও একটা সমাধান করা সম্ভব হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy