ফাইল চিত্র
ডিসেম্বর মাসের দশ দিন কেটে গিয়েছে। দিনের বেলা তাপমাত্রা ২৩-২৬ ডিগ্রি। রাতেও পারদ ভালই নামছে। অন্য বছর শীত পড়তে শুরু করলেই সাধারণত ডেঙ্গি প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর এখনও ডেঙ্গি সংক্রমণ কমার বিশেষ লক্ষণ নেই। প্রশ্ন উঠেছে, কেন? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, চরিত্র বদলাচ্ছে ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই। সেটাই এখন বড় উদ্বেগের কারণ। শিলিগুড়ি মেয়র অশোক ভট্টাচার্য জানান, রোগের গতিপ্রকৃতি খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সমীক্ষা করানো দরকার। এ কথা জানিয়ে পুর এবং নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিবকে তিনি চিঠিও দিয়েছেন।
কী ধরনের চরিত্র বদলাচ্ছে এডিস মশা? উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অরুণাভ সরকার জানান, আগে এডিস মশা পরিষ্কার জলে ডিম পাড়ত। বিশেষ করে বাড়ির আনাচে কানাচে, পরিত্যক্ত পাত্রে জমে থাকা জলে এ ধরনের মশার জন্ম হত। এখন নোংরা জলেও জন্মাচ্ছে এডিস মশা। তাই নিকাশিতে জমে থাকা জলও এডিসের বংশবিস্তারের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত দিন জানা ছিল, এই মশা দিনের বেলায় কামড়ায়। এখন দেখা যাচ্ছে, রাতে আলোর মধ্যেও এডিস অনেকটা সময় সক্রিয় থাকে। ডেঙ্গিকে আগে শহরের রোগ বলেই মনে করা হত। এখন গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এডিসের দুটি প্রজাতি, ‘ইজিপ্টাই’ এবং ‘এলবোপিক্টাস’। দু’টি মশাই এখন ডেঙ্গির জীবাণু বহন করে। আগে এডিস এলবোপিক্টাস গ্রামাঞ্চলে দেখা যেত। এখন শহরেও দেখা যাচ্ছে। পতঙ্গবিদেরা জানান, ডিম, লার্ভা এবং পূর্ণাঙ্গ মশা— এই জীবনচক্র সম্পন্ন করতে কিছুটা গরম আবহাওয়া দরকার। অথচ দেখা গিয়েছে এডিস এলবোপিক্টাস মশার জীবনচক্র ঠান্ডার মধ্যেও সক্রিয় থাকে। ডিসেম্বরেও সংক্রমণ যে কমছে না, এই মশা তার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, ডেঙ্গির সংক্রমণ এখনও চলতে থাকার পিছনে শহরের নর্দমা ঠিক মতো সাফাই না-হওয়া, বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাব, রোগ প্রতিরোধে সময় মতো ব্যবস্থা নিতে না পারার মতো কারণও রয়েছে। ফুলেশ্বরী এবং জোড়াপানি নদী মজে নদীখাতে জল জমে থাকছে। তা মশার আঁতুড়ঘর বলে বাসিন্দাদের পাল্টা অভিযোগ। চিকিৎসকদের একাংশ মনে করেন, রোগ সংক্রমণ রুখতে নিকাশি নালা সাফাই জরুরি। চিকিৎসক শঙ্খ সেন জানান, এ বছর রোগের প্রকোপও একটু দেরিতে শুরু হয়েছে (অগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে)। সে জন্য প্রকোপ কমতে সময় লাগতে পারে। পুরসভা এবং জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, তারা প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নিয়েছেন।
পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ৪০ জন। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে অবশ্য আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪০ জনের মতো। এ বছর সরকারি হিসেবে শিলিগুড়ি শহরে রেকর্ড সংখ্যক ১৮০০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। শিলিগুড়ি মহকুমার গ্রামাঞ্চলে তিনশোর কাছাকাছি। গত বছর নভেম্বরে ডেঙ্গির প্রকোপ কমে যেত। এ বছর অক্টোবর, নভেম্বরেই রেকর্ড সংখ্যক রোগী আক্রান্ত হয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy