Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Ramkrishna mission

রামকৃষ্ণ মিশনে হামলার পর শিলিগুড়ির জমি সিল করল পুলিশ, তালার উপর ‘ডিকে’ লেখা নিয়ে রহস্য

শনিবার আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সন্ন্যাসীদের উপর হামলা চালায় এক দল দুষ্কৃতী। পাঁচ সন্ন্যাসীকে অপহরণ করে নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকার আলাদা আলাদা জায়গায় ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

Ramkrishna mission

মিশনে ঢোকার গেটে তালা পুলিশের। উপরে লেখা, ‘ডিকে’। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৪ ২০:০৫
Share: Save:

শিলিগুড়ির চার মাইলে রামকৃষ্ণ মিশনে দুষ্কৃতী হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে জটিলতা বাড়ছে। এ বার পুলিশের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলল শাসকদল। দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের সম্পাদক তথা আইনজীবী অত্রি শর্মা। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবের হুঁশিয়ারি, ‘‘যারা মাফিয়া, যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের কাউকে রেয়াত করা হবে না।’’

রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রমের মতো প্রতিষ্ঠানের সাধু-সন্তদের একাংশের ‘ভূমিকা’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শনিবারের মন্তব্যে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। তা নিয়ে বিতর্কের আবহে জলপাইগুড়ি রামকৃষ্ণ মিশনে হামলার ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে খবর, শিলিগুড়ির সেবক রোডের চার মাইলে প্রায় দুই একর জমি সহ-দ্বিতল বাড়িটি জলপাইগুড়ি রামকৃষ্ণ মিশনকে দান করেছিলেন সুনীলকুমার রায় নামক এক ব্যক্তি। পরবর্তীকালে ওই জমির মালিকানা নিয়ে জলপাইগুড়ি রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে একটি মামলা হয়। আদালতের রায়ে সম্পত্তি এখন মিশনের হাতেই রয়েছে। সেখানে স্কুল তৈরির পরিকল্পনা করছেন মিশন কর্তৃপক্ষ। ‘সেবক হাউস’ নামে বাড়িটিতে থাকতেন মিশনের কয়েক জন সন্ন্যাসী। অভিযোগ, শনিবার রাত প্রায় সাড়ে ৩টে নাগাদ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সন্ন্যাসীদের উপর হামলা চালায় এক দল দুষ্কৃতী। পাঁচ সন্ন্যাসী এবং দুই নিরাপত্তারক্ষীকে অপহরণ করে নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকার আলাদা আলাদা জায়গায় ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এর পর ওই দ্বিতল বাড়িটির দখল নেয় দুষ্কৃতীরা।

এ নিয়ে রামকৃষ্ণ মিশনের পক্ষ থেকে ভক্তিনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আবার ওই অভিযোগ দায়েরের প্রায় ঘণ্টা খানেক বাদে রামকৃষ্ণ মিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন পুরনিগমের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রদীপ রায়। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন রামকৃষ্ণ মিশনেরই কয়েক জন ‘সেবক হাউস’ নামক বাড়িটিতে হামলার অভিযোগ চালিয়েছেন। সূত্রের খবর, প্রদীপ রায়ের অভিযোগের পরেই পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের বার করে সেখানে তালা লাগিয়ে সিল করেছে। কিন্তু, জমির মালিকানা নিয়ে যেখানে মামলা চলছে, সেখানে পুলিশ কী ভাবে সেই তালা ঝুলিয়ে সিল করতে পারে, সেই প্রশ্নও উঠেছে। আবার পুলিশের ঝোলানো তালার উপর সিলমোহরে ইংরেজিতে ‘ডিকে’ লেখা নিয়েও কৌতূহল শুরু হয়েছে। শহরের সবচেয়ে বড় নির্মাণ সংস্থার নামে ওই সিলমোহর লাগানো হয়েছে বলে কারও কারও অভিযোগ। পুরো ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দার্জিলিং জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক। তিনি বলেন,‘‘চার মাইলে রামকৃষ্ণ মিশনের একটি কার্যালয় ছিল। সেখানে দুষ্কৃতী হামলা হয়েছে। সেখানকার কর্মীদের অন্যত্র নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। তদন্তের স্বার্থে হোক আর যে কারণেই হোক না কেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, পুলিশ গিয়ে গেটে তালা ঝুলিয়েছে। যার ফলে সেখানকার সন্ন্যাসীরা সেখানে ঢুকতে পারছেন না। কিন্তু কার নির্দেশে সেই তালা দেওয়া হল? সেখানে আদালতের কোনও নোটিস নেই। সিল থেকে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। তদন্তের স্বার্থে নাকি তালা দেওয়া হয়েছে! কিন্তু তদন্তের জন্য তো গেটে তালা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘তালা দেওয়ার ফলে দুষ্কৃতীরা যেটা চাইছিল, পুলিশের হাত দিয়ে সেই কাজটাই হল?’’

এই পুরো ঘটনা নিয়ে শিলিগুড়ির মেয়রের মন্তব্য, ‘‘এই ধরনের ঘটনা একেবারেই বরদাস্ত করা হবে না। গোটা বিষয়টি নিয়ে মিশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমি কথা বলব। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। মাফিয়া, গুন্ডা, সমাজবিরোধীদের রেয়াত করা হবে না। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যার যার সঙ্গে কথা বলার আমি বলছি।’’

ঘটনার প্রায় দু’দিন পর নড়েচড়ে বসেছে পুলিশও। মঙ্গলবার শিলিগুড়ির ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। ভূমি রাজস্ব দফতরেও পুলিশ খোঁজখবর শুরু করেছে বলে একটি সূত্রের খবর। তবে মূল তদন্ত থেকে বেরিয়ে জমির মালিকানা কেন খুঁজছে পুলিশ, তা নিয়ে অবশ্য তাদের তরফে সদুত্তর মেলেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Ramkrishna mission Siliguri police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy