Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Muslim

রিঙ্কির বিয়ে দিলেন আবদুল্লা, আলমগীররা

কালিয়াচক ৩ ব্লকের চরি অনন্তপুরে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম দৌলতটোলা। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা রচনার স্বামী সন্তোষ, ছোট মেয়ে রিঙ্কির জন্মের এক বছর পরই মারা যান।

ছাদনাতলায়: রিঙ্কি ও তাঁর মায়ের সঙ্গে আবদুল্লা, আলমগীর, হাবিব, ইলিয়াসরা। নিজস্ব চিত্র

ছাদনাতলায়: রিঙ্কি ও তাঁর মায়ের সঙ্গে আবদুল্লা, আলমগীর, হাবিব, ইলিয়াসরা। নিজস্ব চিত্র

জয়ন্ত সেন 
চরি অনন্তপুর শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:২৩
Share: Save:

বিড়ি বেঁধে মা-মেয়ের সংসার চলছিল। কিন্তু মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়েই বিপাকে পড়েছিলেন রচনা মণ্ডল। সাহায্যের জন্য বাড়ি-বাড়ি ঘুরছিলেন। অবশেষে, ছাদনাতলা থেকে অতিথি আপ্যায়ন, পুরো বিয়ের যাবতীয় খরচ জুগিয়ে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন আবদুল্লা, আলমগীর, হাবিব, ইলিয়াসের মতো যুবকেরা। বৃহস্পতিবার রাতে এমনই সম্প্রীতির ছবি দেখা গেল মালদহের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম চরি অনন্তপুরের দৌলতটোলায়। এ ভাবে পাশে দাঁড়িয়ে বিয়ে দেওয়ায় আপ্লুত রচনা, ওই এলাকার বাসিন্দারাও।

কালিয়াচক ৩ ব্লকের চরি অনন্তপুরে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম দৌলতটোলা। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা রচনার স্বামী সন্তোষ, ছোট মেয়ে রিঙ্কির জন্মের এক বছর পরই মারা যান। সেই থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে সংসারের দায়িত্ব সামলান রচনা। বিড়ি বেঁধে চলে সংসার। বাড়ি বলতে বাঁশের চাটাই ও টিনের চালের একটিমাত্র ঘর। পাশে ভাঙাচোরা একটি রান্নাঘর। এই পরিস্থিতিতেও সরকারি সাহায্য জোটেনি। কয়েক বছর আগে কোনও রকমে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন রচনা।

কিছু দিন আগে ছোট মেয়ে রিঙ্কির বিয়ে ঠিক হয়। পাত্র বৈষ্ণবনগরের চর সুজাপুরের চিরঞ্জিত মণ্ডল। কিন্তু বিয়ে দিতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েন রচনা। কারণ, কয়েকমাস আগে লকডাউনে বিড়ি বাধার কাজ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। রোজগারও ছিল না। আনলকপর্বে বিড়ি বাধার কাজ শুরু হলেও আগের মতো পরিস্থিতি না থাকায় কাজও কমে গিয়েছিল। তাই রিঙ্কির বিয়ে দেওয়া নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন মা।

শেষ পর্যন্ত, প্রতিবেশীদের কাছে হাত পাততে শুরু করেছিলেন রচনাদেবী। সে খবর পৌঁছয় কালিয়াচকের একদল যুবকের কানে। আবদুল্লা আলরাজি, আলমগীর খান, হাবিব মোস্তফা, মহম্মদ ইলিয়াস নামে ওই যুবকেরা তার পরেই যোগাযোগ করেন ওই পরিবারের সঙ্গে। বিয়ের খরচ যোগানোর জন্য সোশ্যাল মাধ্যমে সাহায্যের আর্জিও জানান। তাতে কিছু মানুষ সাড়াও দেন। সেই টাকা এবং নিজেদের টাকা মিলিয়ে তুলে দেন মায়ের হাতে।

বিয়ের দিন সকাল থেকে যাবতীয় কাজের তদারকি করেন তাঁরা। বাড়ির উঠোনে কলাগাছ দিয়ে ছাদনাতলা তৈরি করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়। বরযাত্রীদের বসার জায়গা ছিল বাড়ির পাশে ফাঁকা জায়গায়। শুধু তাই নয়, বিয়ের রাতে বরপক্ষ, আত্মীয়-স্বজন এবং কিছু প্রতিবেশিকেও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন ওই যুবকরা।

মেনু ছিল, ভাত, ডাল, স্যালাড, বেগুন ভাজা, ফুলকপির তরকারি, কাতলা মাছের কালিয়া, চাটনি এবং দই- মিষ্টি। জনা চল্লিশেক বরযাত্রীও এসেছিলেন। আলমগীর বলেন, ‘‘ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে একটি বোনের বিয়ে দিতে পেরে ভাল লাগছে। সামাজিক দূরত্ব রেখেই অনুষ্ঠান হয়েছে।’’ আর রিঙ্কি বলেন, ‘‘ওই দাদারা দেবদূতের মতো এসে বিয়ের ব্যবস্থা করবে ভাবতেই পারিনি। আমি ওদের কাছে কৃতজ্ঞ।’’ রচনা বলেন, ‘‘অভাবের সংসারে মেয়ের বিয়ে কিভাবে দেব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আবদুল্লা, হাবিবরা পাশে না দাঁড়ালে মেয়ের বিয়ে দিতেই পারতাম না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Muslim Hindu Marriage ceremony
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy