Advertisement
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Cooch Behar Accident

‘ওরা সবাই চলে গেল’, কান্না মায়ের

রবিবার রাতে পিসতুতো শ্যালিকার বিয়েতে সপরিবার গিয়েছিলেন কোচবিহারের বাণেশ্বরের কাউয়ার ডেরা গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জিৎ রায়।

শীত ও কুয়াশার রাতে বিয়ে বাড়ি থেকে ফেরার পথেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু

শীত ও কুয়াশার রাতে বিয়ে বাড়ি থেকে ফেরার পথেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু একই পরিবারের চার সদস্যের। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিবার। কোচবিহার। নিজস্ব চিত্র।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৫:৩৯
Share: Save:

গোটা গ্রাম ছেয়ে রয়েছে বিষণ্ণতায়। বাড়ির সামনে ভেঙে পড়েছে ভিড়। ঘন-ঘন কান্নার রোল উঠছে ভিতর থেকে। বৃদ্ধা মা হাহাকার করছেন ছেলে, বৌমা নাতি-নাতনিকে হারিয়ে। বলছেন, “আমায় রেখে তোরা কোথায় চলে গেলি? ফিরে আয় আমার কাছে।” সোমবার পড়ন্ত বিকেলে ওঁরা ফিরলেন অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে। একের পর এক নিথর দেহ নামিয়ে রাখা হল বাড়িতে। যে দৃশ্যের সামনে দাঁড়িয়ে কান্না চাপতে পারলেন না কোচবিহারের পুন্ডিবাড়ি থানার কাউয়ের ডেরা গ্রামের প্রতিবেশীরা। অসহায় কান্নায় ভেঙে পড়ে বৃদ্ধা মা সুনীতিবালা রায় বললেন, “দু’দিন আগেই ওই গাড়িতে করে আমাকে চিলাপাতার জঙ্গলে নিয়ে গিয়েছিল ও। এর মধ্যে আমাকে ছেড়ে আমার নাতি-নাতনি, ছেলে, ছেলের বৌমা সবাই চলে গেল। এখন কী করব আমি?”

রবিবার রাতে পিসতুতো শ্যালিকার বিয়েতে সপরিবার গিয়েছিলেন কোচবিহারের বাণেশ্বরের কাউয়ার ডেরা গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জিৎ রায়। সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা নাগাদ দু’ বছরের ছেলে ইভান, ৫ বছরের মেয়ে ইশাশ্রী এবং স্ত্রী বিপাশাকে নিয়ে নিজেই গাড়ি চালিয়ে পৌঁছন তুফানগঞ্জে। রাস্তায় নাটাবাড়ি থেকে গাড়িতে তুলে নেন শাশুড়ি প্রণতি সরকারকেও। রাতে ফেরার পথে শাশুড়িকে বাড়িতে নামিয়ে কালজানির কুয়ারপাড় পৌঁছন তাঁরা। সেখানেই একটি কালভার্টের উপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি পাশের পুকুরে পড়ে যায়। জলে ডুবে মৃত্যু হয় চার জনের। ওই ঘটনা জানাজানি হতেই গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। সোমবার সকাল থেকেই সঞ্জিতদের বাড়ির সামনে ভিড় জমান গ্রামের বাসিন্দারা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই ময়না-তদন্তেরপরে চার জনের দেহ নিয়ে গ্রামে পৌঁছয় অ্যাম্বুল্যান্স।

সঞ্জিৎ ও বিপাশা দু’জনেই স্কুল শিক্ষক। সঞ্জিৎ উচ্চ প্রাথমিকে চাকরি করতেন এবং বিপাশা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। খবর পেয়ে তাঁদের সহকর্মীরাও পৌঁছে যান বাড়িতে। সঞ্জিতরা দুই ভাই ও এক বোন। খবর পাওয়ার পর থেকেই পাগলের মতো ছটফট করছেন ছোট ভাই রঞ্জিৎ। ছোট বোন দীপিকাকেও সামলানো যাচ্ছে না। বলছেন, “আমার দাদা কোথায় চলে গেল? আমার ভাইয়ের ছেলে-মেয়েরা কোথায় গেল? আমাকে পিসি বলে এখন কে ডাকবে?” কান্নায় ভেঙে পড়েছন বিপাশার মা প্রণতি সরকারও।

ছোটবেলার বন্ধু পিন্টু সরকার জানান, মাস তিনেক আগেই গাড়ি কিনেছিলেন সঞ্জিৎ। তাঁর বাবা নীলমণি রায় কিডনির রোগে ভুগছিলেন। বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেই গাড়ি কেনেন সঞ্জিৎ। অল্প সময়ে তিনি গাড়ি চালানোও শিখে নেন। পিন্টু বলেন, “খুব ভাল ছেলে ছিল সঞ্জিৎ। গ্রামের প্রত্যেকটি মানুষের বিপদে ও পাশে থাকতো। এত সুন্দর একটি পরিবার এ ভাবে শেষ হয়ে যাবে, ভাবতে পারছি না।”

সঞ্জিতের সহকর্মী সঞ্জয় অধিকারী বলেন, “রাত বারোটা নাগাদ আমি অনেক বার ফোন করেছি ওকে। আমিও একটি অনুষ্ঠানে ছিলাম। সঞ্জিৎ বিয়ে বাড়ি গিয়েছে তাও জানতাম। ফোন না ধরাতে ভেবেছিলামকোনও বিপদ হয়েছে। কিন্তু এত বড় বিপদ ভাবিনি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Cooch Behar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

সরাসরি দেখুন বছরের বেস্ট সন্ধ্যা

বছরের বেস্ট ২০২৪

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy