খাদ্য সুরক্ষা আইন চালুর কর্মযজ্ঞ শুরু হতে না হতেই ‘স্বচ্ছ ভারত নির্মাণ’-এর মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণ শুরু হতে চলল দক্ষিণ দিনাজপুর। শনিবার বালুরঘাটে প্রশাসনিক ভবনের সভাগৃহে আয়োজিত সভায় জেলাশাসক তাপস চৌধুরী গ্রামাঞ্চলে প্রকল্পটি রূপায়ণের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যে প্রকল্পটির নাম দিয়েছেন ‘মিশন নির্মল বাংলা।’ গোটা রাজ্যের সঙ্গে দক্ষিণ দিনাজপুরেও ১০০ শতাংশ বাসিন্দাকে ওই ‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করে সমস্ত বাড়িতে শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য, মাঠেঘাটে মলমুত্র ত্যাগের অভ্যাস বন্ধ করা।
আগামী ৩০ এপ্রিল নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে মুখ্যমন্ত্রী ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পটির শুভ সূচনা করবেন। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের প্রতি জেলায় প্রকল্পটি রূপায়ণের কাজ শুরু হবে। মূলত গ্রামাঞ্চলের বড় অংশের মানুষ এখনও খোলা আকাশের নীচে শৌচকর্ম করেন। এর ফলে ডায়েরিয়ার মতো পেটের রোগ থেকে নানা ধরণের অসুখে বাসিন্দারা আক্রান্ত হন। মাঠঘাটের কুঅভ্যাসে গ্রাম্য সমাজ ক্রমশ দূষিত হয়ে পড়ছে বলে এদিনের সভায় উপস্হিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধি থেকে আইসিডিএস এবং জনশিক্ষা দফতরের প্রতিনিধিদের জেলাশাসক তাপসবাবু সচেতনতার প্রচারে জোর দিতে বলেন।
এ রাজ্যে পাইলট প্রকল্প হিসাবে দক্ষিণ দিনাজপুরে কেন্দ্রের খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রকল্প চালু করতে উপভোক্তাদের মধ্যে ডিজিটাল রেশন কার্ড বিলি শুরু হয়েছে। খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রকল্পটি গত ১ এপ্রিল থেকে চালুর কথা রাজ্য সরকার ঘোষণা করলেও বাস্তবে তা হয়নি বলে অভিযোগ। এই প্রকল্পের অন্তর্গত দক্ষিণ দিনাজপুরের ১০ লক্ষ ৬৪ হাজার উপভোক্তার মধ্যে ডিজিটাল কার্ড বিলির পর খাদ্য সুরক্ষায় রেশন দোকান থেকে চাল গম বিলির সিদ্ধান্ত নিয়ে গত পয়লা বৈশাখ অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল থেকে পুরো কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নিয়েছিল জেলা প্রশাসন। জেলার ৮টি ব্লকে সমস্ত উপভোক্তার মধ্যে এখনও ডিজিটাল কার্ড বিলির কাজ সম্পূর্ণ করে ওঠা যায়নি বল অভিযোগ। ফলে সাধারণ রেশন কার্ডে পুরনো পদ্ধতিতে চালু গণবন্টন ব্যবস্হাও জেলায় ব্যাহত হয়ে পড়েছে।
গত দুসপ্তাহ থেকে গ্রাহকেরা রেশন দোকান থেকে চাল ও গমের সরবরাহ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। জেলা খাদ্য নিয়ামক অমরেন্দ্র রায় অবশ্য জানিয়েছেন, সামনের সপ্তাহ থেকে গ্রাহকেরা আগের মতোই রেশন থেকে চাল-গম পাবেন। ডিজিটাল কার্ড বিলিও চালু থাকবে। অর্থাৎ যারা ডিজিটাল কার্ড পেয়েছেন, তারা খাদ্য সুরক্ষা আইন মোতাবেক নির্ধারিত চাল গমের সরবরাহ পাবেন। এখনও যাদের হাতে ওই কার্ড পৌঁছয়নি, তারা পুরনো নিয়মে খাদ্যশস্য পাবেন।
রাজ্যের মধ্যে মাত্র ৮টি ব্লক নিয়ে গঠিত ছোট জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরে খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রকল্প রুপায়ণ করতে গিয়ে প্রশাসন থেকে পুর ও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ যে ঝঞ্ঝাটের মুখে পড়েছেন। তা না মিটতেই ফের নির্মল বাংলা গড়তে স্বাস্থ্য বিধানের মতো পৃথক ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব এসে পড়ায় সভার পরে অনেক পঞ্চায়েত সভাপতির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ পরিবারের মধ্যে এখনও ১ লক্ষ ৩৮ হাজার পরিবার আজও খোলা আকাশের নীচে শৌচকর্ম সারেন। কারও বাড়িতেই শৌচাগার নেই। জেলাশাসক বলেন, ‘‘ওই ১ লক্ষ ৩৮ হাজার পরিবারে আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে পাকা শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে মিশন নির্মল বাংলায়। প্রতি শৌচগার তৈরির জন্য সরকার দেবে ১০,০০০ টাকা। উপভোক্তাকে দিতে হবে ৯০০ টাকা।’’
রাজ্যে বিগত ৩৪ বছরের বাম সরকারের আমলে কেন্দ্রে ইউপিএ, তার পর এনডিএ, ফের ইউপিএ-টু আমলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আর্থিক সহায়তায় সুলভ শৌচাগার তৈরি প্রকল্পের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ফি বছর এ রাজ্যের জেলা পরিষদগুলিকে কোটি কোটি টাকা কেন্দ্র দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো যায়নি বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy